সেই আগুনে লড়াই এখন 'দশে মিলে করি কাজ'

ভারত-পাকিস্তান মাঠের লড়াইয়েও সম্প্রীতি ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। ছবি: টুইটার
ভারত-পাকিস্তান মাঠের লড়াইয়েও সম্প্রীতি ছিল ক্রিকেটারদের মধ্যে। ছবি: টুইটার
একটা সময় ছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ যেন ছিল ভারতের ব্যাটিং আর পাকিস্তানের বোলিংয়ের লড়াই। এখন সেটা বদলেছে।

বল হাতে ছুটে আসছেন ওয়াসিম আকরাম আর ব্যাট হাতে তৈরি শচীন টেন্ডুলকার। ক্রিকেট রোমান্টিকদের চোখে এর চেয়ে লোভাতুর দৃশ্য আর কী হতে পারে! টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ...নব্বই দশকের শেষভাগ আর এই শতাব্দীর প্রথম দশকে কী ছিল ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ! আর সেই সময়ের পাকিস্তান দল? ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার...কী দুর্দান্ত সব ফাস্ট বোলার! গতি, বাউন্স আর সুইংয়ের পসরা মেলে ধরে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের শিড়দাঁড়ায় শীতল স্রোতই বইয়ে দিতেন তাঁরা।

একটা সময় ছিল ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ মানেই যেন ভারতের ব্যাটিং আর পাকিস্তানের বোলিংয়ের লড়াই। শুধু নব্বই আর তার পরের দশকেই নয়, এই লড়াই আগেও ছিল। সত্তর-আশির দশকের কথাই ধরুন, সুনীল গাভাস্কারসমৃদ্ধ ভারতের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সে কী লড়াই-ই না হতো সরফরাজ নওয়াজ-ইমরান খানদের ফাস্ট বোলিংয়ের। কালের বিবর্তনে সেই লড়াই এখন অনেকটাই বিবর্ণ। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পোস্টার এখন ব্যাট আর বলের লড়াইয়ে হয় না!

পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিংয়ের পরম্পরাটা ধরে রেখেছেন মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, হাসান আলীরা। তবে আকরাম-ওয়াকার-শোয়েবদের মতো তেমন আতঙ্ক আর ছড়াতে পারছেন কই! পাকিস্তানের বোলিংয়ে এখন আশার প্রদীপ বলতে আমির একাই। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে সেটা তিনি দেখিয়েছেনও। কিন্তু বাকিরা তাঁকে সেভাবে সংগত করতে পারছেন না। অন্যদিকে বিরাট কোহলির নেতৃত্বে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপটা ভালো। তবে টেন্ডুলকার-সৌরভ-দ্রাবিড়-লক্ষ্মণসমৃদ্ধ সেই ব্যাটিং লাইনআপের মতো বিশ্বসেরা অবশ্যই নয়।

নব্বই দশকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ত্রাস ছড়িয়েছেন ওয়াসিম আকরাম। ছবি: টুইটার
নব্বই দশকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ে ত্রাস ছড়িয়েছেন ওয়াসিম আকরাম। ছবি: টুইটার

ভারত-পাকিস্তানের লড়াইটা এখন আসলে আগের মতো নেই। এখন লড়াইটা ‘দশে মিলে করি কাজ’-এর মতো। ম্যাচ জিততে অবদান রাখতে হবে সব বিভাগকেই। কোহলি-রোহিতরা ভালো ব্যাটিং করবেন, বুমরা-ভুবনেশ্বররা জ্বলে উঠবেন বল হাতে আর দুর্দান্ত ফিল্ডিং করবেন রোহিত-জাদেজারা। তাহলেই হয়তো জিতবে ভারত। একটা বিষয় আবার না বললেই নয়, একসময় ভারতের বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপের পাশে বড্ড ম্লান ছিল দলটির বোলিং আক্রমণ। বিশেষ করে পেস বোলিং আক্রমণ। কিন্তু কোহলি এবার বিশ্বকাপে এসেছেন ভারতের ইতিহাসের সেরা পেস বোলিং আক্রমণ নিয়ে।

পাকিস্তানের জয়ের বেলায়ও ‘সবে মিলে করি কাজ’-এর বিষয়টা সমানভাবে সত্য। আমির-ওয়াহাবদের সঙ্গে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে হবে ফখর-ইমাম-বাবরদের। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপটা একটু অনভিজ্ঞ হলেও কিছুদিন ধরে ভালোই খেলছে। যেকোনো দিন যে–কারও বিপক্ষে ভালো একটি ইনিংসে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন ফখর জামান, ইমাম-উল হক বা বাবর আজম।

আশির দশকেও জমেছে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। ছবি: টুইটার
আশির দশকেও জমেছে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ। ছবি: টুইটার

এত কিছু বদলে যাওয়ার পরও পাকিস্তানের একটা বিষয় কিন্তু আগের মতোই রয়ে গেছে, সেটি তাদের চিরকালীন অননুমেয় চরিত্র! এই বিশ্বকাপেও যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৫ রানে অলআউট হয়েছে, ম্যাচটি হেরেছে ৭ উইকেটে। পরের ম্যাচেই আবার এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ফেবারিট ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে যেমন সবাইকে অবাক করে ভারতকে ফাইনালে হারিয়ে ট্রফি নিয়ে দেশে ফিরেছিল পাকিস্তান। ওল্ড ট্রাফোর্ডে আজ কী হবে, সেই অনুমান না করে তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের লড়াই উপভোগ করাতে মনোযোগ দেওয়াটাই ভালো!