অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সমান সমান

মুশফিকুর রহিম। ছবি: শামসুল হক
মুশফিকুর রহিম। ছবি: শামসুল হক
>৫ উইকেটে ৩৮১ রান তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। রান তাড়া করে জেতার বিশ্বকাপ রেকর্ড করতে হবে বাংলাদেশকে। ৩৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২০৮/৪। ৩৫ ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়াও তুলেছিল ২০৮

কিছু ধরতে গিয়ে হাত ফসকে গেলে হাপিত্যেশ করতেই হয়, মাথা চুলকে ভাবতে হয়, ‘এই যা, কী হলো!’ ওই কী হলো নিয়েই বাংলাদেশ দলকে পড়ে থাকতে হলো পুরো ইনিংস। যিনি ১৮ বলে ১০ রান করে জীবন পেলেন, থামলেন আরও ১২৮ বল খেলে ১৫৬ রান করে। তাতেই অস্ট্রেলিয়া পেল রানের পাহাড়। সেই পাহাড়ে চড়ার প্রায় অসম্ভব চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের সামনে। ৩৫ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ২০৮/৪। মুশফিক ৫২ রানে অপরাজিত। সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ।

জুটিগুলো ভিত্তি গড়েও স্কাইস্ক্র্যাপার হয়ে উঠতে পারছে না। ওপেনিংয়ে ২৩ রানের জুটি ভাঙল সৌম্য রান আউটে কাটা পড়ায়। এরপর তামিম-সাকিবের ৭৯ রানের জুটি পথ দেখাচ্ছিল। কিন্তু ৪১ রান করে সাকিব আউট হয়ে ফিরেছেন। টানা ৫ ইনিংসে কমপক্ষে ৫০ তোলার পর আজ থামতে হলো সাকিবকে। তামিম-মুশফিকের জুটিটা ৪২ রান এনে দিল অনায়াসে। কিন্তু দারুণ খেলতে খেলতে বাজে একটা শটে তামিম প্লেডঅন হয়ে ফিরেছেন ৬২ রান করে। এরপর মুশফিক-লিটন জুটিও ভাঙল ৩১ রান যোগ করে। লম্বা একটা-দুটো জুটি তো দরকার। গত ম্যাচে যেমন হয়েছে।

আগের ম্যাচে ৫৩ বল হাতে রেখে ৩২২ রানের লক্ষ্য ছুঁয়েছে। ‘সেদিনের মতো ব্যাটিং করলেই তো হয়’ কথাটা বলা সহজ, করা কঠিন। তবে বাংলাদেশ আফসোস করতে পারে, আজ লক্ষ্যটা এত বড় হয়তো নাও হতে পারত। সাব্বির যদি ক্যাচটা ধরতেন!

মোসাদ্দেক হোসেনের চোটে দলে ঢুকেছেন সাব্বির। একজন বোলার কম নিয়েই তাই খেলেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্বকাপে দলের সফলতম বোলার সাইফউদ্দিনও নেই। আজ কাজটা কঠিনই ছিল বাংলাদেশের জন্য। তবু পঞ্চম ওভারে টস হারার দুঃখটা ভুলতে বসেছিল বাংলাদেশ। অস্বস্তি নিয়ে ব্যাট করা ডেভিড ওয়ার্নার কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে বল ভাসালেন। দলের সেরা ফিল্ডারদের একজন বলে গণ্য সাব্বির বুঝতেই পারলেন না বলের মতিগতি। হাত ফসকে গেল। তখনো বোঝা যায়নি, ম্যাচের লাগামটাও ফসকে যাচ্ছে এভাবেই।

১৮ বলে ১০ রান করা ওয়ার্নার সেই যে জীবন পেলেন আর থামলেন না। এরপরও যে তাঁকে বাংলাদেশ অস্বস্তি উপহার দেয়নি, তা নয়। বেশ কয়েকবারই মনে হয়েছে এই বুঝি ফিরে গেলেন। কিন্তু নিজের বাজে সময় পার করতেই যদি না পারবেন তবে আর ওয়ার্নার বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন বলে গণ্য হবেন কেন? অস্বস্তি কাটিয়ে ঠিকই আগ্রাসী রূপে ফিরেছেন। সাব্বিরের ফসকানো হাতের সুবাদে পাওয়া দ্বিতীয় জীবনে আরও ১২৮ বল খেলে ১৫৬ রান করে তবেই ফিরেছেন।

