বিশ্বকাপ এলে কী হয় তামিমের?

বিশ্বকাপে কখনোই নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তামিম। ছবি: এএফপি
বিশ্বকাপে কখনোই নিজের সেরাটা দিতে পারেননি তামিম। ছবি: এএফপি
>

বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে বড় ভরসার নাম তামিম ইকবাল। ওয়ানডে ক্রিকেটে দারুণ সব ইনিংসও খেলেছেন ক্যারিয়ারজুড়ে। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেন সব সংস্করণে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের মালিক

বাংলাদেশের ক্রিকেটে তামিম ইকবালের অবদান নিয়ে প্রশ্ন নেই কারও। তামিমকে দেশের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান বলেও মেনে নিয়েছেন অনেকে। কিন্তু বিশ্বকাপ এলেই যেন কী হয় তাঁর। না হলে বিশ্বকাপে খেলতে এলে তাঁর ব্যাট এমন চুপসে যায় কেন?

২০০৭ বিশ্বকাপে তাক লাগিয়ে শুরু। ১৮ বছর বয়সী তামিম উদ্ধত সব শটে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেছিলেন একের পর এক বল। এরপর আরও তিনটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছেন তামিম। কিন্তু প্রথম ম্যাচের সেই ঝলক কেন যেন আর দেখা যায়নি তামিমের ব্যাটে।

বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে ছিলেন তামিম। ওয়ানডেতে দলের মূল রান ভরসা। ২০১৭ সাল থেকে বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ৬০.৬৪ গড়ে ১৫১৬ রান তাঁর। ৪টি সেঞ্চুরির সঙ্গে ১২টি পঞ্চাশ। ৩০ ইনিংসের ১৬টিতেই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস যিনি খেলেছেন বিশ্বকাপে তো তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। কিন্তু বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে হয়েছে উল্টো। তিন ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪ রান করেছেন। ৫৯ রান করেছেন ৬১ স্ট্রাইকরেটে। দলকে ভালো শুরু এনে দেওয়ার দায়িত্বে থাকা তামিম তিন ইনিংসে মেরেছেন ৬টি চার। হতাশ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

চিন্তার ব্যাপার হলো, এটা নতুন কিছু নয়। চার বিশ্বকাপ মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৪ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমেছেন তামিম। এই ২৪ ইনিংসে তামিমের ব্যাট থেকে আসেনি কোনো সেঞ্চুরি, পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংসই এসেছে মাত্র ৩টি। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে তারুণ্যের জয়গান গাওয়া সেই ৫১ রানের ইনিংসের পর ফিফটি করেছেন মাত্র দুটি। ২০১১ বিশ্বকাপে এই ভারতের বিপক্ষেই মিরপুরে করেছিলেন ৭০, আর গত বিশ্বকাপে নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ড রান তাড়া করে জেতা ম্যাচে ৯৫।

বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স আর সামগ্রিক ওয়ানডের পারফরম্যান্সেও কী অদ্ভুত বৈসাদৃশ্য! একদিনের ক্রিকেটে যাঁর ব্যাটিং গড় ৩৬.০৮, বিশ্বকাপে সেটি কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২২.৫৮। স্ট্রাইক রেটের অবস্থাও ভালো নয়। ক্যারিয়ার স্ট্রাইক রেট যেখানে ৭৭.৯৭, বিশ্বকাপে সেটি আরও কমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭২.২৬ এ। প্রায় সময়ই অতি সাবধানী ব্যাটিং করতে গিয়ে ধরা দিচ্ছেন প্রতিপক্ষ অধিনায়কের পাতা ফাঁদে। গতকালের ম্যাচেই যেমন ৩৮৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা করলেন খুব ধীরে। শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো উইকেট ছেড়ে তেড়ে আসতে গিয়েই আউট হলেন।

বিশ্বকাপে এটি যেন তামিমের সামগ্রিক পারফরম্যান্সেরই প্রতীকী চিত্র। শুরু করেছেন অনেকবার, কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ থেকে ৪০ রানের মধ্যে আউট হয়েছেন ১০ বার। ১০ পেরোনোর আগেও আউট হয়েছেন ১০ বার। এর মধ্যে ৩ বার ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন রানের খাতা না খুলেই।

এবারের ২০১৯ বিশ্বকাপে তামিম এসেছেন সবচেয়ে পরিণত অবস্থায়। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন দলের অন্যতম নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান হিসেবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গত চার বছরে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু বিশ্বকাপে এসেই যেন পাল্টে গেছে সবকিছু। রান পাচ্ছেন না, তার চেয়েও বড় কথা, উইকেটে থেকে দলকে ভরসাও দিতে পারছেন না। এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলতে হলে বাকি ম্যাচগুলোতে তামিমের এই বিবর্ণ বিশ্বকাপ রেকর্ড পাল্টানোটা জরুরি। পারবেন তামিম?