সব ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিলেন আফগানিস্তান কোচ!

আফগানিস্তানের কোচ ফিল সিমন্স ও সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। এএফপি ফাইল ছবি
আফগানিস্তানের কোচ ফিল সিমন্স ও সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগান। এএফপি ফাইল ছবি
>বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের দুর্দশা যেন কাটছেই না। মাঠের পারফরম্যান্সে নেই লড়াইয়ের বারুদ, মাঠের বাইরেও একের পর এক বিতর্ক। এবার আরও বড় বিতর্ক উসকে দিলেন দলের কোচ ফিল সিমন্স। বিশ্বকাপ শেষে দলের দুরবস্থার পেছনের সব কারণ ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কোচ

আফগানিস্তান দলকে যেন শনির দশা ঘিরে ধরেছে। বিশ্বকাপে পাঁচ ম্যাচ খেলে এখনো জয়হীন, পয়েন্ট তালিকায় আছে সবার তলানিতে। মাঠে তো বটেই, মাঠের বাইরেও টালমাটাল সময় কাটছে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ খেলতে আসা দলটির। এরই মধ্যে বোর্ডের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে দল থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শাহজাদ। এবার আফগানিস্তানের কোচ ফিল সিমন্স হুমকি দিয়েছেন, বিশ্বকাপে দলের এমন দুরবস্থার নেপথ্যের সব কারণ ফাঁস করে দেবেন!

গতকাল বুধবার এক টুইটে এমন হুমকি দিয়েছেন সিমন্স। দেশটির সাবেক প্রধান নির্বাচক দৌলত আহমদজাইয়ের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এমন হুমকি দিয়েছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। টুইটে বেশি কিছু না বললেও সিমন্স ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিশ্বকাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন তিনি। এরপরই দলের এমন বেহাল অবস্থার পেছনের কারণ প্রকাশ্যে আনবেন বলে জানিয়েছেন এই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোচ।

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ঠিক আগে আগে আসগর আফগানকে সরিয়ে গুলবদিন নাইবকে অধিনায়ক বানানোয় অবাক হয়েছিলেন অনেকেই। সিমন্সের কথায় ইঙ্গিত, সাবেক প্রধান নির্বাচক আহমদজাই কলকাঠি নেড়েছিলেন বলেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল আফগান বোর্ড। বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময় আহমদজাই ছিলেন প্রধান নির্বাচক। পরে অবশ্য তাঁকে সেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই সিমন্স জানিয়েছিলেন, আসগরকে সরিয়ে গুলবদিনকে অধিনায়কত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তাঁকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। গতকাল টুইট করে বলেছেন, ‘আমি এখন একটি বিশ্বকাপের মাঝে আছি এবং দল যেন প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করে সেটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে আমি আফগানিস্তানের মানুষের কাছে বলে দেব, কীভাবে দৌলত আহমদজাই আমাদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে প্রভাব রেখেছিলেন। আসগর আফগানকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে তার প্রভাবের কথাও বলে দেব।’

এসব কথা সিমন্স হুট করেই বলেননি। গত ১১ জুন মিডিয়ার সামনে আফগানিস্তানের দল নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলেছিলেন দৌলত আহমদজাই। দল নির্বাচনের নীতিমালা পাল্টানো না হলে আফগানিস্তান কোনো বৈশ্বিক শিরোপা জিতবে না বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন আহমদজাই, ‘আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল না। আমরা সব সময়ই এক পেসার নিয়ে খেলতাম, সব বোঝা কেবল রশিদ খানের কাঁধেই চাপিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু ইংল্যান্ডে রশিদের জন্য উপযোগী কন্ডিশন নেই। ভালো বল করলে হয়তো আমরা জিততে পারি। কিন্তু যদি কেউ ভেবে থাকে এভাবে আমরা শিরোপা জিতে যাব, তাহলে তাদের উদ্দেশ্যে বলে রাখি, এই নীতিতে এগোলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেও এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের মতো শিরোপা জিতবে না আফগানিস্তান।’

আহমদজাই এমনটাও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দলের ভালোর জন্যই আসগর আফগান ও মোহাম্মদ নবীর মতো সিনিয়র ক্রিকেটারদের সরে যাওয়া উচিত, ‘ভবিষ্যতের জন্য আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আমরা একটি পালাবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে যাওয়ার সময় হয়েছে আমাদের। ১৮ বছর ধরে দেশকে সেবা দিয়েছে তারা, সে কারণে আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দলের কিছু সিনিয়র ক্রিকেটারের সরে দাঁড়ানোর সময় হয়েছে। তাদের বয়স হয়েছে, আর ক্রিকেট এমন একটি খেলা, যেখানে ফিটনেস দরকার।’

গত বছর আসগর আফগানের নেতৃত্বেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র মাস দু-এক আগে আচমকাই তাঁকে সরিয়ে গুলবদিন নাইবকে অধিনায়কত্ব দেয় আফগান বোর্ড। রশিদ খানকে বানানো হয় সহ-অধিনায়ক, আর টেস্ট অধিনায়ক বানানো হয় রহমত শাহকে। দলের অন্যতম সিনিয়র দুই ক্রিকেটার রশিদ খান ও মোহাম্মদ নবী তখনই এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছিলেন, বিশ্বকাপের আগে এমন সিদ্ধান্ত দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। প্রভাব কী রকম পড়েছে, সেটি তো বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের পারফরম্যান্সই বলে দিচ্ছে।