পঞ্চম ওভারে যার ফেরার কথা ছিল তিনি ফিরলেন ৪৫তম ওভারে। অস্ট্রেলিয়ার রানও ২৫ থেকে ৩১৩ হয়ে গেছে ততক্ষণে। সৌম্যের বলে আপারকাট করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে ফিরেছেন রুবেলের ক্যাচ হয়ে। অস্ট্রেলিয়ার অন্য ওপেনারও আউট হয়েছেন একই ফর্মুলায়। সৌম্যের প্রথম ওভারে থার্ডম্যান দিয়ে বল পাঠাতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে রুবেলের কাছে ধরা পড়েছেন ফিঞ্চ (৫৩)। ২১তম ওভারের সে ঘটনার আগেই ওয়ার্নার-ফিঞ্চের জুটি ১২১ রান এনে দিয়েছেন।

পার্ট টাইমার সৌম্যই আজ বাংলাদেশের মূল ভরসা হয়ে উঠলেন হঠাৎ। মাশরাফির হাতে আর কোনো উপায়ও ছিল না। স্লগ ওভারে বল করার মতো আত্মবিশ্বাসী যে কাউকেই মনে হচ্ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় উইকেট পতনেও সৌম্য-রুবেল জুটি। ৪৭তম ওভারে সৌম্যের প্রায় ইয়র্কার বল কোনোমতে খেলেই দৌড় দিয়েছিলেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। সে বল অনেক সময় নিয়ে বুঝে-শুনে থ্রো করে স্টাম্প ভেঙে দিয়েছেন রুবেল। আর আগের বলেই ছক্কা মেরে অস্ট্রেলিয়াকে সাড়ে তিন শ এনে দিয়েছেন। আগের ওভারেই রুবেলের বলে ২৫ রান নিয়ে এই বিশ্বকাপের সবচেয়ে খরচে ওভার উপহার দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল।

ম্যাক্সওয়েলের ১০ বলে ৩২ রানের ঝড়টা শেষ হয়ে স্বস্তি দিল বাংলাদেশকে। সৌম্যই যে আজ বাংলাদেশের একমাত্র শেষ ভরসা সেটা নিশ্চিত হলো ওই ওভারেই। ৭২ বলে ৮৯ রান তোলা উসমান খাজাও যখন মুশফিকের কাছে ক্যাচ দেওয়ার জন্য সৌম্যকেই বেছে নিলেন। ৫৮ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সৌম্যই আজকের সেরা বোলার। ৯ ওভারে ৮৩ রান দিয়েছেন সাব্বিরের মতোই আজই প্রথম সুযোগ পাওয়া রুবেল। সাকিবের চার ও মাশরাফিরও দুই ওভার অব্যবহৃত রয়ে গেছে।

ব্যাটিং লাইনআপ রদবদলের কারণেই হোক কিংবা অন্য কোনো কারণে মোস্তাফিজের একটি লো ফুলটস পেয়ে চার ছক্কা না মেরে উল্টো এলবিডব্লু হলেন স্টিভ স্মিথ। সে সঙ্গে রিভিউটাও নষ্ট করে গেলেন স্মিথ। ২ রানে ৩ উইকেট হারাল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ধস নামার আগেই যে দলটি সাড়ে তিন শ পেরিয়ে গেছে। ৪৯তম ওভারের শুরুতেই বৃষ্টি দেখা দিল। ওভারের ষষ্ঠ বলটা শেষ হতে হতে সে বৃষ্টির গতি বেড়ে খেলা থামিয়ে দিল। ৫ উইকেটে ৩৬৮ রানে বিরতি পেল অস্ট্রেলিয়া। তবে যেমন ঝমঝমিয়ে নেমেছিল, বৃষ্টি তার চেয়ে দ্রুততায় পালিয়েও গেল।

শেষের ওভারে আরও ১৩ রান যোগ করে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে দিল ৩৮২ রানের লক্ষ্য।