ঘরের আঙিনায় আবারও কোপা জিতবে ব্রাজিল?

নিজের দেশ থেকে কখনো অন্য কাউকে কোপা নিয়ে যেতে দেয়নি ব্রাজিল! ছবি : টুইটার
নিজের দেশ থেকে কখনো অন্য কাউকে কোপা নিয়ে যেতে দেয়নি ব্রাজিল! ছবি : টুইটার

এর আগে যতবার ব্রাজিলে কোপা আমেরিকা আয়োজন করা হয়েছে, প্রতিবার শিরোপা শোভা পেয়েছে সেলেসাওদের হাতে। এবারও কোপা আমেরিকা আয়োজিত হতে যাচ্ছে পেলে-রোনালদিনহোদের দেশে। নেইমারহীন ব্রাজিল কোপা জিততে পারবে তো?

মহাদেশীয় ফুটবল প্রতিযোগিতাগুলোর মধ্যে কোপা আমেরিকার বয়স সবচেয়ে বেশি। প্রাচীনতম এই প্রতিযোগিতায় ব্রাজিল বরাবরই ফেবারিটের মর্যাদা পেয়েছে। তবে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতে নিজেদের বিশ্বের সবচেয়ে সফল ফুটবল দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ব্রাজিল কিন্তু কোপার ইতিহাসের সেরা দল নয়। ৪৫টি আসরের মধ্যে মাত্র আটবারই কোপার শিরোপা জিততে পেরেছে তারা। এবার কোপার আয়োজন হচ্ছে ব্রাজিলেই। ব্রাজিল কি নিজের দেশের মানুষের সামনে কোপা জয়ের উল্লাস করতে পারবে? ইতিহাস ঘাঁটলে বলা যেতে পারে, হ্যাঁ, পারবে।

এর আগে ৪৫টি আসরের মধ্যে মাত্র চারটি আসরের আয়োজক দেশ ছিল ব্রাজিল। সে চারবার অন্য কোনো দেশকে কোপার শিরোপা নিয়ে যেতে দেয়নি ব্রাজিল। নিজেরাই হয়েছে মহাদেশের সেরা। এ ইতিহাস আজকের নয়। আসুন দেখে নেওয়া যাক, সেই চারবারে কী হয়েছিল কোপায়!

১৯১৬ সালে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা প্রথম ব্রাজিলে পা রাখে ১৯১৯ সালে। সেই কোপা খেলার জন্য ব্রাজিল ছাড়া অংশ নিয়েছিল আর তিনটি দল—আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে ও কলম্বিয়া। সে বার নিয়ম ছিল, প্রত্যেকে প্রত্যেকের বিপক্ষে একটি করে ম্যাচ খেলবে। এভাবে যে দুই দলের পয়েন্ট সবচেয়ে বেশি থাকবে, তারাই উঠবে ফাইনালে। চিলিকে আধ ডজন গোল দিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করে ব্রাজিল। হ্যাটট্রিক করেছিলেন স্ট্রাইকার আর্থার ফ্রাইডেনরাইখ। বলা হয়, ফুটবলের ইতিহাসে পেলে বা রোমারিও নন, সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন ফ্রাইডেনরাইখই। যদিও এই তথ্যের সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তা হোক, তা ফ্রাইডেনরাইখের শ্রেষ্ঠত্বে আঁচ ফেলতে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নিজেদের জায়গা অনেকটা নিশ্চিত করে ফেলে ব্রাজিল। শেষ ম্যাচে ব্রাজিল ও উরুগুয়ে, দুই দলের ড্র করলেই চলত। কেননা, ব্রাজিল ছাড়াও উরুগুয়ের বিপক্ষেও ২-৩ গোলে হেরে বসেছিল আর্জেন্টিনা। শেষ ম্যাচে ব্রাজিল বা উরুগুয়ে, কেউই ঝুঁকি নিতে চায়নি। ২-২ গোলে ড্র করে ফাইনালে উঠেছিল তারা। ফাইনালে সেই ফ্রাইডেনরাইখের গোলে প্রথমবারের মতো কোপা শিরোপা জিতে ব্রাজিল। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা সেই ফ্রাইডেনরাইখই হন।

