কোপায় কেমন হলো আর্জেন্টিনার গ্রুপ?

মেসি কি পারবেন আর্জেন্টিনার হয়ে দুঃস্বপ্নের প্রহর কাটিয়ে উঠতে? ছবি: এএফপি
মেসি কি পারবেন আর্জেন্টিনার হয়ে দুঃস্বপ্নের প্রহর কাটিয়ে উঠতে? ছবি: এএফপি
>কাল ভোর থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের আসর, কোপা আমেরিকা। এবারের শিরোপা কার হাতে উঠবে? বরাবরের মতো এবারও ফেবারিটের তালিকায় রয়েছে আর্জেন্টিনার নাম। এই পরাশক্তির গ্রুপ প্রতিপক্ষ কে কে? গ্রুপটা শক্তিশালী না দুর্বল? আসুন দেখে নেওয়া যাক!

কোপা আমেরিকার ৪৬তম আসর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে কাল থেকে। ফুটবলের প্রাচীনতম মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জয় করার জন্য লড়বেন মেসি, সুয়ারেজ, কুতিনহো, সানচেজরা। যথারীতি এবারও মেসির দিকে নজর সবার একটু বেশি।

থাকবে না-ই বা কেন? আর্জেন্টিনার ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই তারকা এক যুগ ধরে চেষ্টা করেও আর্জেন্টিনাকে কোনো শিরোপা এনে দিতে পারেননি। মেসির বয়স এখন ৩১। আস্তে আস্তে ক্যারিয়ারে শেষের ডাক শুনতে পাচ্ছেন। এবারের কোপা জিতে কি আর্জেন্টিনা শিরোপা খরা ঘোচাবে? সেটা কিছুটা হলেও বোঝা যাবে গ্রুপপর্বে। গ্রুপপর্বে আর্জেন্টিনা কেমন প্রতিপক্ষ পেল? সহজ না কঠিন?

তিন গ্রুপের মধ্যে আর্জেন্টিনা আছে গ্রুপ ‘বি’তে। তাদের গ্রুপসঙ্গী কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে ও কাতার। মোটামুটি কঠিন গ্রুপই বলা চলে। ২০০১ সালে একবার চ্যাম্পিয়ন হওয়া কলম্বিয়া সর্বশেষ কোপাতেও তৃতীয় হয়েছিল। কোপায় কলম্বিয়ার ইতিহাস তেমন চোখ-ধাঁধানো না হলেও, যারা মোটামুটি ফুটবল অনুসরণ করেন, তারা বুঝবেন, এবার কোপার অন্যতম ফেবারিট দল এই কলম্বিয়া। প্রত্যেক পজিশনেই কার্যকরী খেলোয়াড় আছে এই দলে।

কলম্বিয়ার গোলবার সামলাবেন ইতালিয়ান লিগে নাপোলির হয়ে খেলা ডেভিড ওসপিনা। রক্ষণভাগে ডেভিনসন সানচেজ, ইয়েরি মিনা, সান্তিয়াগো আরিয়াস, ক্রিস্টিয়ান জাপাতা যথাক্রমে টটেনহাম, এভারটন, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, এসি মিলানের মতো ক্লাবে নিয়মিত খেলা খেলোয়াড়। বিশেষ করে রক্ষণভাগের খেলোয়াড় হওয়া সত্ত্বেও সেটপিসে হেড করে গোল করতে পারার জন্য গত বিশ্বকাপে মিনা বেশ নাম কামিয়ে ছিলেন। মাঝমাঠের নেতা যথারীতি গত মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখে খেলা হামেস রদ্রিগেজ।

হামেস ছাড়াও কলম্বিয়ার মাঝমাঠ সামলানোর জন্য আছেন জেনিতে খেলা উইলমার ব্যারিওস, বোর্নমাথের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় জেফারসন লেরমা ও জুভেন্টাসের হুয়ান কুয়াদ্রাদো। আক্রমণভাগে রয়েছেন সাম্পদোরিয়ার স্ট্রাইকার ডুভান জাপাতা, দলের অন্যতম বড় তারকা রাদামেল ফ্যালকাও ও ফিওরেন্টিনার লুইস মুরিয়েল। সাম্পদোরিয়ার হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো জাপাতা দেশের হয়েও এবার কিছু করতে চাইবেন। ওদিকে ফ্যালকাওয়ের কাছে এ টুর্নামেন্টটা নিজেকে ফিরে পাওয়ার। হোসে পেকারম্যানের মতো বিজ্ঞ কোচের বানিয়ে দেওয়া দলকে এবার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ও পর্তুগাল কোচ কার্লোস কুইরোজকে। তাই গ্রুপ পর্বে আর্জেন্টিনাকে বেশ ঝামেলায় ফেলতে পারে কলম্বিয়া, হারিয়ে দিলেও অস্বাভাবিক কিছু হবে না। কলম্বিয়ার চোখ যে শিরোপাতে!

এ গ্রুপে আরও রয়েছে প্যারাগুয়ে। ১৯৫৩ ও ১৯৭৯ সালে দুবার কোপাজয়ী এই দল বিশ্বমঞ্চে অতটা শক্তিশালী দল না হলেও দক্ষিণ আমেরিকায় তাদের বেশ সমীহ করা হয়। ২০১৫ কোপায় সেমিতে খেলা এই দল সর্বশেষ কোপায় প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে গিয়েছিল। তাই এবার প্রথম রাউন্ডের বাধা পেরোতে তারা বদ্ধপরিকর। দলটার রক্ষণভাগে এবার রয়েছেন ফাবিয়ান বালবুয়েনা ও জুনিয়র আলোনসোর মতো তারকারা, যারা ওয়েস্ট হাম ও বোকা জুনিয়র্সের মতো ক্লাবে খেলেন।

এই দলের মিডফিল্ডের সবচেয়ে বড় তারকা মিগুয়েল আলমিরন, নিউক্যাসল ইউনাইটেডের ইতিহাসের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে কয়েক মাস আগে প্রিমিয়ার লিগে এসেছেন যিনি। আক্রমণভাগে আছেন ফেদেরিকো সানতানদার ও হুয়ান ইতুর্বের মতো তারকারা। এই ইতুর্বেকে আগে প্যারাগুয়ের মেসি বলা হতো। যদিও এখনো দেশের হয়ে মেসির মতো কিছুই করতে পারেননি। এবার কোপায় যে সেই খেদ মেটাবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

গ্রুপের বাকি দল কাতার। ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক এই দেশ এবারের কোপা খেলছে আমন্ত্রিত দল হিসেবে। কাতারকে দুর্বল ভাবলে ভুল হবে। ব্রাজিলের কাছে সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচে হারার আগে এশিয়ার বেশ কিছু পরাশক্তি দেশকে হারিয়েছে তারা। এদের মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, লেবানন, ইরাক ও জাপানের মতো দল। ভাঙাচোরা আর্জেন্টিনাকে দুঃস্বপ্নের প্রহর উপহার দেওয়ার জন্য কাতারের একটা ভালো দিনই যথেষ্ট।

এই গ্রুপ পেরিয়ে আর্জেন্টিনা কি কোপা জিততে পারবে?