জন্মভূমির বিপক্ষে হাতে তুলে নিয়েছেন ব্যাট-বল

রাম-রাবণের যুদ্ধে নিজ দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন বিভীষণ। লঙ্কা অধিপতি রাবণের ছেলে মেঘনাদ চাচা বিভীষণকে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে/কে তুমি? জনম তব কোন্ মহাকুলে?’ গেইলরা-হোল্ডাররাও আগামী পরশু কি জফরা আর্চারকে একই কথা বলবেন? সাউদাম্পটনে ওই দিন বারবাডোজে জন্ম নেওয়া আর্চার ইংল্যান্ডের হয়ে খেলতে নামবেন তাঁর স্বদেশের বিপক্ষে। ৩ জুলাই আবার বেন স্টোকসও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাই করবেন। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়, স্মৃতির অতলে ডুব দিয়ে রায়েদ ইবনে আহসান খুঁজে বের করেছেন আগের ঘটনাগুলো

অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার
নব্বইয়ের দশকের শেষ ভাগে জিম্বাবুয়েকে সমীহ জাগানো দল বানাতে বিরাট অবদান ছিল ফ্লাওয়ার ভাইদের বড়জনের। বিশ্বকাপে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছেন দুবার।’ ৯২ বিশ্বকাপে ৭ উইকেটে হেরেছেন। ফ্লাওয়ার করেছিলেন ৪৪ বলে ১৯ রান।’ ৯৯-এ নিল জনসনের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ৪৮ রানের জয় পায় জিম্বাবুয়ে। সেই ম্যাচে ফ্লাওয়ারের অবদান ২৯ রান আর ক্যালিসের ক্যাচ।

কেভিন পিটারসেন
দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম। ক্রিকেট খেলার শুরুও সেখানেই। তবে বিশ্বকাপ খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। দুটি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয়েছিলেন জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার। ভালো করতে পারেননি একবারও। ২০০৭ বিশ্বকাপে করেছেন ৩ রান। ইংল্যান্ডও হেরে যায় ৯ উইকেটে। ২০১১ বিশ্বকাপে ওপেন করতে নেমে ফেরেন ২ রান করে। লো স্কোরিং সেই ম্যাচটি স্টুয়ার্ট ব্রডের নৈপুণ্যে ৬ রানে জিতেছিল ইংল্যান্ড।

অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস
অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের জন্মও দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু খেলেছেন ইংল্যান্ডের হয়ে। পিটারসেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে দুটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, স্ট্রাউস তাঁর সতীর্থই ছিলেন। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের নেতৃত্ব দিয়েছেন স্ট্রাউসই। জন্মভূমির বিপক্ষে ভালো করতে পারেননি তিনিও। ২০০৭ বিশ্বকাপে ৪৬ রান করলেও পরের বিশ্বকাপে কোনো রান না করেই আউট হয়ে যান ইংল্যান্ডের সাবেক ওপেনার।

জোনাথন ট্রট
২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড দল যেন ছিল মিনি এক ‘দক্ষিণ আফ্রিকা’! পিটারসেন-স্ট্রাউসের সঙ্গে সেই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া আরেক ব্যাটসম্যান ট্রট। কেপটাউনের ছেলে ট্রট ইংল্যান্ডের পক্ষে ৬৮টি ওয়ানডে খেলেছেন। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর ৫২ রানের ইনিংসের কল্যাণেই ম্যাচটি জিতেছিল ইংল্যান্ড।

অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস
জন্ম তাঁর ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। বাবা-মা ইংলিশ নন। তবে তাঁকে যাঁরা পোষ্য নিয়েছিলেন তাঁরা ইংল্যান্ডের। সাইমন্ডসকে পোষ্যপুত্র করার কিছুদিন পরই পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। ২০০৩ ও ২০০৭ বিশ্বকাপে সাইমন্ডস জন্মভূমি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলেছেন। প্রথম ম্যাচে ব্যাটে-বলে তেমন কিছু করতে পারেননি। ২০০৭ বিশ্বকাপে দলের ৭ উইকেটের জয়ে অবদান রেখেছেন অপরাজিত ২৮ রান করে।

সিকান্দার রাজা
পাকিস্তানের শিয়ালকোটে জন্ম। পরিবারের সঙ্গে ২০০১ সালে চলে আসেন জিম্বাবুয়েতে। ২০১৫ বিশ্বকাপে দলের অন্যতম সদস্য হয়েই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে যান। ব্রিসবেনে জন্মভূমি পাকিস্তানের বিপক্ষে অবশ্য ব্যাটে-বলে জ্বলে উঠতে পারেননি। বল হাতে ৩৪ রানে ১ উইকেট নিলেও ব্যাট হাতে ওপেন করতে নেমে ৮ রানেই আউট। জিম্বাবুয়েও ম্যাচটি হারে ২০ রানে।

ইমরান তাহির
৪০ বছর বয়সী লেগ স্পিনার পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ ও পাকিস্তান ‘এ’ দলে খেলেছেন। পরে ইংলিশ কাউন্টিতে খেলে পাড়ি জমান দক্ষিণ আফ্রিকায়। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন পর্যন্ত ১০২টি ওয়ানডে খেলা তাহির এই বিশ্বকাপেও দলের অন্যতম ভরসার নাম। জন্মভূমির বিপক্ষে খেলেছেন গত বিশ্বকাপেই। ৯ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। প্রোটিয়ারা ম্যাচটি হারে ২০ রানে।

গ্র্যান্ট এলিয়ট
বিশ্বকাপ একটাই খেলেছেন নিউজিল্যান্ডের সাবেক ব্যাটিং অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারের সেরা ম্যাচটি খেলেছেন জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। সেই ম্যাচে এলিয়টের ৭৩ বলে ৮৪ রানের ইনিংসের কল্যাণে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলে কিউইরা। ম্যাচসেরা হয়েছিলেন এলিয়ট।

শাইমান আনোয়ার
গত বিশ্বকাপে সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে ব্যাট হাতে চমকে দিয়েছিলেন। ৬ ইনিংসে দুটি ফিফটি ও একটি সেঞ্চুরিতে করেছিলেন ৩১১ রান, গড় ৫১.৮৩। শাইমানের জন্ম পাকিস্তানের শিয়ালকোটে। পাকাপাকিভাবে আমিরাতে পাড়ি জমান ২০০৭ সালে। ২০১৫ বিশ্বকাপে জন্মভূমি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন। তাঁর দল ম্যাচটি হারে ১২৯ রানে।

তাঁরা একটু আলাদা
এড জয়েসের গল্পটা মজার। ২০০৭ বিশ্বকাপটা তিনি খেলেছেন ইংল্যান্ডের জার্সিতে। সেবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটি ম্যাচও খেলেন। চার বছর পর খেলেছেন জন্মভূমি আয়ারল্যান্ডের হয়ে। সেবার আবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ খেলেছেন জয়েস। বিশ্বকাপে এমন ঘটনা আর নেই! তবে দুটি দেশের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা খেলোয়াড় আছেন আরও তিনজন। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপলার ওয়েসেলস যেমন ৮৩ বিশ্বকাপ খেলেছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে, ’ ৯২ বিশ্বকাপে ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে। মিডিয়াম ফাস্ট বোলার অ্যান্ডারসন কামিন্স ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে। ১৫ বছর পর আরেকটি ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেন কামিন্স, ২০০৭ সালের সেই বিশ্বকাপটি কানাডার হয়ে। ইংল্যান্ডের অধিনায়ক এউইন মরগান ২০০৭ সালে তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের জার্সিতে।