যা খেলার বৃষ্টিই খেলছে

হোটেল থেকে বেরোচ্ছে মাশরাফি ও সুনীল যোশি। ছবি: শামসুল হক
হোটেল থেকে বেরোচ্ছে মাশরাফি ও সুনীল যোশি। ছবি: শামসুল হক

টন্টনে বাংলাদেশ দল যে হোটেলে উঠেছে, হলি ডে ইনের লবিতে বসা কিংবা দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কঠিন হয়ে গেল! আইসিসির নিরাপত্তাকর্মীরা সৌজন্যের ধার না ধেরে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিচ্ছেন, এখানে বসতে পারবেন না, নো আড্ডাবাজি। তবে গাঁটের টাকা কিছু খরচা করলে অন্যে পরে কা কথা। পাউন্ড খরচ করে চা–কফি যদি খাও, তবেই মিলবে খাতিরযত্ন। না হলে, আপনি এবার আসুন!

বাংলাদেশ দলের অনুশীলন নেই আজ। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের খবরের উৎস টিম হোটেল। বৃষ্টিবাধা উপেক্ষা করে সকাল থেকেই সেখানে জড়ো হয়েছেন সংবাদমাধ্যম কর্মীরা। বৃষ্টির কারণে হোটেলে বাইরে দাঁড়ানো কঠিন, আবার লবিতে বসতেও বাধা। লবি ব্যবহার করতে মূল্যবান বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে আপত্তি নেই। কিন্তু তাই বলে এমন ব্ল্যাকমেইল করে! খানিকটা বিরক্ত হয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়ালেন হোটেলের বাইরে, ছোট্ট একটা ছাউনির নিচে।

নিরাপত্তকর্মীদের নানা শর্ত মেনে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কাভার করতে হলো স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশির অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। কোচের কথা শেষে যখন যাঁর যাঁর হোটেলে ফেরার তাড়া, তখনই এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। মাশরাফিকে ঘিরে ধরতে দেখে নিরাপত্তাকর্মীরা আবারও তৎপর হয়ে উঠলেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য হাতের ইশারায় তাঁদের থামিয়ে দিলেন। বলতে চাইলেন, ‘সবাই আমার পরিচিত। আপনাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই!’

টন্টন শহরটা মাশরাফির ভীষণ ভালো লাগছে। ইংল্যান্ডের সব শহরই ভালো লাগার মতো। একেক শহর একেক বৈশিষ্ট্যের, একেক রূপের । তবে টন্টন মাশরাফির ভালো লাগছে অন্য কারণে। শহর তো নয়, যেন একটা গ্রাম! যে গ্রামে পাবেন বিশ্বের সব সুযোগ–সুবিধা। এমন সুযোগ পেলে শহরের হইহল্লার মধ্যে যাওয়ার কী দরকার! মাশরাফিরাই যেমন থাকছেন শহরের বাইরে একটা পাঁচ তারকা হোটেলে। যে হোটেলকে প্রথম দেখায় মনে হয় বড় একটা বাংলো বাড়ি! ‘আমার এই ধরনের গ্রামই ভালো লাগে, জানেন?’—টন্টন নিয়ে মাশরাফির মুগ্ধতা যেন শেষ হতে চায় না, ‘কী নির্মল, কী নিরিবিলি। শান্তি মতো থাকা যায়, ঘোরা যায়। কিন্তু এখন এই শান্তি উপভোগ করার উপায় যে নেই!’

বিশ্বকাপ নামের মহাযুদ্ধে নেমেছেন। যে যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো থেকে বাংলাদেশ বেশ পিছিয়ে। সবারই অনুমান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত সেমিফাইনাল খেলবেই। প্রশ্ন হচ্ছে, চতুর্থ দলটা কে? মাশরাফি যখন আড্ডা দিচ্ছেন, টন্টনে তখন অঝোর বৃষ্টি। খবর পেলেন, নটিংহ্যামে ভারত–নিউজিল্যান্ড ম্যাচটি শুরুই হয়নি বৃষ্টির কারণে। ম্যাচটা ভেসে গেলে এ নিয়ে চতুর্থ যাবে বৃষ্টির পেটে। বিশ্বকাপ ঘিরে যে উত্তেজনা-রোমাঞ্চ জমে উঠেছিল দারুণ সব ম্যাচে; তাতে আক্ষরিক অর্থেই তো জল ফেলে দিল প্রকৃতি!

এই ম্যাচ বৃষ্টিতে ভেসে এক পয়েন্ট। আর এই পয়েন্টে কিউইদের সেমিফাইনালের পথ আরও পরিষ্কার করবে। বৃষ্টি কারও উপকার করছে, কারও ক্ষতি। সেই ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় পড়ে যাওয়ায় মাশরাফির আফসোসের শেষ নেই, ‘কত আশা নিয়ে ছিলাম ব্রিস্টলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা নিয়ে। সেখানে ভাগাভাগি করতে হলো পয়েন্ট। ওভালে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে যদি জিততাম, আমাদের পয়েন্ট থাকত ৫।’

বৃষ্টি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হার, কঠিন হয়ে যাওয়া সমীকরণ—টন্টন যত সুন্দর, ছিমছাম ছোট শহর হোক না কেন, বিচলিত মনে সেটি কি আর উপভোগ করা যায়? বাংলাদেশ দলও পারছে না। আজ ছুটির দিনে ঘুরতে বেরোনো ক্রিকেটারদের মুখটা তাই টন্টনের আকাশের মতোই মেঘলা মনে হলো। গুমোট এই ভাব দূর হয়ে যাবে, টন্টন থেকে টনটনে আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরের ভেন্যু নটিংহ্যামে যাওয়া যাবে—যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে পারে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ শেষ পর্যন্ত ওই বেরসিক নিরাপত্তাকর্মীর মতোই। নো ফ্রি মিল! আপনি কিছু পেতে চান তো গাঁটের জোরও থাকতে হবে। ক্রিকেটের বেলায় শুধু গাঁটটা ব্যাট এবং বল পড়ে নিলেই হলো।