যুবরাজ যখন সৌম্যর প্রেরণা

যুবরাজ সিংকে প্রেরণা মনে করেন সৌম্য । ছবি: প্রথম আলো
যুবরাজ সিংকে প্রেরণা মনে করেন সৌম্য । ছবি: প্রথম আলো
>যুবরাজ সিংকে সব সময়ই নিজের প্রেরণা মনে করেন সৌম্য সরকার। অথচ, সামনাসামনি এ দুজনের দেখা হয়েছে মাত্র তিনবার। সৌম্য অবশ্য বলছেন, দূর থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়।

ই-মেইল ঠিকানায় কেন ‘১২১২’ সংখ্যা রেখেছেন, সৌম্য সরকার সেটির রহস্য বলছিলেন একবার, ‘যুবরাজ সিংয়ের জার্সি নম্বর ১২। তিনি আমার অসম্ভব প্রিয় এক ব্যাটসম্যান। “১২১২” এসেছে এখান থেকেই।’ শুধু ই-মেইল ঠিকানায় নয়, যুবরাজের প্রতি তাঁর এতটাই ভালো লাগা, বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলার সময় ব্যবহার করেছেন ১২ নম্বর জার্সি। পরে বিকেএসপির ক্যাডেট নম্বর ‘৪৫৯ ’-এর সঙ্গে মিলিয়ে জার্সি নম্বর ‘৫৯’ করেছেন।
একটা সময় স্বপ্ন দেখেছেন, হলে যুবরাজের মতোই ব্যাটসম্যান হবেন, যিনি ব্যাটে স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছুটিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। দুদিন আগে প্রিয় ব্যাটসম্যান যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানালেন, ব্রিস্টল থেকে সৌম্যও তাঁকে সম্মান জানালেন। ২০১৬ এশিয়া কাপে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের সামনে তোলা যুবরাজের সঙ্গে একটা ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে বাংলাদেশ ওপেনার লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ যুবি পাজি। আমার দেখা আপনিই সেরা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। সব সময়ই আপনার স্টাইল, ব্যাটিং টেকনিক দেখে শিখেছি।’

যুবরাজের আর কী কী ভালো লাগে, গতকাল সকালে যখন জানতে চাওয়া হলো, ফোনের এ প্রান্ত থেকে সৌম্যর হাসিটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। যাঁকে আদর্শ মানেন, তাঁকে নিয়ে বলতে তো ভালোই লাগার কথা। সেই ভালো লাগা নিয়েই সৌম্য বললেন, ‘স্টাইল কিংবা ব্যাটিং টেকনিকের কথা ফেসবুকেই লিখেছি। তাঁর পাওয়ার হিট করার সামর্থ্য, তিন সংস্করণেই ভালো করেছেন। মানুষ হিসেবেও তিনি অসাধারণ, অনেক মজা-রসিকতা করতে পছন্দ করেন। এটা বলব না যে তিনি স্ট্রোক খেলেন বলে আমিও খেলি। তবে হ্যাঁ, যেটা বললাম, তাঁর ব্যাটিং ভীষণ ভালো লাগত। এখন পর্যন্ত তিনবার দেখা হয়েছে। খুব যে বেশি কথা বলেছি, তা নয়। দূর থেকেও অনেক কিছু শেখা যায়।’

গতকাল দুপুরেই ব্রিস্টল থেকে টন্টনে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ দলের। সকালের সময়টা সৌম্য কাজে লাগিয়েছেন ব্রিস্টলের টিম হোটেলের জিমে কাটিয়ে। ভ্রমণের দিনে স্কিল ট্রেনিং করা কঠিন। তবে সময় নিয়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যায়। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজটা দুর্দান্ত খেলার পর তাঁর লক্ষ্য বিশ্বকাপটা রাঙানো। দলকে ভালো শুরু এনে দিতে দুটি ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তবে ৪২,২৫, ২-এমন ইনিংসে সৌম্য নিজেই খুশি হতে পারছেন না। এখানেও তাঁকে অনুপ্রাণিত করছেন যুবরাজ, ‘তিনি বড় খেলোয়াড় হয়েছেন বড় মঞ্চে ভালো খেলেছেন বলে। কোনো সংস্করণে তাঁর ১০ হাজার রান নেই। তবে জায়গামতো ঠিকই খেলে দিয়েছেন। বড় টুর্নামেন্ট এলেই তিনি দুর্দান্ত। তাঁর শুরুটা ২০০০ নকআউট টুর্নামেন্ট (এখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি) দিয়ে, যেটায় অসাধারণ শুরু। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক ওভারে সেই ছয় ছক্কা, ২০১১ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়। ক্যানসারকেও জয় করেছেন। তিনি বড় যোদ্ধা। এটাই আমার বেশি ভালো লাগে, আমাকে অনুপ্রাণিত করে।’

সৌম্যর কাছে ২০১৫ বিশ্বকাপটা ছিল নিজেকে চেনানোর। আর এবারের বিশ্বকাপটা আরেক ধাপ ওপরে নিয়ে যাওয়ার। সেটি করতে হলে যে তাঁকে ধারাবাহিক হতে হবে, নিয়মিত লম্বা ইনিংস খেলতে হবে। ব্রিস্টল থেকে টনটনে রওনা দেওয়ার আগে যুবরাজের পরামর্শগুলোই বারবার মনে পড়ছে সৌম্যর, ‘এর আগে যে কবার দেখা হয়েছে, বলেছেন, যত চাপ আসবে তত শান্ত থাকবি। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখবি। আর তুই যে যেকোনো বলে ছক্কা মারতে পারিস, এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করবি।’

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা যুবরাজের ক্যারিয়ারটা কত মণিমুক্তায় খচিত। সৌম্যর ক্যারিয়ার এতটা পূর্ণ হবে কি না, এখনই বলার উপায় নেই। আপাতত ২০১৯ বিশ্বকাপের এই বড় মঞ্চে যুবরাজে অনুপ্রাণিত সৌম্য-ঝলক তো দেখা যেতেই পারে।