কেউই আতঙ্কিত হইনি: সাকিব

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান
>৩২১ রান তাড়া করে ৫১ বল হাতে রেখেই জয়ের দেখা। ৯৯ বলে অপরাজিত ১২৪ রান করে সাকিব আল হাসানই সহজ করেছেন সেই জয়। ম্যাচ শেষে তাঁর সংবাদ সম্মেলনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো—

প্রশ্ন: ইনিংস বিরতিতে কেমন ছিল বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুম?

সাকিব আল হাসান: ড্রেসিংরুমে আমরা কেউই ভাবিনি কাজটা কঠিন হবে। সবাই স্বচ্ছন্দ ছিল, নির্ভার ছিল। চাপ বলতে কিছু ছিল না। আমার মনে হয় ওই আত্মবিশ্বাস আমাদের এগিয়ে দিয়েছে। এরপর ওপেনিং জুটি যেভাবে শুরু করল, আমরা তাতে আরও নির্ভার হয়ে গেলাম। কেউই আতঙ্কিত হইনি।

প্রশ্ন: এটাই সেরা ইনিংস কি না?

সাকিব: এটা সেরা কি না জানি না। তবে চেষ্টা করব এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। ব্যাটিং ভালো করছি। এটাই আসল কথা। এভাবেই খেলে যেতে চাই। সেমিফাইনালে যেতে হলে আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে।

প্রশ্ন: তিন উইকেট পড়ার পর যখন লিটন উইকেটে এলেন, তাঁকে যা বলেছিলেন সাকিব...

সাকিব: আমি লিটনকে বলি, ও থাকলে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও আমরা ম্যাচ জিততে পারব। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালো। ওর ব্যাটিং অন্য প্রান্তে দাঁড়িয়ে আমিও উপভোগ করেছি। ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে এটা সহজ নয়। যেভাবে সে চাপটা সামলাল, এককথায় অসাধারণ।

প্রশ্ন: ভালো খেলার ব্যাপারে সাকিব কীভাবে এতটা আত্মবিশ্বাসী?

সাকিব: আমি চাই প্রতিটি ম্যাচেই ভালো খেলতে। তবে এখনো চার ম্যাচ বাকি। আমরা সব ম্যাচই জিততে চাই। সে জন্য নির্ভার থাকতে হবে, সময়টা উপভোগ করতে হবে। আমি উইকেটে বল ভালো দেখতে পারছি, এটা গুরুত্বপূর্ণ। আমার ব্যাটিংয়ের মূল জিনিস বলতে পারেন এটাকে। অনেক সময় পাচ্ছি শট খেলার জন্য। হয়তো ভালো খেলার মধ্যে আছি বলেই এটা হচ্ছে। তবে এটা যে সব ম্যাচেই হবে, তা নয়। আমি চেষ্টা করব। আজ (গতকাল) যেমন আমি তাড়াহুড়া করিনি। বাজে বলে মেরেছি। মনে হয় না কোনো বাজে বল মিস হয়েছে, কিন্তু ভালো বলে মারিনি। আমার মনে হয় আমি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, সেটাই আমাকে সাহায্য করছে।

প্রশ্ন: নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পরের ম্যাচেও তো বাউন্স সামলাতে হবে?

সাকিব: আমরা কিন্তু এই চার ম্যাচে বিশ্বের সেরা ফাস্ট বোলারদেরই খেলেছি। প্রতিটি দলেই ১৪০ কিলোমিটারের চেয়ে জোরে বল করে এমন অন্তত দুজন বোলার ছিল। আমরা এটা নিয়ে চিন্তিত নই। মৌলিক জিনিসগুলো ঠিক রাখতে হবে।

প্রশ্ন: বোলারদের পারফরম্যান্স কেমন ছিল?

সাকিব: নতুন বলে আমাদের দুজন বোলারই ভালো বল করেছে। এটাই জয়ের চাবিকাঠি ছিল। স্পিনাররাও ভালো বল করেছে। আমি বলব, ফিল্ডাররা যদি ভালো ফিল্ডিং করে, ওয়ানডের জন্য আমাদের বোলিং আক্রমণ বেশ ভালো। সঙ্গে অবশ্য কখনো কখনো ভাগ্যেরও সাহায্য লাগে, যেটা আমরা এখন পাচ্ছি।

প্রশ্ন: ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিব এখন সেরা ফর্মে কি না?

সাকিব: রানের কথা বললে তো অবশ্যই সেরা ফর্মে। তবে ভালো অবস্থায় থেকেও অনেক সময় সম্ভব হয় না বড় কিছু করা। এখন হচ্ছে।

প্রশ্ন: এ রকম ম্যাচে মানসিকভাবে শক্ত থাকা কতটা জরুরি?

সাকিব: মানসিকভাবে শক্ত থাকা অনেক বেশি জরুরি। শারীরিক ফিটনেস হয়তো আমাদের সাহায্য করে, কিন্তু মন থেকে যদি চাই, আমাকে ভালো খেলতে হবে, জিততে হবে...এই জিনিসটা যদি বারবার চাই, বেশির ভাগ সময় সেটা হয়ে যায়।

প্রশ্ন: দুই বছর সেঞ্চুরি ছিল না। বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি, কেমন লাগছে?

সাকিব: ওই দুই বছর বেশির ভাগ সময় আমি পাঁচে ব্যাট করেছি। পাঁচে ব্যাট করলে চাইলেও অনেক সময় বড় ইনিংস খেলা যায় না। এখন তিনে ব্যাট করছি। আমার মনে হয় তিন নম্বরে আসাতেই ব্যাটিংয়ের জন্য সময় পাচ্ছি বেশি। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বড় ইনিংস খেলার।

প্রশ্ন: চাপের মধ্যে এমন জয় কি বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন ধাপে নিয়ে গেল?

সাকিব: অবশ্যই নতুন ধাপে নিয়ে গেছে। আমার মনে হয় আয়ারল্যান্ডের জয়গুলো আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। ওখানেও কখনো মনে হয়নি আমরা চাপ নিয়েছি। কোচিং স্টাফকে কৃতিত্ব দেওয়া উচিত। তাঁরা কখনোই ড্রেসিংরুমে আতঙ্ক ছড়ান না। চাপের মধ্যেও দেখা যায় কেউ রেডিও শুনছেন, গল্প করছেন। তখন আমাদেরও মনে হয় সব ঠিক আছে। কেউ টেনশন করছে না। আসলে আতঙ্ক একটা ছোঁয়াচে ব্যাপার।