সাকিবকে নিয়ে কখনো উপসংহারে আসা যায় না

আউট হয়ে ফিরছেন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সাকিব। দর্শকদের অভিবাদনের জবাবে উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট। ছবি: এএফপি
আউট হয়ে ফিরছেন সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া সাকিব। দর্শকদের অভিবাদনের জবাবে উঁচিয়ে ধরলেন ব্যাট। ছবি: এএফপি

খালেদ মাহমুদের কথাটা মনে পড়ছে। দলের ম্যানেজার হয়ে ইংল্যান্ডে আসা সাবেক অধিনায়ক সেদিন বলছিলেন, ‘আমার মনে হয় সাকিব ম্যান অব দা টুর্নামেন্ট হতে চায় ২০১৯ বিশ্বকাপে। আমিও সেটা বিশ্বাস করি। গত ছয় মাস ধরে নিজেকে সে সেভাবেই প্রস্তুত করেছে, ফিটনেসের দিক থেকে, দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে, সবকিছু মিলিয়ে। আগে হয়তো অনুশীলনে একদিন ব্যাটিং করল, আরেকদিন বোলিং...এখন সে অনেক বেশি সিরিয়াস।’

সাকিবের কতটা সিরিয়াস বোঝাতে একটা ঘটনাও বললেন মাহমুদ, ‘একটা ঘটনা বলি। সাকিব বসে ছিল, কয়েকজন (জুনিয়র ক্রিকেটার) অনুশীলন করছিল। পানি লাগবে, সাকিব দৌড়ে পানি নিয়ে এল। এটাই বোঝাতে চাচ্ছি যে, দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটার যখন এতটাই নিবেদিত থাকে, সেটি সবার জন্য ভালো।’ দেশ থেকে রওনা দেওয়ার আগে বিশ্বকাপের অফিশিয়াল ফটোসেশনে যোগ না দিয়ে কম বিতর্ক হয়নি সাকিবের। প্রশ্ন উঠেছিল দলের প্রতি তাঁর আত্মনিবেদন নিয়ে। সেই সাকিবই এ বিশ্বকাপে অন্যরকম! মাঠে-মাঠের বাইরে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ যেন বলছে, ‘আমার সম্পর্কে কখনো উপসংহারে আসা যাবে না!’

সাকিব যে বড় লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন এই বিশ্বকাপে, সেটি তাঁর ব্যাটিং বলে দিচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৫, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৪ আর আজ কার্ডিফে অনবদ্য ১২১—এই সাকিবের চোখে অনেক বড় স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন পূরণে তিনি এগোচ্ছেন দুর্দান্ত গতিতে। ২৬০ রান করে টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের দৌড়ে আপাতত আছেন সবার ওপরে।

আজ ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩৮৭ রানের লক্ষ্যে ভড়কে না গিয়ে শুরু থেকেই ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে এগিয়েছেন। আগের দুই ম্যাচে ফিফটিকে রূপ দিতে পারেননি সেঞ্চুরিতে। তিন অঙ্কের জন্য যে তীব্র তৃষ্ণা, সেটি মিটিয়েছেন আজ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। কী মিল, ওয়ানডেতে সাকিব সবশেষ সেঞ্চুরিটা পেয়েছিলেন কার্ডিফেই—২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির যে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে উঠেছিল সেমিফাইনালে। এই মাঠে সাকিব একমাত্র ব্যাটসম্যান, যিনি পেয়েছেন একাধিক সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে এই মাঠে মোট সেঞ্চুরি এসেছে ১০টি, চারটিই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। সোফিয়া গার্ডেনসে সেঞ্চুরিশূন্য থাকেনি বাংলাদেশের কোনো ইনিংস।

ইংল্যান্ডের রানপাহাড়ের জবাবে সাকিবের বীরত্ব মুগ্ধ চোখে দেখেছে সোফিয়া গার্ডেনসের পূর্ণ গ্যালারি। তাঁর প্রিয় ‘স্কয়ার কাট’ তো ছিলই। সবচেয়ে দেখার মতো ছিল ইংলিশ বোলারদের শর্ট বলগুলো শৌর্যেভরা পুলে বাউন্ডারি ছাড়া করা। ক্রিস ওকসকে এক ওভারে মারলেন তিনটি বাউন্ডারি। ৯৫ বলে সেঞ্চুরি করা সাকিব এগোচ্ছিলেন আরও সামনে। শর্ট কিংবা লেংথ বলে সাকিবকে আটকানো যাবে না বুঝতে পেরে বেন স্টোকস তাই পা লক্ষ্য করে মারলেন ইয়র্কার। ‘ফ্লিক’ করতে গিয়ে ব্যাট আটকে গেল আঙুলে। সাকিবের ইনিংসটা থামল ১২১ রানে (১১৯ বলে)।

ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় পুরো সোফিয়া গার্ডেনস উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে সাকিবকে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার চারদিকে ব্যাট ঘুরিয়ে জবাব দিয়েছেন দর্শকদের অভিনন্দনের। কার্ডিফের এই ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি এটাই।