'সাফল্য' শেষ করে দিয়েছে কেনিয়ার ক্রিকেটকে!

২০০৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল কেনিয়া। ফাইল ছবি
২০০৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছিল কেনিয়া। ফাইল ছবি
২০০৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিল কেনিয়া। এক সময় ক্রিকেটের উদীয়মান শক্তি কেনিয়া এখন হারিয়েই গেছে ক্রিকেট মানচিত্র থেকে। দেশটির সাবেক তারকা স্টিভ টিকোলো মনে করেন, সাফল্যই কাল হয়েছিল কেনিয়ান ক্রিকেটের জন্য।

ক্রিকেট থেকে হারিয়েই গেল কেনিয়া! যে দেশটি বাংলাদেশেরও আগে ক্রিকেট বিশ্বকাপ খেলেছিল, যে দেশটি প্রথম আবির্ভাবেই ব্রায়ান লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল, আইসিসির সহযোগী সদস্য দেশ হিসেবে যারা প্রথম বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছিল, তাদেরই এখন খুঁজে পাওয়া যায় না ক্রিকেট দুনিয়ায়! যে দেশটি এক সময় টেস্ট খেলার স্বপ্ন দেখত, তারাই এখন ওয়ানডে স্ট্যাটাস হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বের তলানিতে। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, কেন এমন হলো, কেনিয়ার ক্রিকেট কেন আজ নিঃস্ব, রিক্ত।

প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছেন কেনিয়ান ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা তারকা স্টিভ টিকোলো। এক সময় টেস্ট দুনিয়ার বাইরে সেরা ব্যাটসম্যান মনে করা হতো তাঁকে। তিনি সেটি ছিলেনও। তাঁর ব্যাটিং শৈলী অনেক ক্রিকেট-পণ্ডিতকে বলতে বাধ্য করেছে, টিকোলোর দুর্ভাগ্য, তিনি টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশে জন্মাননি। কেনিয়ান ক্রিকেটের এই তারকার দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে সেই প্রশংসাগুলো। সেই টিকোলো মনে করেন কেনিয়ান ক্রিকেটের সেরা সাফল্যই দেশটির ক্রিকেটে কাল হয়ে এসেছিল।

২০০৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলাই কেনিয়ার ক্রিকেটের সেরা সাফল্য, নিঃসন্দেহে। আইসিসির সহযোগী সদস্যদেশ হিসেবে প্রথম ও এখনো পর্যন্ত শেষবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা দেশটির ক্রিকেটকে নিয়ে গিয়েছিল অন্য উচ্চতায়। দেশটির সরকার থেকে শুরু করে করপোরেট হাউসগুলোর মনোযোগের কেন্দ্রে চলে এসেছিল ক্রিকেট। অর্থের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। টিকোলোর মতে, কেনিয়ার ক্রিকেটকে শেষ করে দিয়েছে সেসবই, ‘২০০৩ বিশ্বকাপের সাফল্যের পর স্রোতের মতো টাকা আসতে থাকে কেনিয়ান ক্রিকেটে। সবাই ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা দিতে চাচ্ছিল। এই সময় অর্থের লোভে বাজে ধরনের কিছু লোকজন কেনিয়ান ক্রিকেটে ঢুকে পড়ে। এই লোভী লোকগুলোই কেনিয়ার ক্রিকেটকে শেষ করে দিয়েছে।’

যে দেশটি টেস্ট মর্যাদা চাচ্ছিল, তারাই কীভাবে খেলাটাই খেলতে ভুলে গেল, এর উত্তর নাইরোবির নেশন পত্রিকার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন টিকোলো। কেনিয়ান ক্রিকেট প্রশাসকেরা গোটা নব্বইয়ের দশক জাতীয় ক্রিকেট দলকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকদের অর্থ, আইসিসি থেকে পাওয়া অর্থ যে তৃণমূলের ক্রিকেট উন্নয়নে, ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নয়নে ব্যয় করতে হয়, সেই ব্যাপারটিই ভুলে গিয়েছিলেন তারা। সে কারণেই নতুন প্রতিভা তৈরি হয়নি দেশটিতে। টিকোলো, মরিস ওদুম্বে, টমাস ওদোয়ো, মার্টিন সুজি, কেনেডি ওটিয়েনো, আসিফ করিম, দীপক চুডাসামা, রাবিন্দু শাহ কিংবা হিতেশ মোদীদের মতো ক্রিকেটারদের বিদায়ের পর কেউই হাল ধরতে পারেননি জাতীয় দলের। সে কারণে ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে টিম টিম করে জ্বলে কেনিয়ান ক্রিকেটের সলতেটা পুরোপুরি নিভে যায় এর পরপরই।

কেনিয়ার ক্রিকেটের সেরা তারকা স্টিভ টিকোলো। ফাইল ছবি
কেনিয়ার ক্রিকেটের সেরা তারকা স্টিভ টিকোলো। ফাইল ছবি

১৯৯৪ সালের আইসিসি ট্রফি অনুষ্ঠিত হয়েছিল কেনিয়ার নাইরোবিতে। সে টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়ে কেনিয়া স্থান করে নেয় বিশ্বকাপে। দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল তারা। ১৩ রানের সেই হারটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে চিরকালই। বিশ্বকাপে ব্রায়ান লারা, কার্টলি অ্যামব্রোস, রিচি রিচার্ডসনদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছিল কেনিয়া।

২০০৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালিস্ট শ্রীলঙ্কাকে ৫৩ রানে হারিয়েছিল কেনিয়া। বাংলাদেশও হেরেছিল কেনিয়ার কাছে।