এ কোন ভারত, এ কোন আফগানিস্তান!

কোহলি আউট! আফগানিস্তানের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
কোহলি আউট! আফগানিস্তানের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স
আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৮ উইকেটে তুলেছে ২২৪ রান। আফগানরা পারবে বিশ্বকাপে অঘটন ঘটাতে?


আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা—অবহেলা ভরে এই ম্যাচের খবর না নিয়ে এখন স্কোরকার্ডে তাকালে আপনার চমকে ওঠারই কথা। কোথাও কোনো ভুল-টুল হলো নাকি, এমন একটা সংশয়ও উঁকি দিতে পারে আপনার মনে। যে আফগানিস্তান এই বিশ্বকাপে সবার হাতেই মার খাচ্ছে, তারাই আজ ভারতের বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপকে কী ভোগানটাই না ভোগাল। ৮ উইকেটে ২২৪ রানে ফুরিয়ে গেল ভারতের ৫০ ওভার।

সাউদাম্পটনে বিরাট কোহলি আর বাকি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কি ভিন্ন উইকেটে ব্যাট করলেন? পুরো ভারতীয় ইনিংস দেখে থাকলে এমনটাই মনে হওয়ার কথা। যে উইকেটে কোহলি বলের চেয়ে রান বেশি করলেন, সেখানে বাকিদের কী করুণ ব্যাটিং! বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করে ভারত এর চেয়ে কম রান সর্বশেষ তুলেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। পোর্ট অব স্পেনের সেই বিখ্যাত ম্যাচের ফলাফল নিশ্চয়ই সবার জানা।

ভারতীয়দের মধ্যে আজ মারার ইচ্ছাটাই যেন ছিল না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও স্পিন খেলতে পারে বলে সুনাম আছে যাদের, সেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপই আজ আফগান স্পিনের সামনে কী অসহায়! চার স্পিনার মুজিব উর রেহমান, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও রহমত শাহর ৩৪ ওভার থেকে ভারত তুলতে পেরেছে মাত্র ১১৯ রান! একের পর এক ডট বল খেলে চাপ তৈরি করেছে নিজেদের ওপর। শুধু যে রান আটকেছে তাই নয়, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ডটাও ভেঙেছেন স্পিনাররাই। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের প্রত্যেকেই উইকেট দিয়ে এসেছেন স্পিনারদের।

আফগান স্পিনারদের সামনে কতটা অসহায় দেখিয়েছে ভারতকে, তার আদর্শ উদাহরণ মহেন্দ্র সিং ধোনির ইনিংস। ৫২ বলে মাত্র ২৮ রান তুলতে পারা ধোনি রানের জন্য রীতিমত হাঁসফাঁস করতে করতে উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন রশিদ খানকে। শুধু ধোনি কেন, কোহলি বাদে সব ভারতীয় ব্যাটসম্যান আজ যা ব্যাটিং করেছেন, পারলে তা ভুলেই যেতে চাইবেন। লোকেশ রাহুল করেছেন ৫৩ বলে ৩০, বিজয় শংকর ৪১ বলে ২৯। কেদার যাদব ৫২ করেছেন বটে, তবে প্রতিটি রান তুলতে যে পরিমাণ সংগ্রাম করতে হয়েছে তাকে, সেটিই হয়ে থাকবে ভারতীয় ইনিংসের বিজ্ঞাপন। রশিদ খানের করা ৪৭তম ওভারে তো এক রানও বের করতে পারেননি কেদার।

তবে শুধু ভারতীয়দের ব্যর্থতার কথা বললে আফগান বোলারদের প্রতি কিছুটা অবিচারই করা হবে। চার স্পিনার আজ দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। মুজিব উর রেহমান তো ছিলেন এক কথায় অসাধারণ, পুরো ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ২৬ রানের খরচায় নিয়েছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৪০ করা রোহিত শর্মার উইকেট। মুজিবের তৈরি করা চাপ মাঝের ওভারগুলোতে ধরে রেখেছেন দলের অন্যতম সিনিয়র বোলার নবী। ৯ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৩৩ রান, তুলেছেন লোকেশ রাহুল ও বিরাট কোহলির মহামূল্যবান উইকেট দুটি। বাকিরা হাত খুলতে না পারলেও কোহলি ঠিকই এগোচ্ছিলেন নিজের মতো। ৬৩ বলে ৬৭ করা কোহলিকে ফিরিয়ে আফগানদের সবচেয়ে বড় উপহারটা দিয়েছেন নবীই।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বেদম মার খেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করা রশিদ আজ ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। উইকেট পেয়েছেন মাত্র ১টি, তবে ১০ ওভারে রানও দিয়েছেন মাত্র ৩৮। তিন মূল স্পিনারের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েই কি না, অনিয়মিত স্পিনার রহমত শাহও দারুণ বল করেছেন। লেগ স্পিনে ফিরিয়েছেন বিজয় শংকরকে, ৫ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ২২।

২০১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করতে নেমে এর চেয়ে কম রান ভারত সবশেষ তুলেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে, পোর্ট অব স্পেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে। মাশরাফি-রাজ্জাক-রফিকদের বোলিংয়ে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট হয়েছিল ভারত। তিন তরুণ তুর্কি তামিম-সাকিব-মুশফিকের ফিফটিতে ম্যাচটা ৫ উইকেটে জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ। পরে শ্রীলঙ্কার কাছেও হেরে সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। 

এখনো জয়ের মুখ না দেখা আফগানিস্তানের সামনে সুবর্ণ সুযোগ এ বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটিয়ে ফেলার। পারবে তারা?