বাংলাদেশ পারেনি, পারবে?

ভালো শুরু করেও মাঝে বাজে বোলিং করেছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
ভালো শুরু করেও মাঝে বাজে বোলিং করেছে বাংলাদেশ। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৩২১ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দুর্দান্ত শুরু করেও মাঝে বাজে বোলিং করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা

যেটা ধারণা করা হয়েছিল, সেটাই দেখা গেল। সমারসেট কাউন্ট ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ছোট মাঠে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা তুলে মারছেন আর বিশাল বিশাল ছক্কা হচ্ছে! কবার যে মাঠের বাইরে চলে গেল বল! কবার যে প্যাভিলিয়নের ছাদে আটকে গেল বল! শুরুটা দারুণ, শেষটাও যতটা খারাপ হবে অনুমান করা গিয়েছিল, ততটা খারাপ নয়। কিন্তু ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় এতটাই বাজে বোলিং হলো, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাতেই তুলে ফেলল ৮ উইকেটে ৩২১ রানের বড় স্কোর।

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে পুরোনো প্রশ্নটা টন্টনেও উঠল, কেন টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক? কারণটা কন্ডিশন। মেঘলা আবহাওয়ায় হালকা সবুজাভ উইকেট দেখে মাশরাফি বিন মুর্তজা ভেবেছিলে তাঁর পেসবোলাররা এ ম্যাচে অন্তত প্রথম ঘণ্টায় উইকেট কাজে লাগাতে পারবেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারও কিন্তু বলেছেন, টস জিতলে তিনি আগে বোলিং নিতেন।

প্রথম ৫ ওভার বোলিং বাংলাদেশ খারাপও করেনি। ৫ ওভারে উইন্ডিজ তুলতে পেরেছে মাত্র ৮ রান। এর মধ্যে তারা হারিয়েছে ক্রিস গেইলকে। জ্যামাইকান ওপেনার এতটাই ভুগছিলেন যে ১৩ বল খেলে কোনো রানই তুলতে পারেননি, সাইফউদ্দিনের ভেতরে ঢোকা বলে ফিরেছেন কোনো রান না করেই। গেইলকে ফেরানো বাংলাদেশ প্রথম ১০ ওভারে খারাপ করেনি—১ উইকেটে ৩২ রান করতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

কিন্তু এই চাপটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেননি মাশরাফিরা। এভিন লুইস-শাই হোপের দ্বিতীয় উইকেট জুটি চাপটা জেঁকে বসতে দেয়নি। শাই হোপ এমন এক ব্যাটসম্যান—বাংলাদেশকে পেলে তাঁর জ্বলে উঠতেই হবে। বিশ্বকাপটা ভালো যাচ্ছিল না। বাংলাদেশকেই বেছে নিলেন ছন্দে ফিরতে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ১০ ওয়ানডে খেলেছেন তিনটিতেই ফিফটি পেরোনো ইনিংস খেলতে পারেননি। বাকি সাতটিতেই মাশরাফিদের ভুগিয়েছেন। টন্টনেও ব্যতিক্রম হয়নি। তবে বাংলাদেশের বোলারদের প্রাপ্তি, হোপকে অন্তত বঞ্চিত করেছেন সেঞ্চুরি থেকে, তাঁকে ফেরানো গেছে ৯৬ রানে।

হোপ অনেকক্ষণ উইকেট থাকলেও বাংলাদেশের বোলারদের বেশি জ্বালিয়েছেন আসলে লুইস। তিনিও হারানো ছন্দ ফিরে পেতে আজকের ম্যাচটা বেছে নিয়েছেন। ৬৭ বলে ৭০ রান করে সাকিবের বলে আউট হওয়ার আগে শুরুর চাপটা সরিয়ে দেওয়ার কাজটা দারুণভাবে করেছেন। বিপিএলের সৌজন্যে ভীষণ পরিচিত নিকোলাস পুরানকে একটু দ্রুত আউট করে সাকিব অবশ্য ক্যারিবীয়দের আবারও চাপে ফেলেছিলেন।

এবার লুইসের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন শিমরন হেটমায়ার। গায়ানিজ বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানকে ১২ রানেই ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। সাইফউদ্দিন রানআউট হাতছাড়া করায় হেটমায়ার সুযোগ পেলেন ২৫ বলে ফিফটি করার। সেটির চেয়ে বড় কথা, চতুর্থ উইকেটে হোপের সঙ্গে ৪৩ বলে ৮৩ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের সুরটাই যেন বদলে দিলেন।

এই জুটিটা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সুযোগ করে দিয়েছে বড় স্কোর গড়ে দিতে। মোস্তাফিজুর রহমানের মিডউইকেটে তামিম ইকবালের অসাধারণ এক ক্যাচ হয়ে হেটমায়ার ফিরেছেন ঠিক ৫০ করেই। হেটমায়ার ফিরতেই একটু ছন্দ হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক ওভারে দুই বলের মধ্যে ভয়ংকর আন্দ্রে রাসেলকেও ফিরিয়ে দেন মোস্তাফিজ।

ক্যারিবীয়দের হয়তো পরিকল্পনা ছিল টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডার ঝড়টা তুলে দেবেন। হাতে উইকেট রেখে স্লগ ওভারে সেটি কাজে লাগাবেন লোয়ার–মিডল অর্ডার। এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন জেসন হোল্ডার। হোল্ডার পরিকল্পনা ভালোই কাজে লাগিয়েছেন, ১৫ বলে করে গেছেন ৩৩ রান। ছোট্ট এ ঝড়টা কতটা যে কার্যকর, বাংলাদেশ পরে বুঝবে। অবশ্য হোল্ডারকে ২২ রানেই ফেরানো যেত যদি মাশরাফির বলে লং অনে তামিম ক্যাচটা ধরতে পারতেন। ইংল্যান্ডের ম্যাচের মতো অতটা বাজে না হলেও এ ম্যাচেও বাংলাদেশের ফিল্ডিং নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।

৪০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৪৩ রান তোলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ ১০ ওভারে তুলতে পেরেছে ৭৮ রান। বাংলাদেশের দর্শকদের আফসোস হতে পারে, ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোয় যদি আরেকটু কৃপণ হতে পারতেন মোস্তাফিজ-সাইফউদ্দিনরা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোরটা হয়তো ৩০০-এর নিচেই রাখা যেত।

টন্টনের এই ম্যাচ দেখতে ক্লাইভ লয়েড, অ্যান্ডি রবার্টস, জোয়েল গার্নার, কার্টলি অ্যামব্রোসদের মতো সব ক্যারিবীয় কিংবদন্তি এসেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সবাই চাইছেন ম্যাচটা যেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ জেতে। কথা বলতে না পারলেও এটা নির্দ্বিধায় বলা যায়, এক ক্যারিবীয় কিংবদন্তি চাইছেন জিতুক বাংলাদেশ—তিনি কোর্টনি ওয়ালশ, মাশরাফিদের বোলিং কোচ। কিন্তু তাঁর ছাত্ররা যে রানটা একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছেন।