মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন

নাম

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন

জন্ম

নভেম্বর ০১, ১৯৯৬, ফেনী, চট্টগ্রাম

ধরন

অলরাউন্ডার

অভিষেক

বনাম শ্রীলঙ্কা, মার্চ ২৫, ২০১৭

একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব ছিল বরাবরই। কখনো খালেদ মাহমুদ, কখনো মুশফিক বাবু, আবার কখনো ফরহাদ রেজা, জিয়াউর রহমান, মুক্তার আলী, এমনকি সৌম্য সরকারকে দিয়েও চলেছে সে শূন্যতা পূরণের চেষ্টা। শেষমেশ বাংলাদেশ থিতু হয়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনে, খুঁজে পেয়েছে একজন প্রতিশ্রুতিশীল বিশ্বমানের অলরাউন্ডারকে। মাশরাফি বিন মুর্তজা তো তাঁকে নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। সাইফকে বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছে স্ট্রাইক বোলার!

মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন এমন একজন খেলোয়াড়; পারফরম্যান্স, শরীরীভাষা থেকে শুরু করে মানসিক শক্তি সবই ইতিবাচক। ফেনীতে জন্মগ্রহণ করা এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ২০১৩ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান। সাইফউদ্দিনের অনূর্ধ্ব-১৯ ক্যারিয়ারটা দারুণ, একটি ফাইফারসহ ২১.৭৫ গড়ে তাঁর সংগ্রহ ৪৫ উইকেট।

সাইফের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ২০১৬ বিশ্বকাপে। মাত্র ছয় ম্যাচেই ১৩টি উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক ছিলেন সাইফ। দারুণ সব ইয়র্কার দেওয়ার সামর্থ্য, হিট দ্য ডেক ঘরানার বোলিং, সঙ্গে আগ্রাসী মানসিকতা সব মিলিয়ে সাইফউদ্দিনকে করে তুলেছে অনন্য এক প্যাকেজ।

তবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের পরই হুমকির মুখে পড়ে তাঁর ক্যারিয়ার, প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাঁর বোলিং অ্যাকশন। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এত বড় ধাক্কা সামলে উঠতে খুব একটা সময় অবশ্য নেননি সাইফ, খুব দ্রুতই অ্যাকশন শুধরে এসিসি কর্তৃক আয়োজিত ইমার্জিং টিমস কাপে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে দারুণ পারফর্ম করে প্রথমবারের মতো ডাক পান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি দলে।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সেই অভিষেক সিরিজের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষিক্ত হন ওয়ানডে দলেও। তবে ডেভিড মিলারের বিধ্বংসী হয়ে ওঠা এক দিনে সাইফকে এক ওভারে পরপর পাঁচ বলে পাঁচ ছক্কা হজম করতে হয়। আরেকবার ধাক্কা লাগে তাঁর মনস্তত্ত্বে, দলের বাইরে চলে যান অভিষেকের কিছুদিনের মধ্যেই।

কিন্তু সাইফউদ্দিন যে হারতে শেখেননি! আবারও শুরু করলেন কঠোর পরিশ্রম। নিজের সামর্থ্যের সবটুকু ব্যবহার করতে শিখলেন, দারুণ হিট দ্য ডেক বোলিং শিখলেন, সিম বোলিং শিখলেন, লাইন লেংথের গ্যাঁড়াকলে ফাঁসিয়ে ব্যাটসম্যানকে হাঁসফাঁস করাতে শিখলেন। ফলাফলও পেলেন হাতেনাতে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে গত বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠিত সিরিজে আবারও ডাক পেলেন। এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করেননি, দারুণ অলরাউন্ড নৈপুণ্যে নজর কেড়ে নিয়েছেন অনায়াসেই।

চাপের মুখে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ১২৭ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি গড়েছেন, পরের ম্যাচেই ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে সংগ্রহ করেছেন তিন উইকেট। হয়েছেন ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। এরপর আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে রুবেল হোসেনের অনুপস্থিতিতে নতুন বল হাতে নিয়েছেন নিয়মিতই, নিয়ন্ত্রিত কৃপণ বোলিংয়ে প্রতিদানও দিয়েছেন দারুণভাবে।

ব্যাটে-বলে দারুণ চৌকস এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার ব্যাট হাতে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে খেলতে সক্ষম, চাপের মুখে দাঁড়িয়ে যেতে সিদ্ধহস্ত, এবং বল হাতেও দারুণ ধারাবাহিক। যদি উন্নতির এই ধারা বজায় থাকে ভবিষ্যতেও, বাংলাদেশের পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে হাহাকারটা আগামী ১০ বছরের জন্য যে করতে হচ্ছে না, সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না।

এবারই নিজের প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন সাইফউদ্দিন। ইংল্যান্ডের মাটিতে পেসারদের অনুকূল পরিবেশে হয়তো একাদশেও থাকবেন নিয়মিতই। আর সুযোগ পেলে যে তিনি নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিতে প্রস্তুত, সেটা তাঁর পারফরম্যান্সে ইতিমধ্যেই প্রতীয়মান।

[সব পরিসংখ্যান ও তথ্য-উপাত্ত বিশ্বকাপ শুরুর আগপর্যন্ত]