ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পণ্ড হলে স্টার স্পোর্টসের লোকসান ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে!

ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি নামার শঙ্কায় রয়েছেন ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকেরা। ছবি: এএফপি
ম্যানচেস্টারে বৃষ্টি নামার শঙ্কায় রয়েছেন ভারত-পাকিস্তানের সমর্থকেরা। ছবি: এএফপি
>ম্যানচেস্টারে কাল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এ ম্যাচেও রয়েছে বৃষ্টি নামার শঙ্কা। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পণ্ড হলে প্রচুর আর্থিক লোকসান গুনতে হবে সম্প্রচারক চ্যানেল থেকে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর। বৃষ্টিতে এর আগে কয়েকটি ম্যাচ পণ্ড হওয়ায় বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে

বিশ্বকাপ এখন বর্ষাকাপ! রসিকতা এখানেই থামেনি। অনেকে বলছেন, বৃষ্টিতে খেলা পণ্ড না করে সাঁতার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যায়। সত্যি ইংল্যান্ডে এবার বিশ্বকাপ নিয়ে বৃষ্টি ছিনিমিনি খেলায় ক্রিকেটপ্রেমীদের রসিকতার অন্ত নেই। ওদিকে দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম বিশ্বকাপের বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর। বৃষ্টিতে তিনটি ম্যাচ (টস হয়নি) পণ্ড হওয়ায় স্টেকহোল্ডারদের বিশাল অঙ্কের অর্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে বিমা-মালিকদের। কাল ম্যানচেস্টারে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও বৃষ্টির কারণে পণ্ড হলে ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা আরও বাড়বে।

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ২০১৯ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টির কারণে মোট চারটি পণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে শুধু এক ম্যাচ মাঠে গড়ানোর পর পণ্ড হয়েছে। বাকি তিন ম্যাচে টসই হয়নি। কাল ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথেও বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ম্যানচেস্টারে আজ থেমে থেমে বেশ কয়েকবার বৃষ্টি নেমেছে। আর কাল বৃষ্টি নামতে পারে স্থানীয় সময় দুপুরের পরে। যেহেতু ম্যাচ গড়াবে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় তাই দ্বিতীয় ইনিংসে বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। অবশ্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে সকালেও। আর তাতে বিশ্বকাপ সংশ্লিষ্ট পৃষ্টপোষক থেকে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও বেড়েছে।

কারণ, ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ বিশ্বকাপের সেরা লড়াইগুলোর একটি। যদিও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে পাকিস্তান কখনো জিততে পারেনি কিন্তু দুই দলের গৌরবময় অতীত দ্বৈরথের জন্য ম্যাচটি ঘিরে সবার বাড়তি আগ্রহ জন্মানোই স্বাভাবিক। কিন্তু ম্যানচেস্টারের বেরসিক মেঘলা আকাশ সেই আগ্রহে জল ঢেলে দিলে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর কপাল আরও পুড়বে। পণ্ড হওয়া তিন ম্যাচের (টস হয়নি) ক্ষতিপূরণ বাবদ ১৮০ কোটি রুপি স্টেকহোল্ডারদের হাতে তুলে দিতে হয়েছে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোকে—এমন তথ্যই জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম। এ ছাড়াও সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষতিটুকুই হয়েছে বিশ্বকাপের সম্প্রচারক চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের।

ইনসাইড স্পোর্টস জানিয়েছে বিজ্ঞাপন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাতে প্রায় ১৪০ কোটি রুপি লোকসান দাবি করেছে স্টার স্পোর্টস। ফলে চ্যানেলটির বিমার প্রিমিয়াম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০০ শতাংশে। বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো এত বড় লোকসান বহনের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। এ ছাড়া বৃষ্টির শুধু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বাতিল হলেই ১৩৭.৫ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬৬.৪৭ কোটি টাকা) লোকসান গুনতে হবে স্টার স্পোর্টস এবং তাদের বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা, উবার, ওয়ানপ্লাস ও এমআরএফ টায়ারের।

বিশ্বকাপে বড় ম্যাচগুলোর টিকিট অনেক আগেই শেষ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট তো ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার, এ ম্যাচের কিছু টিকিট সর্বোচ্চ ৬০ হাজার রুপিতেও পুনরায় বিক্রি করেছেন ক্রিকেটমোদীরা। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ চলাকালীন যেসব বিজ্ঞাপন দেখানো হবে সেসব ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রিও করে ফেলেছে চ্যানেলটি। এ ম্যাচে শুধু বিজ্ঞাপন থেকেই ১৩৭.৫ কোটি রুপি আয়ের হিসেব কষেছে স্টার স্পোর্টস। কিন্তু বৃষ্টিতে ম্যাচ পণ্ড হলে সব হিসেব গুবলেট হয়ে যাবে।

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে স্টার স্পোর্টসে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতি সেকেন্ডের দাম আড়াই লাখ রুপিও উঠেছে। তবু বিজ্ঞাপনদাতাদের ভিড় কমছে না। চ্যানেলটি বেশ আগেই বিজ্ঞাপনের বেশির ভাগ স্লট বিক্রি করে ফেলেছে। অর্থাৎ শেষ মুহূর্তে বিজ্ঞাপনের জন্য প্রতি সেকেন্ডের দাম আরও বাড়বে। এখন প্রশ্ন হলো, বৃষ্টিতে এই ম্যাচ পণ্ড হলে কী ঘটবে?

বিজ্ঞাপনদাতারা যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনের প্যাকেজ কিনেছেন সেই প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ স্টার স্পোর্টসকে লোকসান টানতে হবে। বিজ্ঞাপনদাতারা চাইলে পরে অন্য কোনো ম্যাচে বিজ্ঞাপনের ফাঁকা জায়গায় নিজেদের আগের প্যাকেজটি ব্যবহার করতে পারবেন। এ নিয়ে মিডিয়া এজেন্সি কারাট ইন্ডিয়ার জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ভিনিতা পাঁচিসিয়া বলেন, ‘পরের নির্ধারিত ম্যাচগুলোয় বিজ্ঞাপনদাতারা নিজ নিজ প্যাকেজ ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেটি হবে ওই ম্যাচে বিজ্ঞাপনের সময় খালি আছে কি না, তা সাপেক্ষে।’