ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের চেয়েও বেশি কিছু

ভারতের ভরসা যেখানে বিরাট কোহলি, পাকিস্তানের অবশ্যই মোহাম্মদ আমির। ছবি: এএফপি
ভারতের ভরসা যেখানে বিরাট কোহলি, পাকিস্তানের অবশ্যই মোহাম্মদ আমির। ছবি: এএফপি
ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই আকাশে উত্তেজনার রেণুর ওড়াউড়ি। ক্রিকেট ছাপিয়ে রাজনীতির উঁকিঝুঁকি, একটা যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩.৩০ মিনিটে।

২০১১ বিশ্বকাপ। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের মুখোমুখি ভারত। তার আগে ভারতের সেই সময়ের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি বলে দিলেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলে বিশ্বকাপ না জিতলেও চলবে তাঁদের। ধোনির এমন কথা বলার কারণও ছিল। ম্যাচটির আগে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে ভারতীয় সমর্থকেরাই এমন একটা দাবি তুলেছিলেন-পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়ে এসো, আমাদের আর বিশ্বকাপ লাগবে না!

সেমিফাইনাল নয়, ভারত-পাকিস্তানের এবার দেখা হচ্ছে প্রথম পর্বেই। ধোনি আর ভারতের অধিনায়ক নেই। এবারের বিশ্বকাপে ভারতের স্বপ্নসারথি বিরাট কোহলিকে একই বার্তা পাঠাচ্ছেন ভারতের সমর্থকেরা। নটিংহামে বসবাসরত হ্যারন মেমন নামের এক ভারতীয় সমর্থক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘কোহলি বিশ্বকাপ না জিততে পারুক ক্ষতি নেই, এই ম্যাচটা জিতুক!’

এবার ঘুরে আসা যাক ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের পশ্চিম থেকে। দিন কয়েক আগে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হক বলেছিলেন, তাঁর দেশের অনেকেই মনে করেন, বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয় পেলে বিশ্বকাপ না জিতলেও চলবে। আজকের ম্যাচ নিয়ে পাকিস্তানি এক সমর্থকের টুইট, ‘ক্রিকেটে আমরা সব সময়ই ভারতের ওপর ছড়ি ঘুরিয়েছি। এটাকে যুদ্ধ বা খেলা যা-ই বলুন, রোববার আমরাই জিতব।’

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই এ রকম সাজ সাজ রব, যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। দুই প্রতিবেশী দেশের ক্রিকেট ম্যাচ আর শুধুই একটি ক্রিকেট ম্যাচ থাকে না। মঞ্চ যেটিই হোক-এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা বিশ্বকাপ; ক্রিকেট মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ পেয়ে যায় অন্য মাত্রা। আগে তো এই ক্রিকেট-যুদ্ধ বেশ দেখা যেত। ভারত-পাকিস্তান একেকটি ম্যাচ আসত, পুরো ক্রিকেট-বিশ্বই যেন দুই ভাগে ভাগ হয়ে যেত!

২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে পাকিস্তানি জঙ্গিদের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দল দুটি আর পূর্ণাঙ্গ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি। ২০১২-১৩ মৌসুমে একবার শুধু ভারত সফর করেছিল পাকিস্তান। এ ছাড়া দুই দলের দেখা শুধু আইসিসি বা অন্য কোনো টুর্নামেন্টেই হয়। সর্বশেষ ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল গত বছরের এশিয়া কাপে। সেবার গ্রুপ পর্ব আর সুপার ফোরের দুটি ম্যাচে ভারতের কাছে বড় ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তান।

এশিয়া কাপের সেই লড়াইয়ের পর আজ আবার প্রথম দেখা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের। এবারের লড়াইয়ের অবশ্য অন্য রকম মাত্রা আছে। সেটা গত ফেব্রুয়ারিতে পুলাওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ভারতের আধা সামরিক বাহিনীর ৪০ জন সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার কারণেই। হামলাটির দায় স্বীকার করেছিল পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ। ভারত সরকারের দাবি, ওই হামলা হয়েছে পাকিস্তান সরকারের মদদে।

ওই হামলার পর ভারতীয় ক্রিকেট মহলে ঝড় ওঠে। অনেকেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি বয়কটের দাবি তোলেন। সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন সদ্য ভারতের লোকসভার সদস্য হওয়া সাবেক ওপেনার গৌতম গম্ভীর। বিষয়টি আইসিসি পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ওই হামলায় নিহত সেনাসদস্যদের সম্মানে ভারতের উইকেটকিপার ধোনি বিশ্বকাপে ভারতের প্রথম ম্যাচে তাঁর গ্লাভসে বিশেষ চিহ্ন নিয়ে খেলেছেন। আইসিসি অবশ্য সেটি নিষিদ্ধ করায় পরের ম্যাচে আর দেখা যায়নি।

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট লড়াইয়ের আগের সেই আবেদন এখন অনেকটাই ক্ষয়িষ্ণু। যেমনটা ছিল সুনীল গাভাস্কার-ইমরান খান, শচীন টেন্ডুলকার-ওয়াসিম আকরামদের যুগে। তবে পুলওয়ামায় হামলার পর ক্রিকেট মাঠে প্রথম দেখা হচ্ছে দুই দলের। ভারত-পাকিস্তান থেকে শত শত মাইল দূরে ম্যানচেস্টারের আকাশেও তাই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের লড়াইয়ের উত্তাপ ঠিকই টের পাওয়া যাচ্ছে! বিশ্বকাপ চাই না, এই ম্যাচে আমাদের জয় এনে দাও-দুই দলের অধিনায়কের কাছে সমর্থকদের এই আকুতি তো সেটাই বলছে।