খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোয়ার্টারে আর্জেন্টিনা

প্রথম গোলের পর মার্টিনেজ-আগুয়েরোর উল্লাস। ছবি: এএফপি
প্রথম গোলের পর মার্টিনেজ-আগুয়েরোর উল্লাস। ছবি: এএফপি

পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য কাতারের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে জয়ের কোনো বিকল্প ছিল না। তবে আর্জেন্টিনা যেভাবে খেলছিল, তাতে কাতারকে তারা আদৌ হারাতে পারবে কি না, সে প্রশ্ন ছিলই। আপাতত সব সংশয়কে উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে কোয়ার্টারে উঠল আর্জেন্টিনা। কাতারকে ২-০ গোলে হারিয়েছে তারা।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করে আর্জেন্টিনা। দুই মিনিটের মধ্যেই দুই স্ট্রাইকার লওতারো মার্টিনেজ আর লিওনেল মেসি দুটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তবে তৃতীয় সুযোগটা আর হেলায় হারাননি মার্টিনেজ। কাতারের রক্ষণভাগের শিশুতোষ এক ভুলের সুবিধা নিয়ে দলকে এগিয়ে দেন ইন্টার মিলানের তরুণ এই স্ট্রাইকার। গোলের পর আর্জেন্টিনা আরও জেঁকে বসবে কি, উল্টো আর্জেন্টিনার দেখাদেখি কাতারও বেশ কিছু আক্রমণ করে বসে। একটা ভালো উইঙ্গার আর স্ট্রাইকারের ঘাটতি কাতারকে ভুগিয়েছে বেশ। গোলমুখের সামনে কাতারের খেলোয়াড়দের কার্যকারিতা ভালো হলে প্রথমার্ধেই মোটামুটি দুটি গোল হয়ে যেত কাতারের। টানা দুই ম্যাচ রক্ষণভাগের মাঝখানে নিকোলাস ওটামেন্ডি ও জার্মান পেজ্জেলাকে খেলানোর পর এই ম্যাচে ওটামেন্ডির সঙ্গে পেজ্জেলার জায়গায় টটেনহামের হুয়ান ফয়থকে নামিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি। ফয়থ বেশ ভালো খেলেছেন। তবে বেশ কবার আর্জেন্টিনাকে সমস্যায় ফেলে দিচ্ছিলেন ওটামেন্ডি। গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানির দৃঢ়তায় কোনো অঘটন ঘটেনি। প্রথমার্ধের শেষ দিকে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে থেকে মারা কাতারের এক ফ্রি কিক রুখে দিয়ে নিজের জাত চেনান আরমানি।

পুরো ম্যাচে মুড়িমুড়কির মতো সুযোগ নষ্ট করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। অন্তত প্রথমার্ধেই তাঁর হ্যাটট্রিক হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। গোলমুখে হাস্যকর কিছু ভুল করে ম্যাচটা অযথা কঠিন বানিয়েছেন নিজেদের জন্য। ওদিকে কোনো আদর্শ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার না থাকার খেসারত দিয়েছে আর্জেন্টিনা। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে যে জিওভান্নি ল সেলসোকে খেলানো হয়েছিল, তিনি আদতে আরও আক্রমণাত্মক ফুটবলার। কিন্তু ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার কারণে তিনি গতকাল তাঁর প্রতিভার বিকাশ করতে পারেননি তেমন, উল্টো একটা হলুদ কার্ড খেয়ে কোয়ার্টারে নিজের খেলার সম্ভাবনা খুইয়েছেন।

অধিনায়ক লিওনেল মেসি গোটা ম্যাচে ভালো খেললেও আক্রমণভাগে যথারীতি কোনো একজন যোগ্য সহকারীর সঙ্গে ওয়ান-টু পাস খেলে আক্রমণে যেতে না পারার কারণে নিষ্ক্রিয় থেকেছেন। এই হতাশাতেই কি না, ৭২ মিনিটে মেসি নিজেই হাস্যকর এক ভুল করে বসেন। বাঁ প্রান্ত থেকে মাটিঘেঁষা এক ক্রস মেসির পায়ে এলে মেসি বলটা গোলমুখে না মেরে আকাশে তুলে দেন। এ ধরনের গোল যেখানে মেসির মতো খেলোয়াড় দশবার সুযোগে নয়বারই করতে পারবেন হয়তো!

লিওনেল স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনার মূল একাদশে যে মেসি ছাড়া কেউই নিশ্চিত নন, সেটা খুব সম্ভবত ম্যাচের শেষ মাথায় এসে মনে পড়ে আগুয়েরোর। এত এত সুযোগ নষ্ট করার পর একটা গোল করতে না পারলে পরের ম্যাচে খেলতে পারবেন না, এই আশঙ্কায় আগুয়েরো ম্যাচের শেষ দিকে এসে মিডফিল্ড থেকে মোটামুটি একক প্রচেষ্টায় এক গোল করে দলের ব্যবধান বাড়ান। আর্জেন্টিনার জয়ের জন্য এই দুটি গোলই যথেষ্ট ছিল। ম্যাচের শেষ দিকে লওতারো মার্টিনেজের জায়গায় পাওলো দিবালাকে নামান আর্জেন্টিনা কোচ। দিবালা নামার সঙ্গে সঙ্গে মাঠের দর্শকদের গর্জন প্রমাণ করে, মূল একাদশে মেসির সঙ্গে দিবালাকে খেলতে দেখার জন্য দর্শকেরা কতটা অধীর! মাঠে দিবালা যতক্ষণ ছিলেন, বেশ ভালো খেলেছেন তিনি। আক্রমণভাগে মেসি ও আগুয়েরোর সঙ্গে তাঁর রসায়ন দেখে আর্জেন্টিনা–সমর্থকেরা আশায় বুক বাঁধতেই পারেন!

আগামী শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে খেলতে নামবেন মেসিরা।