আমিরের জাদুতে পাকিস্তানের নাগালেই অস্ট্রেলিয়া

পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর ডেভিড ওয়ার্নার। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর ডেভিড ওয়ার্নার। ছবি: এএফপি
>বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানকে ৩০৮ রানের লক্ষ্য দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ওয়ার্নার করেছেন সেঞ্চুরি, ৫ উইকেট নিয়েছেন আমির

ফিল্ডিংয়ে প্রশ্নের জন্ম দেওয়া পাকিস্তানের জন্য নতুন কিছু না। আজ যেমন আসিফ আলীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সন্তান হারিয়ে এ ক্রিকেটারের মনটা এমনিতেই ক্রিকেটে থাকার কথা না। না হয় মানা গেল, পারফরম্যান্সের জন্যই তাঁকে খেলাচ্ছে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু এ অবস্থায় মাঠের খেলায় কি পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়া সম্ভব? সবাই তো আর শচীন টেন্ডুলকার না যে বাবাকে হারিয়ে পরের ম্যাচেই সেঞ্চুরি মারবেন! আসিফ আলী অন্তত আজ মনোযোগ রাখতে পারেননি। ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চের দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন। আর অস্ট্রেলিয়াও তার সদ্ব্যবহার করে তুলেছে ৩০৭ রান।

২২তম ওভার পর্যন্ত ওভারপ্রতি গড়ে সাড়ে ছয়ের ওপরে রান তুলেছেন দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার। এর মধ্যে ফিঞ্চ ব্যক্তিগত ৩০ রানে ‘জীবন’ পেয়েছেন আসিফ আলীর হাতে। পরে ইনিংসটা ৮২ রান পর্যন্ত টেনেছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। ব্যক্তিগত ৪৪ রানেও দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদের হাতে। তাঁকে আগেই আউট করতে পারলে অস্ট্রেলিয়া অন্তত দুর্দান্ত শুরুটা পেত না। ২৩তম ওভারের প্রথম বলে মোহাম্মদ আমির ফিঞ্চকে তুলে নিলে দলীয় ১৪৬ রানে জুটি ভাঙে দুই ওপেনারের।

ওয়ার্নার অন্য প্রান্তে প্রায়শ্চিত্ত করেছেন আগের ইনিংসের। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে মন্থর ফিফটির জন্য কিছুটা সমালোচিত হয়েছিলেন। আজ ৫১ বলে ফিফটির পর ১০২ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর ওয়ানডেতে এটা তাঁর প্রথম সেঞ্চুরি। ওয়ার্নারের সেঞ্চুরির জন্য অবশ্য আসিফ আলীর দোষ নেই। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ১০৪ রানে থাকতে থার্ডম্যানে অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় তাঁর ক্যাচটি ছাড়েন আসিফ। এই তিন ক্যাচ মিস করা ছাড়াও গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে মোটেও ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। ১ রানকে ২ রান বানাতে অস্ট্রেলিয়ানদের কোনো সমস্যাই হয়নি।

ফিঞ্চ-ওয়ার্নার উইকেটে থাকতে ৪০০-র স্বপ্নও দেখেছে অস্ট্রেলিয়া। এরপর অবশ্য রানের গতি কমেছে ধীরে ধীরে। ৩০তম ওভার পর্যন্তও গড়ে সাড়ে ছয়ের কাছাকাছি রান ছিল অস্ট্রেলিয়ার। এর মধ্যে মোহাম্মদ হাফিজকে উইকেট দেন স্টিভ স্মিথ (১০)। ৩৪তম ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (১০ বলে ২০) দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন শাহিন আফ্রিদি। এরপরই কমে আসে রানের গতি। পরের ছয় ওভারে গড়ে সাড়ে ছয়ের নিচে নেমে এসেছে রান রেট। চার ওভার পর ওয়ার্নারকেও তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার আশা জাগিয়ে তোলেন আফ্রিদি। ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১১১ বলে ১০৭ রান করেন ওয়ার্নার।

শন মার্শ ও উসমান খাজা উইকেটে থাকতে ৪০তম ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ২৫৬। চার শ না হোক অন্তত সাড়ে তিন শ তুললেও বেশ শক্ত ভিত। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে মনের মতো ‘ফিনিশিং’ দিতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার মিডলঅর্ডার থেকে শেষের ব্যাটসম্যানরা। উল্টো পাকিস্তানের পেসাররা শেষ ১০ ওভারে ৬ উইকেট নিয়ে ভালোই ঘুরে দাঁড়ান। খাজা, মার্শ মিচেল স্টার্ক ও অ্যালেক্স ক্যারিকে তুলে নেন আমির। শেষ ১০ ওভারে ৬ উইকেট হারানোর বিনিময়ে মাত্র ৫১ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া।

টন্টনের পেসবান্ধব উইকেটে আজ লেগ স্পিনার শাদাব খানকে বসিয়ে চার পেসার খেলিয়েছে পাকিস্তান। এর মধ্যে আমির ও আফ্রিদি—দুই বাঁ হাতি পেসারকে দিয়ে ইনিংস শুরু করিয়ে দীর্ঘ ৩২ বছর আগে স্মৃতি ফিরিয়ে আনে পাকিস্তান। ক্রিকেট বিশ্বকাপে এর আগে সবশেষ ১৯৮৭ টুর্নামেন্টে দুই বাঁ হাতি পেসারকে দিয়ে বোলিং শুরু করিয়েছিল পাকিস্তান। আজ পাকিস্তানের চার নিয়মিত বোলারের মধ্যে দুর্দান্ত করেছেন আমির। তাঁর শুরুটাই ছিল দুর্দান্ত—৭ ওভারে দিয়েছিলেন ২১ রান। শেষ পর্যন্ত ১০ ওভারে মাত্র ৩০ রান খরচায় পেয়েছেন ৫ উইকেট। এর মধ্যে ৪৯তম ওভারেই পেয়েছেন ২ উইকেট।

অস্ট্রেলিয়া মূলত ৩০০ পার করেছে দুই ওপেনারের পারফরম্যান্সে। এ দুজন ছাড়া তাদের হয়ে ন্যূনতম ৩০ রানও কেউ করতে পারেননি। অর্থাৎ দুই ওপেনারের ক্যাচ না ছাড়লে অস্ট্রেলিয়াকে তিন শ-র এপাশেই বেঁধে রাখতে পারত পাকিস্তান। আর অস্ট্রেলিয়ার হতাশা হলো দুই ওপেনার দুর্দান্ত শুরু করে ৪০০ তোলার স্বপ্ন দেখালেও মিডলঅর্ডারের ব্যর্থতায় রানটা পাকিস্তানের আওতার মধ্যে থেকে গেছে।