এত বড় ভুল করেছেন বাংলাদেশ কোচ!

স্টিভ রোডস পড়তে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালের উইকেট। ছবি: এএফপি
স্টিভ রোডস পড়তে পারেননি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওভালের উইকেট। ছবি: এএফপি

আফসোসটা পিছু নিয়েছে সেই লন্ডন থেকে—ইশ্‌, নিউজিল্যান্ডের ম্যাচটা যদি জেতা যেত, আজ পয়েন্ট তালিকায় কত শক্ত অবস্থান থাকত বাংলাদেশ। এই পয়েন্ট খোয়ানোর জন্য সবার আগে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে মুশফিকুর রহিমকে। মুশফিক যদি সেদিন অমন ভুল না করতেন! কেন উইলিয়ামসনের রানআউট হাতছাড়া না করতেন।

ব্রিস্টলে এসে জানা গেল, শুধু মুশফিককে দায়ী করে লাভ নেই! বড় ভুল যে করে বসেছেন বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি উইকেট পড়তেই ভুল করেছেন। ওভালে নিজেদের আগের ম্যাচে বাংলাদেশ ৩৩০ রানের স্কোর পেয়েছে। রোডসের ধারণা ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও তাঁরা ৩৩০-৩৫০ রানের উইকেটে খেলছেন। তিনি বিষয়টি আরও নিশ্চিত হন বিবিসির ধারাভাষ্য শুনে। নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, ম্যাচ চলার সময় রোডসের কানে একটি ডিভাইস থাকে। এটি রেডিও। ২০১৯ বিশ্বকাপের প্রতিটি ভেন্যুতেই এই ডিভাইসে বিবিসির ধারাভাষ্য শোনার ব্যবস্থা আছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যখন রান তুলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে, ব্যাটসম্যানরা একটু ধীরলয়ে এগোনোর চেষ্টা করছেন, তখন রোডস বিবিসির ধারাভাষ্য শুনে মনে করেছেন, এ তো ৩৫০ রানের উইকেট!

সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটসম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন চালাতে। বাধ্য হয়ে ব্যাটসম্যানদের শট খেলতে হয়েছে। ঝুঁকি নিতে হয়েছে। উইকেটের চরিত্র বুঝতে না পেরে খেললে যা হয়—বাংলাদেশ ৩০.২ ওভারে ৩ উইকেটে ১৫১ থেকে ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রানে অলআউট। অথচ সেদিন দেখে-শুনে খেললে ২৬০-২৭০ রান অনায়াসে তোলা যায়। ম্যাচশেষে বাংলাদেশ এই ৩০-৪০ রানের আফসোসেই পুড়েছে। কাল টন্টনের সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিলেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁরা হেরেছেন উইকেট ঠিকঠাক না পড়তে পারায়, ‘একটা ম্যাচের হার বা জিত অনেকটাই নির্ভর করে উইকেট বুঝতে পারার ওপরে। আমার কাছে মনে হয়, নিউজিল্যান্ড ম্যাচে এটা আমরা মিস করেছি। আমরা যদি উইকেট ঠিকভাবে বুঝতে পারতাম, তাহলে হয়তো অনুধাবন করতে পারতাম ২৬০ বা ২৭০-ই ম্যাচ জয়ের জন্য যথেষ্ট রান ছিল। এখানকার (টন্টনে) উইকেটেও একই রকমের বিভ্রান্তি আছে। প্রথম দিকে শুনেছি ঘাস থাকতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছে শুরুর দিক থেকেই উইকেট ফ্ল্যাট থাকবে। আমি মনে করি, যারা উইকেট যত দ্রুত বুঝতে পারবে, তারাই লাভবান হবে। উইকেট বুঝতে পারলে মোটামুটি খেলেও অনেকটা এগিয়ে থাকা যায়।’

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে উইকেট বুঝতে না পারার কথা বললেন মাশরাফি। অথচ দলের প্রধান কোচ একজন ইংলিশ। রোডস উস্টারশায়ারে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ১১ বছর। ইংলিশ উইকেট, কন্ডিশন ভালো বুঝবেন বলেই তো বিশ্বকাপের এক বছর আগে বিসিবি তাঁকে দলের প্রধান কোচ হিসেবে এনেছে। সেই কোচ যখন উইকেট ঠিকঠাক পড়তে না পারেন, এটা কতটা কষ্টের? মাশরাফি অবশ্য কোচকে কাঠগড়ায় তুলতে রাজি নন। এখানে দায় দেখছেন ক্রিকেটারদেরও, ‘ব্যর্থতাটা খেলোয়াড়দেরও কম নয়। ম্যাচ হারলে তো অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়, এটা খুবই স্বাভাবিক। আসলে একটা ম্যাচ চলাকালে উইকেটের আচরণ সব সময়ই পরিবর্তন হতে থাকে। ওভালে যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আপনি ধরে রাখবেন ৩৫০ বা ৩৩০ রান হবে। এটা কিন্তু ব্যাটসম্যানদের মাথায় ঘুরতে থাকে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমাদের হিসাবটা একেবারে ঠিক ছিল। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও আমরা ঠিক পথেই এগোচ্ছিলাম। হয়তো বা সাকিব আউট না হলে স্কোরটা আরেকটু বড় হতো। মিঠুনও যখন ব্যাটিং করছিল, তখনো আমরা ২৭০ রান করার পথেই ছিলাম। আসলে উইকেটে যারা ব্যাটিং বা বোলিং করছে, উইকেটটা তাদের বুঝতে পারাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমনও হয় একই রকমের উইকেট বিভিন্ন রকম আচরণ করছে। তাই খেলোয়াড় যারা থাকবে, তাদেরকেই উইকেটটা বুঝতে হবে আগে। বাইরে থেকে একটা বার্তা যাওয়া বা বাইরে থেকে কিছু বলা বা ধারাভাষ্যকারদের কথা শুনে উইকেট বিশ্লেষণ করা এত সহজ নয়। ধারাভাষ্যকাররা তো বলবেনই উইকেট এ রকম নয় বা উইকেট ও রকম। আসলে খেলা যেভাবে চলবে ধারাভাষ্য সেভাবেই হবে। সব মিলিয়ে সবকিছু নির্ভর করে যারা মাঠে থাকে তাদের ওপর। তাই সিদ্ধান্তটা তাদেরই সবার আগে নিতে হবে।’

যেটা চলে গেছে তো গেছে। ওভাল এখন অতীত। আজ টন্টনের উইকেট বাংলাদেশ ঠিকঠাক পড়ে ভালো খেলতে পারলে হয়। কিন্তু কাল মাশরাফির কথায় মনে হলো বিভ্রম ছড়াচ্ছে সমারসেটের এই উইকেটও!