বার্সেলোনার বন্ধুদের পাঠানো নেইমারের মেসেজ ফাঁস

নেইমারের ফেরা! চোট নিয়ে দল থেকে ছিটকে গেলেও সাও পাওলোতে হঠাৎ সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন নেইমার। দানি আলভেজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল তখন। ছবি: এএফপি
নেইমারের ফেরা! চোট নিয়ে দল থেকে ছিটকে গেলেও সাও পাওলোতে হঠাৎ সতীর্থদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন নেইমার। দানি আলভেজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল তখন। ছবি: এএফপি
নেইমার বার্সেলোনায় ফিরে আসছেন—গুঞ্জনটা আরও ভারী হলো। এরই মধ্যে বার্সেলোনার বন্ধুদের নেইমার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে নিজের ফিরে আসার কথা জানিয়েছেন বলেই খবর

পরনে ব্রাজিলের ছাইরঙা ট্র্যাকস্যুট। কালো কানটুপির ওপর হেডফোন। হাতে ধরে রাখা আইফোনে কী যেন গভীর মনোযোগে টাইপ করছেন নেইমার। স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক স্পোর্ত তাদের প্রচ্ছদে এই ছবি ছেপেছে। উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে দিয়েছে শিরোনাম, যেটার কাছাকাছি বাংলা অনুবাদ: ‘চিন্তার কিছু নেই, আমি আসছি।’

বার্সেলোনায় থাকার সময়ই কাছের বন্ধুদের নিয়ে একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছিলেন মেসি, নেইমার, পিকে, সুয়ারেজরা। নেইমার পিএসজিতে চলে যাওয়ার পরও এই বন্ধুদের সঙ্গে যেমন সম্পর্ক খারাপ হয়নি, সেই গ্রুপ থেকে নেইমারকে কেউ সরিয়েও দেয়নি। সেখানে নিয়মিতই নাকি বার্তা চালাচালি হয়। সর্বশেষ সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপেই নেইমারের পাঠানো একটি মেসেজ ফাঁস হয়ে গেছে। যেখানে নেইমারের বার্সেলোনায় ফিরে আসার গুঞ্জন আরও শক্ত ভিত্তি পেল। চারদিকে চলা গুঞ্জনের প্রেক্ষিতেই নাকি নেইমার হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিজের ফিরে আসার কথা লিখেছেন।

নেইমারকে দলে ফেরানোর প্রক্রিয়াও বার্সেলোনা শুরু করে দিয়েছে। তাঁকে ফিরে পেতে সম্ভাব্য যেসব বাধা ভাবা হচ্ছিল, সেগুলো খুব সহজেই মিটে যাচ্ছে বলেই আভাস। এর পেছনে নেইমার নিজে বড় ভূমিকা রাখছেন। বার্সেলোনা ট্রান্সফার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে নেইমারকে তিনটি শর্ত দিয়েছিল। নেইমার তিন শর্তই মানতে রাজি।

প্রথম শর্ত, বেতন কমাতে হবে। পিএসজিতে নেইমার আকাশচুম্বী বেতন পান। বছরে প্রায় ৩৮ মিলিয়ন ইউরো। বার্সেলোনায় মেসির বেতন ৪০ মিলিয়ন ইউরো। প্রায় কাছাকাছি বেতনের দুই খেলোয়াড়ের বেতন দিতে গেলে বার্সেলোনার কোষাগারে ধুন্ধুমার লেগে যাবে। কারণ সুয়ারেজ-রাকিতিচ-পিকেদের বেতনও খুব বেশি কম নয়। বার্সেলোনা নেইমারকে ২৪ মিলিয়ন ইউরো বেতন প্রস্তাব করেছে বলে খবর। নেইমার তাতেও রাজি।

দ্বিতীয় শর্ত, নেইমার বার্সেলোনার বিরুদ্ধে বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে আদালতে মামলা করেছিলেন। সেই মামলা তুলে নিতে বলেছে বার্সেলোনা। বার্সেলোনাও নেইমারের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের মামলা করেছিল। দুই মামলা এখনো চলছে। দুই পক্ষ আপসরফার মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করে ফেলবে।

স্পোর্ত-এর প্রচ্ছদ। ছবি: ওয়েবসাইট
স্পোর্ত-এর প্রচ্ছদ। ছবি: ওয়েবসাইট

বার্সেলোনার তৃতীয় চাওয়া, নেইমার ফিরে আগার আকাঙ্ক্ষার কথা সরাসরি গণমাধ্যমে বলুন। যেন বিষয়টি আর গুঞ্জনের মধ্যে না থাকে। বার্সেলোনার বন্ধুদের পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা এই তৃতীয় শর্তের ‘মুখবন্ধ’ কি না, কে জানে! বার্সেলোনা অবশ্য তৃতীয় শর্ত জুড়ে দিয়েছে অন্য কারণে। পিএসজি নেইমারের বিনিময়ে ৩০০ মিলিয়ন ইউরো চায় বার্সেলোনার কাছে। নেইমারকে তারা কিনেইছিল ২০০ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে। যে অঙ্কটা এখনো বিশ্বরেকর্ড।

বার্সেলোনা নেইমারের পেছনে নগদ ১০০ মিলিয়ন ইউরোর বেশি খরচ করতে রাজি নয়। তবে পিএসজিকে তারা পুষিয়ে দিতে চায় এই পরিমাণ টাকার সঙ্গে বার্সেলোনার স্কোয়াড থেকে একজন বড় খেলোয়াড়কে দিয়ে দিয়ে। সেই খেলোয়াড়দের একজন হতে পারেন কুতিনহো, ডেম্বেলে বা রাকিতিচ। দর-কষাকষিতে এগিয়ে থাকার জন্যই পিএসজির অবস্থানকে আরও দুর্বল করতে চায় বার্সা। প্যারিসের ক্লাবটির অবশ্য এখনই ছেড়ে দে মা অবস্থা। নেইমার ক্লাব ছাড়তে মরিয়া এ আর গোপন কিছু নয়।

পিএসজিও তাঁকে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত। কিন্তু বার্সেলোনার কাছে দরটা চড়া রাখতে তারা আরও বড় কোনো ক্রেতার দরজাও তারা খোলা রাখতে চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত রিয়াল মাদ্রিদ নেইমারের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখায়নি। রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের পছন্দের খেলোয়াড় নেইমার। কিন্তু কোচ জিনেদিন জিদান নেইমারকে চান না।

নেইমারের বার্সেলোনায় ফেরার গুঞ্জন কদিন আগে প্রায় খবরে রূপ নিয়েছে পিএসজি সভাপতি নাসের আল-খেলাইফির একটি কথা থেকে। নিজের ‘ঘরে’ নেইমার ফিরে আসতে চান, এমন গুঞ্জনের প্রেক্ষিতে খেলাইফি পরিষ্কার করে বলেছেন, তিনি তারকা নন, পিএসজির জার্সির জন্য নিজেকে উজাড় করে দেবে এমন খেলোয়াড়দেরই চান। নেইমারের প্রসঙ্গ সরাসরি উল্লেখ করে খেলাইফি বলেছেন, ‘তাঁকে এখানে আসতে কেউ জোর করেনি। প্রজেক্টের কথা জেনেশুনেই সে এখানে এসেছিল।’