একে অন্যকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন সাকিব-লিটন

১৮৯ রানের জুটি গড়ার পথে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। ছবি: শামসুল হক
১৮৯ রানের জুটি গড়ার পথে সাকিব আল হাসান ও লিটন দাস। ছবি: শামসুল হক
>সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ১৮৯ রানের জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সহজ জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষে একে অন্যকে ভাসিয়েছেন প্রশংসায়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৩২২ রান। অর্থাৎ জিততে হলে নিজেদের রান তাড়া করার রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে। কঠিন এক লক্ষ্য কী অবলীলায় পূরণ করে ফেলল দল! ৩২২ রানের লক্ষ্যে ৫১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের জয়—আপাতদৃষ্টিতে কাজটা অনেক সহজ মনে হলেও রান তাড়াটা মোটেও ফুলশয্যা ছিল না সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের জন্য।


চতুর্থ উইকেট জুটিতে ১৩৫ বল খেলে ১৮৯ রানের জুটি তাঁদের। দুজনেই ছিলেন শেষ অবধি। ৯৯ বলে ১২৪ রান করেছেন সাকিব আর ৬৯ বল খেলে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ৯৪ রান। বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতায় ভরপুর সাকিব এবার চতুর্থ বিশ্বকাপে খেলছেন। আর গতকালই বিশ্বকাপে অভিষিক্ত হয়েছেন লিটন। অভিজ্ঞতা ও তারুণ্যের রসায়নেই তৈরি হয়েছে রান তাড়া করার নতুন ইতিহাস।

এবারের ২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে সাকিবকে নিয়ে যতই বলা হবে, কম হতে পারে! বিশ্বকাপে অভিষিক্ত লিটনই বা কম গেলেন কোথায়! তাঁর সাহসী ব্যাটিং দেখে বোঝার উপায় ছিল না এক অভিষিক্ত ১৪০-১৪৫ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা বল সামলাচ্ছেন। অথচ লিটন যখন ক্রিজে এলেন, তাঁর মাথার ওপর বড় চাপ। ৩২২ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৩৩ রানে নেই ৩ উইকেট। তিনি ওপেনিং ব্যাটসম্যান, নেমেছেন পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করতে। লিটনের ওপর তখন পাহাড়সম চাপ। নিজের প্রথম ম্যাচেই নিজেকে প্রমাণ করার চাপ। সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়াটা তো ছিলই, অনভ্যস্ত ব্যাটিং পজিশনে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ারও একটা ব্যাপার ছিল।
সাকিব এমন অবস্থার মধ্যে পড়েছেন বহুবার। লিটনকে তাই দিকনির্দেশনাও দিয়ে গেছেন প্রতিনিয়ত। লিটন উইকেটে আসার পর সাকিবের প্রথম কথা কী ছিল দেখুন, সাকিব নিজেই বলেছেন সেটি, ‘উইকেটের অবস্থা আমি ভালোভাবে জানতাম। আমি তাকে বলেছিলাম আমরা যদি ক্রিজে থাকতে পারি, তিন নম্বর জুটিতেই জয় পাওয়া সম্ভব।’

লিটনের ব্যাটিংটাও নাকি বেশ উপভোগ করেছেন সাকিব, ‘১০-১৫ বল খেলার পর সে যেভাবে ব্যাটিং করছিল, আমি খুব উপভোগ করছিলাম। অপর প্রান্ত থেকে তাঁর ব্যাটিং দেখতে খুব ভালো লাগছিল। রান তাড়া করতে গিয়ে ওর জন্য একবারও আমাকে চাপে পড়তে হয়নি। তাঁর ইনিংসে এটাই সবচেয়ে বড় বিষয়। বিশ্বকাপে অভিষেক ম্যাচে এটা খুব কঠিন কাজ।’

সাকিব-লিটন বুঝতেই দেননি, রানের পাহাড়ের জবাব দিতে নেমেছেন। লক্ষ্যটা ৩০০ রানের ওপর চলে গেলেই সাধারণত মনস্তাত্ত্বিকভাবে পিছিয়ে যেতে হয়। ভড়কে যেতে হয়। সাকিব-লিটনের ব্যাটিং দেখে তা একবারও মনে হয়নি। কী নির্বিকার, ঠান্ডা মাথায় ক্যারিবীয় বোলারদের চালিয়ে গেলেন!

লিটন নিজে অবশ্য দুজনের বোঝাপড়ার ব্যাপারটিকেই বড় করে দেখেছেন, ‘যে যখন জুটিতে থাকি, সবাই চাই নিজে রান করি, সঙ্গের জনও রান করুক। দল যেভাবে উপকৃত হয়। তিনি রান পেলে যেমন আমার অনুভূতি ভালো লাগছিল। ফিফটি করে তিনি দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তিনিও জানেন আমি এমন জায়গায় অভ্যস্ত নই। আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জিং একটা মঞ্চ, তিনি অনেক আমাকে সাহস দিয়েছেন।’