আর ঝড় তুলবেন না 'এল নিনো'

আর ফুটবল নয়, বলে দিলেন তোরেস। ছবি : টুইটার
আর ফুটবল নয়, বলে দিলেন তোরেস। ছবি : টুইটার
>

অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, লিভারপুল, চেলসি, এসি মিলানের মতো ক্লাব মাতিয়ে ক্যারিয়ার-সায়াহ্নে যোগ দিয়েছিলেন জাপানি ক্লাব সাগান তোসুতে। সেখানেই গোল করতে পারছিলেন না তেমন। বুঝতে পেরেছিলেন, বুট জোড়া তুলে রাখার সময় এসেছে। সময় এসেছে নতুনদের স্থান ছেড়ে দেওয়ার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ১৮ বছর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী এই স্ট্রাইকার

ফুলস্লিভ জার্সির সঙ্গে মাথায় একটা হেডব্যান্ড, এক জোড়া নাইকি টোটাল নাইনটি বুট পরা সোনালীচুলো এক ছেলের গোল করার পরে উদ্বাহু হয়ে উল্লাস করা — কত প্রতিপক্ষের দুঃস্বপ্নের কারণ যে হয়েছে এই দৃশ্য, তার ইয়ত্তা নেই। ফর্মে থাকা ফার্নান্দো তোরেস ছিলেন এতটাই ভয়ংকর। এককালে মেসি, রোনালদোর সঙ্গে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে টেক্কা দিতেন এই তোরেস। পরে আর পারেননি, আস্তে আস্তে চলে গেছেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। সবশেষ খেলছিলেন জাপানি ক্লাব সাগান তোসুতে। সেখানে থাকা অবস্থাতেই ঘোষণা দিলেন, আর নয়। অবসর নেওয়ার সময় এসেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে অবসরের ঘোষণাই দিয়েছেন স্পেনের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী এই স্ট্রাইকার, 'একটা বিশেষ ঘোষণা দেওয়ার জন্য এসেছি আজ। ১৮ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার কাটানোর পর আমার মনে হয়েছে, অবসর নেওয়া উচিত এখন। আগামী রোববার, ২৩ জুন, জাপানের স্থানীয় সময় সকাল দশটায় আমি টোকিওতে একটা সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করতে যাচ্ছি। সেখানে আমি আমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে বিস্তারিত জানাব। দেখা হবে সেখানে।'

ফার্নান্দো তোরেস আলোচনায় আসেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে আলো ছড়িয়ে। অ্যাটলেটিকোর ঘরের ছেলে তোরেস ২০০১ সালে অভিষিক্ত হওয়ার পর অর্ধযুগ খেলেছেন, বিশ্বের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল স্ট্রাইকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিজেকে। স্পেনের হয়ে অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৯ ইউরোজয়ী এ স্ট্রাইকারকে নিয়েই ২০০৪-০৫ সাল থেকেই বড় বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে টানাটানি পড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি চেয়েছিল হোসে মরিনহোর চেলসি আর রাফায়েল বেনিতেজের লিভারপুল। চেলসি তখন রোমান আব্রামোভিচের পৃষ্ঠপোষকতায় ইংলিশ ফুটবলের আকাশে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছে। ওদিকে রাফায়েল বেনিতেজের অধীনে লিভারপুলও চ্যাম্পিয়নস লিগ, এফএ কাপের মতো প্রতিযোগিতা জিতে বেশ সফল একটা দল।

তোরেস বেছে নিলেন পরেরটা। অ্যানফিল্ডে নিজের প্রথম ম্যাচে সেই চেলসির বিপক্ষেই দুরূহ কোণে গোল করে জানিয়ে দিলেন, মাইকেল ওয়েন যাওয়ার পর থেকে দীর্ঘদিন ধরে স্ট্রাইকিং সমস্যায় ভোগা লিভারপুল তাদের সমাধান পেয়ে গেছে। পরের চার বছর লাল জার্সি গায়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগে ত্রাস সৃষ্টি করলেন। লিভারপুলের জার্সি গায়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভীতিজাগানিয়া স্ট্রাইকারই ছিলেন তিনি। ওদিকে স্পেনেরও তখন স্বর্ণযুগ চলছে। ক্যাসিয়াস, পুয়োল, পিকে, রামোস, ভিয়া, জাভি, ফ্যাব্রিগাস, ইনিয়েস্তা, বুসকেটসদের নিয়ে জিতলেন ইউরো আর বিশ্বকাপ। ইউরোর ফাইনালে তোরেসের গোলেই জার্মানিকে ১-০ গোলে হারায় স্পেন।

জাতীয় দলে শিরোপার পর শিরোপা জিতলেও, লিভারপুলের হয়ে শিরোপাখরায় ছিলেন ‘এল নিনো’ খ্যাত তোরেস। সে শিরোপা জেতার লোভে সেই চেলসিতেই যোগ দিলেন তিনি, হাজারো লিভারপুল সমর্থকদের চোখের শূল হয়ে। লিভারপুল সমর্থকদের ‘অভিশাপ’এর কারণেই কি না, সেই ভীতিজাগানিয়া তোরেসকে আর দেখে গেল না! চেলসি থেকে এসি মিলান, এসি মিলান থেকে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ থেকে সাগান তোসু—ফর্মের উন্নতি হলো না কোনো। চেলসিতে ট্রফি জিতলেন ঠিকই, গোলের সামনে গোল করতে যেন ভুলেই গেলেন, করতে থাকলেন হাস্যকর সব মিস। যেমন ধূমকেতুর মতো বিশ্বমঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন, একইভাবে হারিয়েও গেলেন।

তবে সমর্থকদের কাছে এখনো তোরেস মানেই ডি-বক্সের মধ্যে ক্ষিপ্রগতিতে ডিফেন্ডারকে ছিটকে ফেলে আলতো প্লেসিংয়ে গোল করা। যে তোরেস মেসি-রোনালদোর মতো অতিমানবকেও চোখ রাঙাতে পারতেন!