মালিঙ্গা সবার জন্য অনুকরণীয়

মালিঙ্গার হাত ধরেই এসেছে শ্রীলঙ্কার স্মরণীয় জয়। ছবি: এএফপি
মালিঙ্গার হাত ধরেই এসেছে শ্রীলঙ্কার স্মরণীয় জয়। ছবি: এএফপি
মাত্র ২৩২ রানের পুঁজি নিয়েও দলকে এনে দিয়েছেন স্মরণীয় এক জয়। ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পাঁচ বছর পর পেয়েছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার। ম্যাচশেষে লাসিথ মালিঙ্গাকে তাই প্রশংসাবৃষ্টিতে ভাসালেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে

ম্যাচের আগে কেই-বা ভেবেছিল, ২০১৯ বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেবে নিজেদের হারিয়ে খোঁজা শ্রীলঙ্কা! প্রথম ইনিংসের শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে মাত্র ২৩২ রান জমা হওয়ার পর ইংল্যান্ডের জয়কে মনে হচ্ছিল আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। সেই লঙ্কানরাই কী দুর্দান্ত এক জয় পেল গতকাল! জয়ের নায়ক? এত বছর ধরে ওয়ানডেতে দেশটির বোলিং আক্রমণ সামলে আসছেন যিনি, সেই লাসিথ মালিঙ্গা।

বয়স হয়ে গেছে ৩৫, বোলিংয়ের ধারও আগের মতো নেই। কিন্তু দলের ভীষণ প্রয়োজনের সময় সেই মালিঙ্গাই জ্বলে উঠলেন প্রবল বিক্রমে। ধনঞ্জয়া ডি সিলভা সঙ্গ দিয়েছেন, তবে ৪ উইকেট নিয়ে মালিঙ্গাই শ্রীলঙ্কার জয়ের মূল কারিগর। ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তাঁর হাতেই। সর্বশেষ ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ২০১৪ সালে। পাঁচ বছর পর দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে আবারও হলেন ম্যাচসেরা। মাত্র চতুর্থ বোলার হিসেবে বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৫০ উইকেটও পেয়েছেন গতকালের ম্যাচেই।

ম্যাচ শেষে দিমুথ করুনারত্নের কণ্ঠেও তাই মালিঙ্গার প্রতি অগাধ প্রশংসা। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে লঙ্কান অধিনায়ক বলে গেলেন, এই বয়সেও মালিঙ্গা শ্রীলঙ্কার বাকি সকলের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। ৩৫ বছর বয়সেও যেভাবে চাপের মুখে পারফর্ম করেছেন, সেটিই মুগ্ধ করেছে করুনারত্নেকে, ‘সে জানে, ম্যাচের কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে। সে যাই করুক, আমরা জানি নিজের সেরাটাই দিচ্ছে।’

টুর্নামেন্ট চলাকালেই শাশুড়ির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে দেশে ফিরে এসেছিলেন মালিঙ্গা। এরপর ফিরে এসে যেভাবে পারফর্ম করেছেন, দলের বাকিদের জন্য সেটি উদাহরণ হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন লঙ্কান অধিনায়ক, ‘দেশে গিয়ে ফিরে আসার পর সে যেভাবে পারফর্ম করেছে, সেটি দলের বাকিদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মালিঙ্গা সেটাই করছে যা সে সবচেয়ে ভালো করে। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, দলের নবীন সদস্যদের জন্য সে উদাহরণ তৈরি করুক, এবং সে সেটাই করেছে। ধনঞ্জয়াও খুব ভালো বল করেছে। ওরা দুজনে মিলেই ম্যাচটা ঘুরিয়েছে। এই ধরনের পারফরম্যান্সগুলোই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়।’

বোলিংয়ে মালিঙ্গা জাদুর আগে ব্যাট হাতে দারুণ কার্যকরী ইনিংস খেলেছেন দলের আরেক সিনিয়র অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস। রান না পাওয়ায় কিছুটা চাপেই ছিলেন সাবেক এই অধিনায়ক। কাল দলের বাকিরা যখন উইকেটে এসে থিতু হতে পারছিলেন না, ম্যাথুস তখন এক প্রান্ত ধরে রেখে খেলেছেন অপরাজিত ৮৫ রানের ইনিংস। দলকে লড়াই করার মতো পুঁজি এনে দেওয়া ম্যাথুসের প্রশংসা করতেও ভোলেননি করুনারত্নে, ‘শুরুতে উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ভালোই মনে হয়েছিল। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, উইকেট তত ধীর হয়েছে। এই উইকেটে ২৮০-৩০০ করা সম্ভব ছিল না। আমরা জানতাম, ২৪০ রানই এই উইকেটে ভালো রান হবে। ম্যাথুস ভালো ফিনিশার, সে দারুণ ব্যাট করেছে। ম্যাচের পরিস্থিতিটা খুব ভালোভাবে পড়তে পেরেছে সে।’

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এই জয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন কিছুটা হলেও উজ্জ্বল হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কার। বাকি তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষ ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা। এ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত ক্যারিবীয় ও প্রোটিয়াদের যা পারফরম্যান্স, শ্রীলঙ্কার জয়ের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারত ম্যাচ বাদ দিলেও এই দুই ম্যাচে জিতলে সেমিফাইনালের দুয়ার খুলে যেতে পারে পয়েন্ট টেবিলের পাঁচে থাকা শ্রীলঙ্কার জন্য। তবে করুনারত্নে এখনই এত দূর না ভেবে ভাবছেন ম্যাচ ধরে ধরে, ‘আমরা এখনই সেমিফাইনাল নিয়ে ভাবছি না। আমরা ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাই। আপাতত পরের ম্যাচটা (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে) জেতার ব্যাপারেই ভাবছি আমরা।’