নতুন করে শুরু হোক সবকিছু

সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে
সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে
>

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর বিশ্বকাপের বাকি ছয় ম্যাচের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হবে বাংলাদেশকে। সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলামের মতে, এ মুহূর্তে কৌশলে পরিবর্তন আনাটা খুব জরুরি। তিনি চান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পরের ম্যাচেই দলের পরিকল্পনায় পুনর্বিন্যাস আসুক

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি ‘সবচেয়ে কঠিন’ হবে, এটা কালই বলেছি। কিন্তু এ ম্যাচে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স যে এমন হবে, সেটা ভাবিনি। প্রথম বল থেকে শেষ বল পর্যন্ত একটাবারও মনে হয়নি বাংলাদেশ লড়াই করছে। একটাবারও ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বিচলিত মনে হয়নি। মনে হয়নি মরগানরা এমন একটা দলের বিপক্ষে খেলছে, যারা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছে, দ্বিতীয় ম্যাচেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রায় জিতেই যাচ্ছিল!

সাকিব আল হাসান যে আমাদের দলে অনেকের চেয়ে আলাদা, সেটি সে কাল আবার দেখিয়ে দিয়েছে। গোটা ম্যাচে সাকিবের সেঞ্চুরিটিই বলার মতো কিছু। ইংল্যান্ডের ৩৮৬ রানের জবাবে বাংলাদেশ ২৮০ রান করেছে। সাকিবের ১২১ রানের ইনিংসটির সঙ্গে যদি আর দুজন ব্যাটসম্যানের বড় স্কোর থাকত, তাহলে একটা লড়াই হতে পারত। মুশফিক ভালো করছিল, কিন্তু সে আবারও অসময়ের উইকেট দিয়ে এল। মুশফিকের ৪৪ রানের ইনিংসটি যদি কমপক্ষে ৮৪ হতো, মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেকের ইনিংস দুটি যদি ফিফটি প্লাস হতো, তাহলে খেলাটা অন্যরকম হতে পারত। আক্ষেপ হয়, বাংলাদেশ নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানোর রোগটা সারাতে পারছে না। আমি জানি না এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকে তামিমের কী হয়েছে। ওকে একেবারেই তার মধ্যে দেখছি না।

আমার সবচেয়ে অবাক লেগেছে কাল টস জেতার পর ব্যাটিং না নেওয়ার সিদ্ধান্তটা। কার্ডিফে আগের দিন বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে উইকেটের নিচে ভেজা থাকে। সে ক্ষেত্রে বোলাররা বাড়তি সুবিধা পায়—সাধারণ জ্ঞানে এমনটা মাথায় আসা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের দলে সে সুবিধা নেওয়ার বোলার কোথায়? কাল কি তেমন বোলিং কোনো পেসার করেছেন? বাংলাদেশ দলের সঙ্গে তো একটা থিংক ট্যাংক আছে। সেখানে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা একা নন। আছেন ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ, কোচ স্টিভ রোডস। নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশারও আছেন সেখানে। এঁরা সবাই মিলেই পরিকল্পনা করেন। আমার কাছে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ দলের থিংক ট্যাংক উইকেট কিংবা কন্ডিশনটা ঠিকভাবে পড়তে পারেনি। কাল আমরা টসে জিতে ব্যাটিং করে যদি ২৭০-২৮০ করতে পারতাম, তাহলে ইংল্যান্ড চাপে থাকত। টসে জিতে ইংল্যান্ডের মতো দলকে ব্যাটিংয়ে পাঠানো ছিল রীতিমতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যে দলটা সাম্প্রতিক কালে প্রতি দশ ম্যাচের সাতটিতেই সাড়ে তিন শ করে রান তুলেছে, তাদের হাতে আমরা কীভাবে অস্ত্র তুলে দিই!

কালকের ম্যাচে আরও একটা জিনিস আমাকে হতাশ করেছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজমেন্ট গতানুগতিক ধারায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে। তারা নির্দিষ্ট কিছুর বাইরে চিন্তা করতে পারছে না। একেক প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা একেক রকম। সে হিসাবে প্রতিটি দলের বিপক্ষে কৌশল হওয়া উচিত আলাদা আলাদা। যে কৌশলে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছি, সে কৌশল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কাজে না-ও আসতে পারে। মাঝেমধ্যে পরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করতে হয়। সেটা আমরা দেখছি না। পরিকল্পনার মধ্যেও দুরকম ব্যাপার দেখছি। কাল ‘উইকেটের সুবিধা আদায়’ করার লক্ষ্যে টসে জিতে আমরা বোলিং নিলাম, অথচ রুবেল হোসেনকে দলে নিলাম না। আক্রমণ শুরু করলাম স্পিন দিয়ে।

রানিং বিটুইন দ্য উইকেট আর ফিল্ডিংয়ে চরম দুর্বলতা দেখছি। বোলিংটাকে দেখাচ্ছে নখদন্তহীন। সামনের ম্যাচগুলোর আগে এই জায়গাগুলোতে নতুন করে ভাবতে হবে। স্কিল ওয়াইজ আমরা অবশ্যই ভালো দল। কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বোলিং-ফিল্ডিং আমাদের ডুবিয়ে দিচ্ছে। এসব নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। শরীরী ভাষাটা কাল আমার কাছে একদম ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে দলটা খুব ক্লান্ত। ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে এখনো ৬ ম্যাচ বাকি। এমন হবে কেন?

যা–ই হোক, যা হওয়ার হয়েছে। আমাদের সামনের দিকে তাকাতে হবে। ১১ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা। এই ম্যাচে সবকিছু বাংলাদেশ নতুন করে শুরু করুক। ম্যাচটা জিতুক। একটা ম্যাচ জিতলে আবার সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।