ফিরছেন সাইফউদ্দিন-মোসাদ্দেক

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিরছেন সাইফউদ্দিন–মোসাদ্দেক দুজনই।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে ফিরছেন সাইফউদ্দিন–মোসাদ্দেক দুজনই।

বাউন্ডারির পাশে দাঁড়িয়ে আইসিসির প্রতিনিধিকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। মাঠকে পেছনে রেখে দাঁড়ানোয় খেয়ালই করেননি মাঝমাঠ থেকে সাব্বির রহমানের পুল শট ধেয়ে আসছে সেদিকে। গ্যালারির চেয়ারে আছড়ে পড়ে বলটা এসে লাগল মিরাজের মাথায়। সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে বসে গেলেন তিনি।

রোজবোলে কিছু সময়ের জন্য আতঙ্ক ছড়াল। খেলোয়াড়েরা দৌড়ে গেলেন, ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে সেদিকে ছুটলেন ফিজিও তিহান চন্দ্রমোহনও। একটু পরই মিরাজ উঠে দাঁড়িয়ে ফিজিওর সঙ্গে হেঁটে চলে গেলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। জানা গেল গুরুতর কোনো চোট পাননি মিরাজ। ব্যাটিংও নাকি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁকে সেটি করতে দেওয়া হয়নি। কাল এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মিরাজের আজ খেলা নিয়েও কোনো সংশয় ছিল না।

ছোট্ট এ ঘটনাটি ছাড়া বাংলাদেশ দলের অনুশীলন হলো নির্বিঘ্নেই। আকাশ দিনভর মেঘলা থাকলেও বৃষ্টি হয়নি। মিরাজের খেলা নিয়েও সৃষ্টি হয়নি সংশয়, বরং পিঠের ব্যথা কাটিয়ে আজ সম্ভবত রুবেল হোসেনের জায়গায় দলে ফিরছেন আগের ম্যাচে না খেলা পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। মোসাদ্দেক হোসেনের কাঁধের চোটও ভালো হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। সাব্বিরের জায়গায় তিনিও দলে ফিরবেন আজ। গত ম্যাচের দলে আজ পরিবর্তনের সম্ভাবনা এ দুটিই।

পরশু স্পিন দিয়েই ভারতের ব্যাটসম্যানদের ২২৪ রানে আটকে রেখেছিল আফগানিস্তান দল। বাংলাদেশের বিপক্ষেও নিশ্চিতভাবেই রশিদ খানের নেতৃত্বে সেই অস্ত্রটাই ব্যবহার করতে চাইবে তারা রোজ বোলের উইকেটে। স্পিনশক্তিতে বাংলাদেশও কম যাবে না নিশ্চয়ই! সাকিব আল হাসান, মিরাজের সঙ্গে যোগ হচ্ছেন আরেক অফ স্পিনার মোসাদ্দেক। সঙ্গে পেস আক্রমণের কাছ থেকেও আশাটা কম নয়। কাল অনুশীলনে মোস্তাফিজ, সাইফউদ্দিনদের ইয়র্কার বলে বেশ মনোযোগী মনে হলো। কোচ স্টিভ রোডস অবশ্য জানালেন, তা বিশেষ কোনো পরিকল্পনা থেকে নয়। অনুশীলনকে প্রাণবন্ত করে তুলতেই ওটা করা, ‘আমরা বোলারদের সঙ্গে মজা করছিলাম। নইলে অনুশীলন ম্যাড়মেড়ে হয়ে যায়। ব্যাটসম্যানদের বুটে বল করার কথা বলে ওদের চ্যালেঞ্জ করছিলাম। আমার আর সাইফউদ্দিনের মধ্যে চ্যালেঞ্জের খেলা চলছিল। সঙ্গে একটু চাপ দিচ্ছিলাম আরকি! চাপের মুখে কেমন করে, সেটাই দেখতে চাচ্ছিলাম।’

রোজবোলের মাঠটা বেশ বড়। যে উইকেটে খেলা হবে, সেটিও মাঠের ঠিক মাঝখানে। টন্টনের বাউন্ডারি অনেক ছোট থাকলেও এখানে উল্টো। পরশু অনুশীলনে এসে ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচের কিছু অংশ দেখেছেন রোডস, সেই দেখা থেকে তাঁর মন্তব্য, ‘উইকেট কিছুটা মন্থর ছিল। বল টার্ন করেছে কিছুটা। বাউন্ডারি বেশ বড়। দেখে মনে হচ্ছিল আমরা অনেকটা ১৯৮০ সালে ফিরে যাচ্ছি। এখানে ছয় ও চার কম হবে। এক-দুই রান নিতে হবে অনেক। চেষ্টা করতে হবে এক-দুই রানকে তিন রানে পরিণত করতে।’ কোচের আশা, মাঠের আকৃতি বোলারদের সাহায্যই করবে।

২০১৯ বিশ্বকাপে এখনো কাউকে ধাক্কা দিতে পারেনি আফগানিস্তান। তবে রোডসের দৃষ্টিতে এই দলটা ‘ক্রিকেটের নতুন সূর্য’। আফগানিস্তানকে ভয় না পেলেও তাদের প্রতি সমীহ আছে বাংলাদেশের। রোডস বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ গত ২০ বছরে দারুণ উন্নতি করেছে। আমি মনে করি, এই দুই দেশেই ক্রিকেটের উত্থান হচ্ছে। বাংলাদেশ তো অনেক দূর এসেছে। আফগানিস্তানও দেশে এত সমস্যার পরও এগিয়ে যাচ্ছে। দুই দেশের মানুষের ক্রিকেটের প্রতি সমর্থনও চোখে পড়ার মতো।’

বাংলাদেশ পিছিয়ে একটা জায়গাতেই। আফগানদের যেমন আছেন রশিদ খান, লাল-সবুজ শিবিরে নেই তেমন কোনো লেগ স্পিনার। শুরু থেকেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে যেটাকে বলা হচ্ছে একমাত্র অপূর্ণতা। রোজবোলের গ্যালারির ‘শেন ওয়ার্ন স্ট্যান্ড’ দেখে সেটি অনুভূত হতে পারে আরও বেশি করে। তবে যা নেই, তা নিয়ে আক্ষেপ করলেন না রোডস, ‘বাংলাদেশে লেগ স্পিনারের স্বল্পতা আছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। শেন ওয়ার্ন এখানে কাউন্টি খেলেছে। খুব ভালোও খেলেছে সে। তবে ও বিখ্যাত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলে।’