১৯২২ সালের কোপা আমেরিকা হওয়ার কথা ছিল চিলিতে। কিন্তু নিজেদের স্বাধীনতার শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে নিজেদের দেশে কোপা আয়োজন করার অনুমতি চায় ব্রাজিল। এই অনুরোধের ফলেই যে দ্বিতীয়বারের মতো কোপা শিরোপা দেশে আনার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে ব্রাজিল, তা কে জানত! দেশের মাটিতে কোপা হারানো যে ব্রাজিলের ধাতে নেই! ১৯১৯ আসরের চার দল ছাড়াও এবার কোপা খেলতে এসেছিল প্যারাগুয়ে। ১৯১৯ সালের মতো ১৯২২ সালেও একই ফরম্যাটে কোপার গ্রুপপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। চার ম্যাচের মধ্যে মাত্র এক ম্যাচে জিতে আর বাকি তিন ম্যাচে ড্র করে ফাইনালে ওঠে ব্রাজিল। দ্বিতীয় স্থানে যৌথভাবে উরুগুয়ে ও প্যারাগুয়ে থাকার কারণে সিদ্ধান্ত হয়, তিন দল নিয়েই তিন ম্যাচের প্লে-অফ অনুষ্ঠিত হবে। টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে উরুগুয়ে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে বাকি থাকে দুই দল, সে দুই দল নিয়েই অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল। ফাইনালে স্বরূপে ফেরে ব্রাজিল। ফরমিগার জোড়া গোল ও নেকোর এক গোলে প্যারাগুয়েকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আবারও নিজেদের মাটিতে কোপা জয়ের উল্লাস করে ব্রাজিল।

এর পরের সাতাশ বছর ব্রাজিলে কোপা আয়োজিত হয়নি আর। সে সাতাশ বছর ব্রাজিলও কোপা জেতেনি। সাতাশ বছর ধরে কোপাহীন থাকার কারণেই কি না, ব্রাজিলের ফেডারেশন তোড়জোড় শুরু করল নিজের দেশে কোপা আয়োজন করার। ১৯৪৯ সালে ব্রাজিলে আয়োজিত কোপায় খেলতে এল আট দেশ। যথারীতি রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডে গোলবন্যা বইয়ে দেয় ব্রাজিল। শুধু প্যারাগুয়ের সঙ্গে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে বসে ব্রাজিল, তা ছাড়া প্রতিটি ম্যাচে একাধিক গোল করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের জানান দেয় সবাইকে। ফাইনালে সেই প্যারাগুয়েরই মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। প্রথম রাউন্ডে হারের কারণেই কি না, ভেতরে-ভেতরে ফুঁসছিলেন ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। জাইর, আদেমির ও তেসুরিনহার তোপে টিকতেই পারেনি প্যারাগুয়ে। ৭-০ গোলে প্যারাগুয়েকে বিধ্বস্ত করে তৃতীয়বারের মতো কোপার শিরোপা জেতে ব্রাজিল।

১৯৪৯ সালের কোপা আমেরিকা জিতে আবারও যেন কোপা জিততে ভুলে গেল ব্রাজিল। চল্লিশ বছর টানা কোপা ছাড়াই কাটিয়ে দিল বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই শক্তি। চল্লিশ বছর পর নিজেদের দেশে বেবেতো-রোমারিওদের হাত ধরে ব্রাজিলে এল চতুর্থ কোপা। ফাইনালে উরুগুয়েকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জেতে তারা। ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর টানা ১৯ বছর কোনো ধরনের শিরোপা জেতেনি ব্রাজিল। ফলে এই শিরোপা ব্রাজিলের কাছে এক রকম পরম আরাধ্যই ছিল বলা চলে।

১৯৮৯ সালের পর ব্রাজিল আর কোপা আয়োজন করেনি। তবে তাতে ব্রাজিলের কোপা জয় আর থেমে থাকেনি। গত ৩০ বছরে ব্রাজিল চারবার প্রমাণ করেছে, কোপা জেতার জন্য নিজেদের দেশে কোপা আয়োজন করার দরকার নেই আর। ১৯৯৭, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৭ আসরগুলোতে শিরোপা জিতে রোনালদো, রোনালদিনহো, রিভালদো, কাকারা ভেঙেছেন সেই বৃত্ত।

তিরিশ বছর পর এবার আবারও ব্রাজিলে ফিরছে কোপা। নিজের দেশে কি আবারও কোপা জিতবে ব্রাজিল? ভাঙবে এক যুগের কোপাখরা? জানার জন্য টিভিপর্দায় চোখ রাখতে হবে এই শনিবার ভোর থেকে। ব্রাজিল-বলিভিয়া ম্যাচ দিয়ে কোপা যে শুরু হচ্ছে সেদিন থেকেই!