ওই ম্যাচটা বদলে দিয়েছে দুই দলকে

সংবাদ সম্মেলনে মরগান। ছবি: এএফপি
সংবাদ সম্মেলনে মরগান। ছবি: এএফপি

একটি ম্যাচ কীভাবে বদলে দিতে পারে দুটি দলকে, সবচেয়ে ভালো উদাহরণ হতে পারে অ্যাডিলেডে ২০১৫ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচ। বাংলাদেশ দলে বদল এসেছে ম্যাচ জিতে। আর ইংল্যান্ডের পরিবর্তন হয়েছে ম্যাচটা হেরে! বাংলাদেশ দলের কোচ থাকার সময় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাই অনেকবারই বলেছেন কথাটা, ‘২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠাটা ছিল আমাদের বড় টার্নিং পয়েন্ট।’

২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে লেখা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের অমর এক কাব্য, খুলে গিয়েছিল স্বপ্নের দরজা। ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়ে মাশরাফিরা নিশ্চিত করেছিলেন কোয়ার্টার ফাইনাল। এই সাফল্য বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে গেছে আরেক উচ্চতায়। অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারানোর পর বাংলাদেশ দলে যে বিশ্বাসটা ভীষণ পোক্ত হয়েছে—‘হারাতে পারি যেকোনো দলকেই’। সেটিরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ওই বছর দেশের মাঠে যে কটি ওয়ানডে সিরিজ খেলেছেন মাশরাফিরা, প্রতিটি জিতেছেন। সাফল্যধারা অব্যাহত থেকেছে পরেও। ইংল্যান্ডেই হওয়া ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল খেলা, কদিন আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতে ফাইনাল না জেতার দুঃখ ঘোচানো—সবই ২০১৫ বিশ্বকাপজাত আত্মবিশ্বাস থেকে। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের শুরুটাও হয়েছে দুর্দান্ত। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত লড়াই—এই বাংলাদেশকে নিয়ে এখন আকাশসম স্বপ্ন।

২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডের ম্যাচটি যদি বাংলাদেশের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকে, ইংল্যান্ডের কাছেও সেটি কি বড় শিক্ষা নয়? ওই ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার পর ইংলিশ ক্রিকেটারদের ভাবনায় যে এসেছে অনেক বদল, অস্বীকার করা যাবে? ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে গত চার বছরে তারা নিজেদের পরিণত করেছে দুর্দান্ত এক দলে। এ সময়ে নবজাগরণই যেন হয়েছে ইংল্যান্ড ক্রিকেটে। গত বিশ্বকাপ থেকে এই ক্রিকেট বিশ্বকাপ, ৯০ ম্যাচে ৫৯ জয় নিয়ে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডই সবচেয়ে সফল দল। ইংলিশরা ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অনায়াসে ৩০০-এর ওপরে স্কোর তাড়া করে, আগে ব্যাটিং করলে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে রানের বন্যা বইয়ে দিতে পারে। জো রুট, এউইন মরগান, জেসন রয়, বেন স্টোকস, জনি বেয়ারস্টো, জস বাটলার, আদিল রশিদ, মঈন আলীদের মতো অসাধারণ সব ক্রিকেটার নিয়ে গড়া দলটি গত চার বছরে এতটাই ধারাবাহিক—ইংল্যান্ডের খেলা মানেই এখন অন্য রকম রোমাঞ্চের নিশ্চয়তা। নিজেদের ঘরের মাঠে আয়োজিত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে সবচেয়ে ফেবারিট মানা হচ্ছে তো এ কারণেই।

বাংলাদেশের কাছে হারের পর ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বিদায়, অতঃপর নিজেদের বদলে ফেলা—কাল এউইন মরগান অবশ্য পুরোপুরি একমত হতে পারলেন না। ইংলিশ অধিনায়ক বরং মনে করেন, অ্যাডিলেডের আগে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১০ উইকেট হারের বড় মূল্য দিতে হয়েছে তাঁদের, ‘ওই ম্যাচ ঠিক নয় (বাংলাদেশের বিপক্ষে)। হ্যাঁ, ওই ম্যাচ হেরে আমাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, যেটিতে আমি খেলেছি। শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচ বলেই নয়, ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারটাও পরে আমাদের আরও সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।’

যে ম্যাচে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়েছে, সেটি মরগান এড়িয়ে যেতে চাইলেও মাশরাফি বিন মুর্তজার কাছে অবশ্যই তা ভীষণ স্মরণীয়। সাড়ে চার বছর আগে অ্যাডিলেডের ওই ম্যাচটা কতটা বদলে দিয়েছে দলকে—বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য বিস্তারিত নয়, কাল সংবাদ সম্মেলনে সারমর্মটুকুই শুধু বললেন, ‘যে দলের বিপক্ষে খেলি, জিতব—২০১৫ বিশ্বকাপের (ইংল্যান্ড ম্যাচ) পর আমরা প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নেমেছি এ ভাবনায়। খেলোয়াড়দের আলোচনা বা মিটিংয়ে এ আলোচনা বা পরিকল্পনা কখনো করিনি যে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারব না।’
আজ কার্ডিফেও বাংলাদেশ নিশ্চয়ই একই ভাবনায় নামছে!