ক্রিকেট খেলছে মালি, রেকর্ড হলো এক হালি

উগান্ডার বিপক্ষে লজ্জার এই স্কোরকার্ড সঙ্গী হয়েছে মালি নারী ক্রিকেট দলের।
উগান্ডার বিপক্ষে লজ্জার এই স্কোরকার্ড সঙ্গী হয়েছে মালি নারী ক্রিকেট দলের।
>নারীদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুই ম্যাচে দুই জোড়া বিশ্ব রেকর্ড করেছে মালি। তবে রেকর্ডগুলো ভুলেই যেতে চাইবে আফ্রিকার দেশটি। সবগুলোই যে লজ্জার রেকর্ড!

রেকর্ড করার জন্য কি মালি নারী ক্রিকেট দলকেই বেছে নিয়েছে সবাই? অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। না হলে তাদের বিপক্ষেই পরপর দুই ম্যাচে চারটি বিশ্ব রেকর্ড হবে কেন!

তা কী সেই চার বিশ্ব রেকর্ড? নারী টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সবচেয়ে কম রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ডটা মালির আগের ম্যাচেই হয়েছিল। এবার হলো এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি রান হজম করার রেকর্ডও। ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই লজ্জার রেকর্ডের অংশীদার হলো আফ্রিকার এই দেশটি! এগুলো ছাড়াও আরও দুটি রেকর্ড হয়েছে দলটির বিপক্ষে। সবচেয়ে বেশি রানে হারার রেকর্ড ও সবচেয়ে বেশি বল বাকি রেখে হারার রেকর্ড, এগুলোও গেছে মালির দখলে।

রুয়ান্ডায় চলছে কিবুকা নারী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। এই টুর্নামেন্টেই পরপর দুই ম্যাচে এই চার রেকর্ড করেছে মালির নারী ক্রিকেট দল। গত পরশু স্বাগতিক রুয়ান্ডার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে মাত্র ৬ রানেই সবগুলো উইকেট হারিয়েছে মালি। মজার বিষয় হলো, এই ৬ রানের মধ্যে ৫ রানই এসেছে অতিরিক্ত থেকে! রানের খাতা খুলতে পেরেছেন মাত্র একজন ব্যাটার। নয়জন আউট হয়েছেন শূন্য রানে! সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ওপেনার মরিয়ম সামাকের ১ রান। নারীদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর চেয়ে কম রানে আউট হয়নি আর কোনো দল।

এই ৬ রান করতে অবশ্য ৯ ওভার ব্যাট করেছে মালি। রুয়ান্ডার বোলার জোসিয়ানে নিরানকুন্ডিনেজা কোনো রান খরচ না করেই ৩ উইকেট পেয়েছেন। সবচেয়ে ‘খরচে’ বোলার বিমেনিমানা দিয়েছেন ২ রান! তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪ বল খেলেই ১০ উইকেটের জয় পেয়েছে স্বাগতিকেরা।

এর আগে নারীদের টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন ১৪ রানের রেকর্ডটি ছিল চীনের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরব আমিরাতের ২০৩ রানের জবাবে মাত্র ১৪ রানে অলআউট হয়েছিল চীন। প্রায় ৫ মাসের মাথায় সেই রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে মালি। ম্যাচে অপর রেকর্ডটি হলো, ১১৬ বল বাকি থাকতেই হেরেছে দলটি। আর কোনো দল এত বল হাতে রেখে হারেনি টি-টোয়েন্টিতে।

যারা ভেবেছিলেন মালির দুর্দশা এক ম্যাচেই শেষ, তাদের ভুল ধারণা পরের ম্যাচেই ভেঙে দিয়েছে দলটি। পরের ম্যাচে তানজানিয়ার বিপক্ষে ১১ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। সে রান তাড়া করতে ৪ বল সময় নিয়েছে তানজানিয়া। ফলে ১১৬ বল হাতে রেখে জয়ের বিশ্ব রেকর্ডের পুনরাবৃত্তি হয়েছে কাল।

দুর্ভাগ্যের শেষ হয়নি আজও। উগান্ডার বিপক্ষে আজ পরের ম্যাচে আরও এক জোড়া বিশ্ব রেকর্ড করেছেন মালি! আগের রেকর্ডটি করেছিলেন ব্যাটাররা, এবার করেছেন বোলাররা। ২০ ওভারে মালির বোলাররা দিয়েছেন ৩১৪ রান! নারীদের টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে বেশি রান দেয়নি আর কোনো দল।

এই ৩১৪ রানের মধ্যে ৬১ রানই মালির বোলাররা দিয়েছেন অতিরিক্ত থেকে! কেবল নো বলই দিয়েছে ৩০টি! এ ছাড়া ২৮টি ওয়াইড ও বাই থেকে দিয়েছে আরও ৩ রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার খেলে ২ উইকেটে ৩১৪ করেছে উগান্ডা। অধিনায়ক রিতা মুসামালি করেছেন অপরাজিত ১০৩, আর ওপেনার প্রোসভোভিয়া আলাকো করেছেন ১১৬ রান।

মজার বিষয় আছে আরও। এই ৩০টি ওয়াইডের মধ্যে ১৬টিই দিয়েছেন একজন বোলার! ওমোউ সৌ নামের সেই বোলার ৩ ওভারে হজম করেছেন ৮২ রান! নারী টি-টোয়েন্টিতে আর কোনো বোলার এত রান দেননি। এর আগে ৪ ওভারে ৮১ রান দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সারমাদ আনোয়ার।

জবাব দিতে নেমে আগের ম্যাচের রেকর্ডও প্রায় ভেঙেই দিচ্ছিল মালির ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত সেটি না হলেও বিশ্ব রেকর্ড না করে ফেরেনি তারা। মাত্র ১০ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটি মালি হেরেছে ৩০৪ রানে। নারীদের টি-টোয়েন্টিতে এত বড় ব্যবধানে হারার নজির নেই আর কোনো দলের। এর আগে সর্বোচ্চ ১৮৯ রানে হেরেছিল চীনের নারী ক্রিকেট দল।

অবাক করা বিষয় হলো, নারীদের টি-টোয়েন্টিতে সর্বনিম্ন তিনটি স্কোরের সব কটিই মালির দখলে। তবে এর চেয়েও আশ্চর্যের বিষয় হলো, টানা তিন দিনে এই তিনটি স্কোর করেছে তারা!