হুইলচেয়ার থেকে গতির ঝড় তুলে রিয়াল মাদ্রিদে!

ফারল্যান্ড মেন্ডি। তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: টুইটার
ফারল্যান্ড মেন্ডি। তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ছবি: টুইটার
লিঁও থেকে ফারল্যান্ড মেন্ডিকে দলে ভিড়িয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। গতিময় এ লেফটব্যাকের ওপর বেশ আগেই চোখ রেখেছিলেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। ১৪ বছর বয়সে কোমরে ভয়ংকর চোট পাওয়ায় ছয় মাস হুইল চেয়ারে জীবন কেটেছে মেন্ডির। মনেপ্রাণে ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন বলেই সেখান থেকে আজ তিনি রিয়ালের মতো দলে

বেশ আগে থেকেই ফারল্যান্ড মেন্ডির পেছনে লেগে ছিলেন জিনেদিন জিদান। শেষ পর্যন্ত সফল হলেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ। মেন্ডিকে ফ্রান্স থেকে উড়িয়ে এনে দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় আরেকটি পালক সংযোজন করলেন জিদান।

রিয়ালের লেফটব্যাক পজিশনে মার্সেলো বহুদিনের বিশ্বস্ত সেনানী। কিন্তু বয়সের জন্য গত দু-এক মৌসুম ধরেই ব্রাজিলিয়ানের খেলায় আগের ধার আর নেই। গতিও বেশ কমেছে। লেফটব্যাক পজিশনে মার্সেলোর কাছ থেকে সেরাটা আদায় করতে তার একজন প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা বলা যায় একজন বিকল্প হিসেবে মেন্ডিকে দলে ভিড়িয়েছেন জিদান। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা জানিয়েছে, ৪৮ মিলিয়ন ইউরোয় লিঁও থেকে মেন্ডিকে সই করিয়েছে রিয়াল। সঙ্গে ‘অ্যাড অনস’ হিসেবে থাকছে সম্ভাব্য আরও ৫ মিলিয়ন ইউরো। ২৪ বছর বয়সী এ লেফটব্যাকের সঙ্গে ছয় বছরের চুক্তি করেছে স্প্যানিশ ক্লাবটি।

স্পেন থেকে এক চিকিৎসক ফ্রান্সে গিয়ে মেন্ডির শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কা। রিয়ালের লেফটব্যাক পজিশনে মার্সেলো এক সময় যে গতি আর আক্রমণের ধার এনে দিতেন তা ফিরিয়ে আনতেই মেন্ডিকে দলে টেনেছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটি। লিঁওতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৪ ম্যাচ খেলা মেন্ডি গতি আর দক্ষতার ঝলকে নজর কেড়েছিলেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদেরও। আক্রমণ যেমন করতে জানেন তেমনি রক্ষণ সামলানোর মুনশিয়ানা রয়েছে মেন্ডির। লিগ ওয়ানে গত দুই মৌসুমের সেরা দলেও পেয়েছেন জায়গা। মেন্ডি আসায় রিয়ালের লেফটব্যাক পজিশনে এখন মার্সেলোর দুই বিকল্প সার্জিও রেগুলিয়ন ও থিও হার্নান্দেজের ঠিকানা পাল্টানোর সম্ভাবনাই বেশি।

ফ্রান্সের ছোট্ট শহর ইকুয়াভিলে জন্মানো মেন্ডি শুরুতে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্ট্রাইকার হিসেবে। ফুটবলের প্রতি মেন্ডির ভালোবাসা ব্যাখ্যা করেছেন তাঁর কাজিন মার্ক গোমিজ, ‘ফুটবল সব সময়ই ওর ভেতরে ছিল। ছোট থাকতে ওর চেয়ে বয়সে বড় ফুটবলাররা পাত্তা পেত না।’ মেন্ডির শৈশবের বন্ধু মানজানে ইয়া জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই মাঠে গতির ঝড় তোলার প্রতি আলাদা একটা টান আছে মেন্ডির। মাঠে সব সময় ‘স্পিড’ ‘স্পিড’ বলে চিৎকার করতেন।

মনেপ্রাণে ফুটবলার হতে চাইলেও পথটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। ১৪ বছর বয়সে পিএসজির যু্ব দলে থাকতে কোমরে ভয়ানক চোট পেয়েছিলেন। আরেকটু হলে ফুটবল ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে যেত। ছয় মাস থাকতে হয় হুইলচেয়ারে। তার চার বছর আগে বাবাকে হারান মেন্ডি। বন্ধুর এ পথ পারি দিয়েই পিএসজির যুব দলে দুই পায়ে খেলার দক্ষতাটুকু শিখে নেন তিনি। পিএসজি থেকে মান্তোইস ও লা হার্ভের যুব দল ও সিনিয়র দলে খেলার পর দুই বছর আগে লিঁওতে যোগ দেন মেন্ডি। জিদান তখন থেকে চোখ রেখেছেন দুর্দান্ত এ লেফটব্যাকের ওপর। শুধু অ্যাটলেটিকো নয় বার্সেলোনাও এক সময় আগ্রহ দেখিয়েছে মেন্ডিকে নিয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুটি দলই হেরেছে জিদানের সংকল্প আর তাঁর প্রতি রিয়ালের আস্থার কাছে।

মেন্ডিকে সই করানোর মধ্য দিয়ে আরেকটি জায়গায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করল রিয়াল। ইতিহাসের সবচেয়ে দামি পাঁচ লেফটব্যাকের মধ্যে তিনজনই রিয়ালের। শীর্ষে রয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটি মেন্ডি—বেনজামিন মেন্ডি (৫৮ মিলিয়ন ইউরো)। এরপরই রিয়ালের মেন্ডি। ৩৮ মিলিয়ন ইউরোর লুক শ-কে নিয়ে তিনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। পরের দুটি খেলোয়াড়ই রিয়ালের—ফাবিও কোয়েন্ত্রাও (৩০ মিলিয়ন ইউরো) ও থিও হার্নান্দেজ (২৬ মিলিয়ন ইউরো)।