ব্রাফেটকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন না হোল্ডার

আউট হওয়ার হতাশায় মুষড়ে পড়লেন ব্রাফেট। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। ছবি: এএফপি
আউট হওয়ার হতাশায় মুষড়ে পড়লেন ব্রাফেট। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা। ছবি: এএফপি
>কাল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের দোর গড়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন কার্লোস ব্রাফেট। কিন্তু জয় হাতের মুঠোয় থাকতেও ব্রাফেট ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হওয়ায় হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এ নিয়ে সমালোচনা হলেও ক্যারিবীয় অধিনায়ক কিন্তু তাঁর সতীর্থের পাশেই দাঁড়াচ্ছেন

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০১৯ শুরুর আগে প্রতিটি দলের খেলার ধরন নিয়ে বেশ মজার রসিকতা হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। নিউজিল্যান্ড দল নিয়ে কথাটা এমন, রাস্তাঘাটে দেখা হলে তারা অত্যন্ত ভদ্র ও বন্ধুর মতো আচরণ করবে, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে আপনাকে শেষ করে দেবে। কিন্তু ম্যানচেস্টারে কাল নিউজিল্যান্ড খেলোয়াড়দের চিরায়ত এ চরিত্র থেকে বের করে এনেছিলেন কার্লোস ব্রাফেট।

হৃদয়ভঙ্গের যাতনায় যখন ব্রাফেটের দাঁড়ানোর শক্তি ছিল না, হাঁটু মুড়ে বসে ছিলেন উইকেটেই, কেন উইলিয়ামসন-রস টেলররা তখন জয়োল্লাস শিকেয় তুলে দাঁড়িয়েছেন ব্রাফেটের পাশে। এক অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবে অনূদিত করার খুব কাছে গিয়ে পুড়েছেন ব্রাফেট। কিউই খেলোয়াড়েরা ব্রাফেটের সেই পোড়া ঘায়ে দিয়েছেন সহমর্মিতার দাওয়াই। কাল নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের শেষ দৃশ্যটা সত্যিই ফ্রেমে বেঁধে রাখার মতো। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনেক সমর্থকই ম্যাচটা ভুলে যেতে চাইবেন শুধু তীরে এসে ওভাবে তরি ডুবিয়ে ফেলার জন্য।

২৯২ রান তাড়া করতে নেমে ম্যাচ থেকে বেশ আগেই ছিটকে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রাফেট ম্যাচটা ঘুরিয়েছেন একা ব্যাট হাতে। শেষ ৩ ওভারে যখন ৩৩ দরকার, উইকেটে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ জুটি ব্রাফেট-কটরেল। ৪৮তম ওভারে ম্যাট হেনরির কাছ থেকে ২৫ রান নিয়ে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার পথেই ছিলেন ব্রাফেট। সেই যে বেন স্টোকসকে ব্রাফেটের টানা চার ছক্কা, শিরোপা ওয়েস্ট ইন্ডিজের আর ধারাভাষ্যকক্ষে ইয়ান বিশপের কণ্ঠে কাঁপুনি—‘কার্লোস ব্রাফেট, রিমেম্বার দ্য নেম’!

ম্যানচেস্টার ব্রাফেট নিজের নামটা ঠিক ওভাবে আরও একবার মনে করিয়ে দেওয়ার পথেই ছিলেন। শেষ পর্যন্ত পারেননি ছক্কা মারতে গিয়ে। এতে স্বয়ং ক্যারিবীয় সমর্থকেরাই কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন ব্রাফেটকে। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল মাত্র ৮ রান। একটু দেখে খেললেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই অন্যতম সেরা ‘কামব্যাক’-এর কাহিনি লিখে ফেলতে পারতেন ব্রাফেট। কিন্তু ছক্কা মেরে ম্যাচ শেষ করতে চাওয়ার খেসারত গুনে আউট হয়েছেন ৪৯তম ওভারের শেষ বলে, লং অনে সীমানার খুব কাছ থেকে। তখনো গোটা একটি ওভার বাকি, জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের দরকার ছিল মাত্র ৬ রান।

সেঞ্চুরি (৮২ বলে ১০১) তুলে নেওয়া ব্রাফেট নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেই কি চরম হতাশায় হাঁটু মুড়ে বসে পড়েছিলেন?

জানা যায়নি। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার কিন্তু সতীর্থের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ম্যাচের ওই পর্যায়ে ব্রাফেটের আরেকটু বাস্তববাদী হওয়া উচিত ছিল কি না—এ প্রশ্নের জবাবে হোল্ডারের ব্যাখ্যা, ‘কার্লোস না হলে ইনিংস শেষ হওয়ার আগের ওভার পর্যন্ত আমরা যেতে পারতাম না। সে কিন্তু ওই মুহুর্তে দারুণ খেলেছে।’ আর ব্রাফেট নিজেও পরে ওই শট নিয়ে তেমন একটা বিচলিত হননি। বরং বুঝিয়ে দিয়েছেন, আরেকটা সুযোগ পেলে তিনি ওভাবে ছক্কা মেরেই জেতানোর চেষ্টা করতেন, ‘হারের জন্য সেঞ্চুরিটা অম্লমধুর লাগছে। তবে নিজেকে দোষ দিচ্ছি না। ওটা ছক্কা হওয়া উচিত ছিল, জেতা উচিত ছিল আমাদেরও।’

ওয়েস্ট ইন্ডিজ কাল জিততে পারলে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নটা আরেকটু সজীব হতো। কিন্তু ব্রাফেট ছক্কা মেরে জেতানোর সাধ মেটাতে গিয়ে আউট হওয়ায় বড় চোট পেল সেই স্বপ্ন। ৬ ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের সাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।