মাশরাফিকে নিয়ে এভাবে কথা বলা 'আনফেয়ার'

বলটা কেন বশ মানছে না, তামিম সেটাই বোঝার চেষ্টা করছেন নেটে। ছবি: শামসুল হক
বলটা কেন বশ মানছে না, তামিম সেটাই বোঝার চেষ্টা করছেন নেটে। ছবি: শামসুল হক

তামিম ইকবাল যেন এ কথাগুলোই বলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন! তাঁকে নিয়ে তো হচ্ছেই, সমালোচনা হচ্ছে মাশরাফি বিন মুর্তজার পারফরম্যান্স নিয়েও। বিশ্বকাপে ধারাবাহিক ভালো খেলতে না পারায় কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে মোস্তাফিজুর রহমান কিংবা মাহমুদউল্লাহকে নিয়েও। চারদিকে ধেয়ে আসা সমালোচনার তিরগুলো কীভাবে এড়িয়ে চলছেন, সেটি ব্যাখ্যা করতে হয়ে একটু যেন আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন তামিম!

সকালে সবার আগে তিনিই নেটে ব্যাটিং করেছেন। ব্রিস্টলে বিরতির দিনেও একা একা চলে এসেছেন নেটে। তামিম রানে ফিরতে উন্মুখ, সেটি তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপেই বোঝা যাচ্ছে। ভালো খেলতে পারছেন না, এটি নিয়ে বিচলিত নন বলে দাবি করছেন। তামিমের বরং খারাপ লাগছে মাশরাফিকে নিয়ে। বাংলাদেশ অধিনায়কের পারফরম্যান্স নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, সেটি নিয়ে আজ টন্টনের সংবাদ সম্মেলনে প্রায় পাঁচ মিনিটের বিশদ এক প্রতিক্রিয়াই দিলেন বাঁহাতি ওপেনার, ‘আমার কথা বাদ দেন। মাশরাফি ভাইয়ের কথা বলি। যারা এ কথাগুলো বলছে এবং যারা এ কথাগুলো লিখছে তারা যদি কথাটা বলার আগে কিংবা লেখার আগে দুটো মিনিট একটু চিন্তা করেন…আমরা কাকে নিয়ে কথা বলছি, তিনি ১৫-১৬ বছরে কী করেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। এখন বলা হচ্ছে মাশরাফি আনফিট! যদি আনফিট বলতে হয় তাহলে সে ১০-১৫ বছর ধরেই আনফিট! তাঁর দুটো হাঁটু লম্বা সময় ধরে ভালো নেই। দশ বছর তো আমরা বিষয়টা আবেগের চোখে দেখেছি। এখন একটু ১৯-২০ হচ্ছে বলে এটাকেই এখন অন্য চোখে দেখছি।’

মাশরাফিকে নিয়ে যে আলোচনা–সমালোচনা হওয়াটা দুঃখজনক মনে করেন তামিম, ‘এমন একটা ব্যক্তিকে নিয়ে আমরা কথা বলছি যে তাঁর হাত ধরে কিন্তু আমরা আজ এখানে এসেছি। দল হিসেবে, ব্যক্তি হিসেবে…নিজের কথাও বলব। এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি যা করেছেন বাংলাদেশ দলের জন্যই করেছেন। তাঁকে নিয়ে এভাবে মন্তব্য করা কিংবা আলোচনা করা খুবই আনফেয়ার। তিনি যেটা পাচ্ছেন সেটির চেয়ে আরও একটু সম্মান তিনি পেতে পারেন। এসব মাথায় নিতে চাই না। বিদেশি কিছু সাবেক ক্রিকেটারও বলেছেন শুনেছি। তাঁরা নিজেদের ক্যারিয়ারে কী করেছেন, সেটা আমার প্রশ্ন। নিজেদের জীবনে এমন কী করেছেন যে বর্তমান সময়ের একজন খেলোয়াড় সম্পর্কে এভাবে বলছেন।’

তামিম অবশ্য বিদেশি বিশ্লেষক কিংবা সাবেক ক্রিকেটারদের মন্তব্য নিয়ে বিচলিত নন। তবে দুঃসময়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের পাশে থাকার অনুরোধ তাঁর, ‘দেশের বাইরের মানুষ কী বলছে না বলছে, সেটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। সবার মত থাকতে পারে, সেটা প্রকাশের অধিকারও তাঁদের আছে। তবে দেশের মানুষদের বোঝা উচিত, যখন মাশরাফির বিষয়ে কথা বলছি, তখন একবার যেন ভাবি বাংলাদেশ দলকে উনি কী দিয়েছেন। খেলোয়াড়দের জীবন বৃত্তের মতো। ভালো খেলবে, খারাপ খেলবে, এভাবেই বৃত্তটা ঘুরবে। ভালো খেললেই যে আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন, বিষয়টা তেমন নয়। যখন কেউ খারাপ খেলবে তখনও তাঁর সঙ্গে থাকতে হয়। এ রকম বড় ইভেন্টে সব খেলোয়াড় ভালো খেলে না। কিছু কিছু খেলোয়াড় খেলে। যারা চ্যাম্পিয়ন হয় তাদেরও কিন্তু সব খেলোয়াড় ভালো খেলে না। কয়েকজন খেলে। কিছু খেলোয়াড় ছন্দে থাকবে, কিছু থাকবে না। এসব নিয়ে যত কম কথা হবে ততই ভালো।’

মাশরাফিকে সামনে আনলেন বটে। তামিম যেন অনুচ্চারে নিজের ব্যথাটাও প্রকাশ করলেন। তাঁর এই ব্যথা উপশমের সবচেয়ে বড় উপায় দুর্দান্ত ব্যাটিং করা। তামিম সেটা শুরু করতে চান টন্টন থেকেই। এই মাঠে তিনি অনুপ্রাণিত হতে পারে একটি পরিসংখ্যান দেখে। এখনো পর্যন্ত এই মাঠে সেঞ্চুরি পেয়েছেন যে চারজন ব্যাটসম্যান, তিনজনই বাঁহাতি। ডেভিড গাওয়ার করেছিলেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সৌরভ গাঙ্গুলির ক্যারিয়ার–সর্বোচ্চ ১৮৩ এই মাঠেই, ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে লঙ্কানদের বিপক্ষে। কদিন আগে পাকিস্তানের সঙ্গে ওয়ার্নার করলেন ১০৭। চতুর্থ বাঁহাতি ওপেনার কি তামিম ইকবাল? ‘আশা তো করি। কেন আমি করতে পারব না! এখানে আমি অবশ্য কখনো খেলিনি। তবে শুনেছি ব্যাটিং স্বর্গ। উইকেট ওরা একটু ভিন্নভাবে বানাচ্ছে। সবশেষ অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তানের ম্যাচে দেখেন উইকেট বোলারদের সহায়তা করেছে। আর আবহাওয়াও ব্যাটিং–বান্ধব নয়। যে উইকেট–কন্ডিশন থাকুক, আমাকে তৈরি থাকতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলন শেষে ফেরার সময় হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেলেন মিক্সড জোনের টিভির সামনে। শ্রীলঙ্কা–অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ চলছে। অ্যারন ফিঞ্চের একটা শটে ভীষণ মুগ্ধ হলেন। ফিঞ্চ ফিরেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেই। তামিম নিজেও নিশ্চয়ই এমন ব্যাটিংয়ের স্বপ্ন দেখছেন।