ব্যয়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে রিয়াল

বেলজিয়ামের উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ড, সার্বিয়ান স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ ও ফ্রান্সের লেফটব্যাক ফারলান মেন্ডি এখন সাদা জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষায়। ছবি: টুইটার
বেলজিয়ামের উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ড, সার্বিয়ান স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ ও ফ্রান্সের লেফটব্যাক ফারলান মেন্ডি এখন সাদা জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষায়। ছবি: টুইটার
>ট্রফিবিহীন এক মৌসুম কাটিয়ে নব উদ্যমে নতুন মৌসুম শুরু করতে চায় রিয়াল মাদ্রিদ। ২০১৮–১৯ মৌসুমের দুঃস্বপ্ন ভুলতে রিয়াল প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ পুরো দলকেই নতুন করে ঢেলে সাজাতে চান। এখন পর্যন্ত ৫ জন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে ৩০৩ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছেন। এরই মধ্যে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ক্লাব রেকর্ড করে ফেলেছে রিয়াল।

চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের আনন্দে রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরা উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। সে উৎসবের মাঝে বিষাদ নামিয়ে আনল বড় দুই নামীর দল ছেড়ে যাওয়া। কোচের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন জিনেদিন জিদান। সে শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই রোনালদোও বলে দিলেন, ‘বিদায় রিয়াল মাদ্রিদ।’ জিদান ও রোনালদোকে ছাড়া শেষ মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদকে দেখে মনে হয়েছে ভাঙা একটা দলের মতো। তাই নতুন মৌসুমে দল পুনর্গঠনের জন্য টাকার থলে নিয়ে নেমেছেন মাদ্রিদ কর্তারা। যার ফলে ইতিমধ্যে বেলজিয়ামের উইঙ্গার এডেন হ্যাজার্ড, সার্বিয়ান স্ট্রাইকার লুকা ইয়োভিচ ও ফ্রান্সের লেফটব্যাক ফারলান মেন্ডি এখন সাদা জার্সিতে মাঠে নামার অপেক্ষায়।

চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের মুকুট মাথায় নিয়ে ২০১৮-১৯ মৌসুম শুরু করেছিল রিয়াল। অথচ কিনা পরের মৌসুমে (শেষ) এসে তাদের শোকেসে ওঠেনি একটি ট্রফিও। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ৪-২ গোলে হেরে উয়েফা সুপার কাপ হাতছাড়া করে মৌসুম শুরু করে রোনালদো-জিদান বিহীন রিয়াল। এর পরের গল্পটা আরও ভয়াবহ। গত ২০ বছরের মধ্যে এক মৌসুমে ১৭ হারের রেকর্ড দেখেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। শেষ দিকে ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছেন জিদান। এতে শেষ পর্যন্ত টেবিলের তৃতীয় স্থানে থেকে লিগ শেষ করে তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নদের দল কিনা লিগে তৃতীয়। ভাবা যায়! তাই দলের পুনর্গঠনের দিকে দৃষ্টি দেবে রিয়াল, তা মোটামুটি নিশ্চিত ছিল।

কিন্তু দল পুনর্গঠন করতে গিয়ে একেবারে খরচের রেকর্ড করে ফেলবে, এটা হয়তো অনেকেই ভাবেননি। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দলবদলের বাজারে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল মনোভাব দেখা গেছে তাদের। ৫৭৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু সংস্কার প্রকল্প এবং দলের স্থিতিশীল অবস্থার কারণে গত কয়েক মৌসুমে খুব বেশি অর্থ ব্যয় করেনি তারা। বড় সাইনিংয়ের চেয়ে ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় তরুণদের দলে টানার দিকেই ছিল বেশি ঝোঁক। কিন্তু দুঃস্বপ্নের ২০১৮-১৯ মৌসুম শেষে আবারও দলবদলের বাজারে সরব হলো ফ্লোরেন্তিনা পেরেজের ক্লাব।

সান্তোস থেকে ব্রাজিলিয়ান রদ্রিগোকে ৪৫ মিলিয়ন ইউরোতে দলে টানার মধ্যে দিয়ে নতুন মৌসুমের কেনাকাটা শুরু করে রিয়াল। এরপর একে একে এদের মিলিতাও (৫০ মিলিয়ন), লুকা ইয়োভিচ (৬০ মিলিয়ন), এডেন হ্যাজার্ড (১০০ মিলিয়ন), ফারলান মেন্ডিকে (৪৮ মিলিয়ন) দলভুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের আগের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে তারা। এখন পর্যন্ত ৩০৩ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করা রিয়াল টপকে গেছে আগের রেকর্ড ২০০৮-০৯ মৌসুমের মোট ব্যয়ের অঙ্ক।

সেবার ক্লাব প্রেসিডেন্ট পদে ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রত্যাবর্তন হয়েছিল। ৮ জন খেলোয়াড়কে দলে ভেড়াতে খরচ করেছিলেন ২৫৮.৫ মিলিয়ন ইউরো। তখনকার দলবদলের বিশ্ব রেকর্ড ফি বা ৯৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে টানেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। এ ছাড়া কাকা (৬০ মিলিয়ন), করিম বেনজেমা (৩৫ মিলিয়ন), জাবি আলোনসো (৩৪.৫ মিলিয়ন), রাউল আলবিওল (১৫ মিলিয়ন), আলভারো নেগ্রেদো (৫ মিলিয়ন), আলভারো আরবেলোয়া (৪ মিলিয়ন) ও এস্তেবান গ্রানেরোকে (৪ মিলিয়ন) দলে ভেড়াতে সেই অর্থ খরচ করেছিল রিয়াল।

প্রায় ১০ বছর পরে এসে আবার টাকার থলে নিয়ে নেমে আগের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দলবদলের শুরুতেই হাত খুলে নেমেছে। রিয়ালের খরচের অঙ্কটা আরও বাড়লেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আগের মৌসুমের দুঃসহ সব স্মৃতি ভুলে যে আবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সুদিন ফেরানোর পালা!