জয় না পেলেও পরের রাউন্ডের আশা আছে আর্জেন্টিনার?

মেসির দিকেই চেয়ে আছে আর্জেন্টিনা। হিসাবের মারপ্যাঁচে যেতে না চাইলে মেসির একটি জাদুকরী রাতের বড় দরকার আর্জেন্টিনার। ছবি: রয়টার্স
মেসির দিকেই চেয়ে আছে আর্জেন্টিনা। হিসাবের মারপ্যাঁচে যেতে না চাইলে মেসির একটি জাদুকরী রাতের বড় দরকার আর্জেন্টিনার। ছবি: রয়টার্স
প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে হার। দ্বিতীয় ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র, কোপা আমেরিকার কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার হিসাবকে নিজেরাই কঠিন বানিয়ে ফেলেছে আর্জেন্টিনা। কোয়ার্টারে যাওয়ার জন্য গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে কাতারের বিপক্ষে তাই শুধু নিজেরা খেললেও হবে না। গ্রুপ সঙ্গী এবং অন্য গ্রুপের দলগুলো কেমন করে সে হিসাবও মাথায় রাখতে হবে তাদের।

ইউরোপিয়ান ফুটবলে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের দাপট চলছে। লা লিগায় গোল করে ও করিয়ে মেসি এবারও বার্সেলোনাকে লিগ জিতিয়েছেন। রিয়াল বেতিসের হয়ে লো চেলসোও কম যাননি। ইংলিশ ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে সার্জিও আগুয়েরো-ওটামেন্ডিও চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। ইন্টার মিলানের লওতারো মার্টিনেজও ছিলেন দুর্দান্ত।

ক্লাবের জার্সি খুলে আর্জেন্টিনার জার্সি পরলেই এদের আর চেনা যাচ্ছে না। তাই আর্জেন্টিনার বাজে অবস্থাও কাটছেই না। ম্যাচ কীভাবে জিততে হয়, ভুলে গেছেন যেন লিওনেল মেসিরা। কোপা আমেরিকায় গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে কলম্বিয়ার সঙ্গে ২-০ গোলে হারা আর্জেন্টিনা গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র করেছে ১-১ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার জন্য অনেক হিসাব-নিকাশ তাই মাথায় রাখতে হচ্ছে মেসিদের।

গ্রুপ থেকে দুই ম্যাচ জিতে কলম্বিয়া এর মধ্যেই পরের রাউন্ডে নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করে ফেলেছে। গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান দখলের জন্য লড়াই চলছে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও কাতারের মধ্যে। শেষ ম্যাচে যদি আর্জেন্টিনা কাতারের কাছে হেরে যায়, তবে কোয়ার্টার ফাইনালের আশা বাদ দিয়ে দেশে যাওয়ার প্লেন ধরতে হবে মেসিদের।

এবার কোপা আমেরিকায় তিন গ্রুপের ১২ দলের মধ্যে ৮ দল পরের রাউন্ডে যেতে পারবে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ তো যাবেই, সঙ্গে তিন গ্রুপের তিন তৃতীয় স্থান দখলকারী দলের মধ্যে যে দুই দলের অবস্থা ভালো থাকবে, সে দুই দলও উঠবে পরবর্তী রাউন্ডে। এ জন্যই আর্জেন্টিনার আশা বেঁচে আছে এখনো।

তাই কাতারকে হারাতেই হবে এবং একই সঙ্গে আশা করতে হবে ফালকাও-হামেসদের কলম্বিয়া যেন প্যারাগুয়েকে হারিয়ে দেয়। তাহলেই গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে পারবেন মেসিরা। সে ক্ষেত্রে কলম্বিয়ার পয়েন্ট হয়ে যাবে ৯, আর্জেন্টিনার ৪ ও প্যারাগুয়ের ২। আর্জেন্টিনা-কাতার ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতলে ও কলম্বিয়া-প্যারাগুয়ে ম্যাচ যদি ড্র হয়, সে ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনার পয়েন্ট হবে ৪, কলম্বিয়ার ৭ ও প্যারাগুয়ের ৩। তখনো গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে পরের রাউন্ডে যেতে পারবেন মেসিরা।

আর্জেন্টিনা-কাতার ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতলে ও কলম্বিয়া-প্যারাগুয়ে ম্যাচে প্যারাগুয়ে জিতলেও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে আর্জেন্টিনা। সে ক্ষেত্রে চার পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তিন নম্বর স্থানে থাকবে তারা। আর আশা করতে হবে গ্রুপ ‘সি’র তৃতীয় স্থান দখলকারী কোনো দলের পয়েন্ট যেন চার না হয়। পয়েন্ট চার হলেও গোল ব্যবধান যেন আর্জেন্টিনার চেয়ে কম থাকে। এরই মধ্যে গ্রুপ ‘এ’ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপের তৃতীয় স্থানে রয়েছে পেরু (গোল ব্যবধান -৩)। আর গ্রুপ ‘সি’র একটি ম্যাচ ডে এখনো বাকি। তবে বর্তমান অবস্থায় জাপান ১ পয়েন্ট নিয়ে সেই গ্রুপের তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। জাপানের গোল ব্যবধান ঋণাত্মক ৪। আর্জেন্টিনার যেহেতু ঋণাত্মক ২, সে ক্ষেত্রে অন্তত পেরুর চেয়ে এগিয়ে থাকবে তারা।

তার মানে কি আর্জেন্টিনা আজ না জিতলে কোনো আশা নেই? যদি কাতারের বিপক্ষে ড্র করে বসে, তখন? সে ক্ষেত্রে আশা করতে হবে প্যারাগুয়ে যেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে হারে। এবং প্যারাগুয়ে যত গোল করবে, আর্জেন্টিনা যেন তার চেয়ে দুটি গোল বেশি করে। অর্থাৎ প্যারাগুয়ে যদি ৩-১ গোলে হারে সে ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা ড্র করলেও যেন সেটা ৩-৩ হয়। সে ক্ষেত্রে আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও কাতার তিন দলের পয়েন্ট হবে ২।

এতে গোল ব্যবধানে কাতার দ্বিতীয় স্থান নিয়ে নেবে। টুর্নামেন্টের শুরুতে শীর্ষ দল হিসেবে পটে থাকায় আর্জেন্টিনা প্যারাগুয়েকে টপকে তৃতীয় হবে। এর পর আশায় থাকতে হবে, যেন গ্রুপ ‘সি’ তে জাপান-ইকুয়েডর ম্যাচটা যেকোনো ব্যবধানেই হোক সমতায় শেষ হোক। সে ক্ষেত্রে জাপানের পয়েন্ট দুই হলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকবে তারা। আর দ্বিতীয় সেরা তৃতীয় দল হিসেবে আর্জেন্টিনা চলে যাবে।

আপাতত নিজেরা যেন কাতারকে হারাতে পারে , এই আশাই করতে হবে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। তাহলেই গ্রুপের দ্বিতীয় বা সেরা তিনের একটি হয়ে চলে যাবে আর্জেন্টিনা। এত কঠিন হিসাব-নিকাশের মধ্য দিয়ে যেতে হবে না তাদের।