যে কারণে এই স্কোর ২৬২-র চেয়েও বড়

আফগানিস্তান কঠিন চ্যালেঞ্জ পেল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ছবি: প্রথম আলো
আফগানিস্তান কঠিন চ্যালেঞ্জ পেল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ছবি: প্রথম আলো
>আফগানিস্তানকে ২৬৩ রানের লক্ষ্য দিয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্যটা কি কম হয়ে গেল? কী বলছে রেকর্ড?

হ্যাম্পশায়ার বোলে আজ দিনের শুরুটা যেন আফগানিস্তানের চাওয়া মতোই হলো। মেঘলা আবহাওয়ায় আফগানরা টস জিতল, বোলিং নিল। এবং শুরু থেকেই আফগান স্পিন-ত্রয়ী বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখল। কিন্তু শেষটাও তাঁদের প্রত্যাশা মতো হবে কি না, ইনিংস বিরতিতে বলা কঠিন। বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ২৬২ রানের স্কোর পেয়েছে। ইনিংস বিরতিতে মোসাদ্দেক বলে গেলেন, এই স্কোরই অনেক কঠিন। সেটা গত ম্যাচে আফগান-ভারতের ‘লো স্কোরিং’ রোমাঞ্চ আছে বলে নয়। এ মাঠে এই স্কোর আসলেই অনেক। বাংলাদেশের জেতাই তো উচিত।

টি-টোয়েন্টির জমানায় এমনিতেই সীমানাপ্রান্ত ছোট হয়ে আসছে। কিন্তু সাউদাম্পটনের এই মাঠ তুলনামূলকভাবে বেশ বড়। তা ছাড়া এই মাঠে স্পিনও ধরে খুব। এ কারণে এ মাঠে ২৩০-এর বেশি তাড়া করে জেতার রেকর্ড মাত্র ৪টি। কোনোটাই নিকট অতীতে নয়। আজ খেলাও হচ্ছে পুরোনো উইকেটে। এই উইকেটে শুধু রশীদ-মুজিবরা ভোগাবেন, সাকিব-মিরাজরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন, তা তো নয়।

আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণের কথা মাথায় রেখেই উদ্বোধনী জুটিতে একটু পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। ডান হাতি-বাঁহাতি সমন্বয় করতে সৌম্য সরকারকে চারে নামিয়ে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে পাঠানো হয় লিটন দাসকে। ২৩ রানের বেশি অবশ্য টেকেনি জুটিটা। মুজিব উর রেহমানকে শর্ট কাভার দিয়ে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন লিটন। হাসমতউল্লাহ শহীদির ক্যাচটা মাটি ছুঁয়েছে কি না, এটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের দর্শকদের কড়া প্রতিক্রিয়া বলছে, টিভি আম্পায়ার আলিম দারের সিদ্ধান্তটা তাঁদের পছন্দ হয়নি।

তাঁদের পছন্দ হওয়ার কথা নয় তামিম ইকবালের আউটের ধরনও। আগের দুই ম্যাচের মতো আজও সেট হয়ে হয়ে গিয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের জুটিও গড়লেন। কিন্তু ইনিংসটার ভালো সমাপ্তি দিতে পারেননি তামিম। নবীকে আড়াআড়ি কাট করতে গিয়ে লাইন মিস করেছেন, ৩৬ রানে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ড্রেসিংরুমে। ঠিক পরের ওভারের রশিদ খানের বলে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসানও। বুদ্ধিদীপ্ত এক রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়া বাঁহাতি অলরাউন্ডার এই ম্যাচেও রাঙানোর আভাস দিয়েছিলেন। ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা সাকিব টুর্নামেন্টের তৃতীয় ফিফটি পেলেন। পূর্ণ করলেন ক্রিকেট বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান। আফগান স্পিনারদের জুজু কাটাতে সঙ্গে পেলেন মুশফিকুর রহিমকে।

ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফলতম জুটি সাকিব-মুশফিক আজও চেষ্টা করেছেন তৃতীয় উইকেটে জুটিটা লম্বা করতে। কিন্তু সেটি ৬১ রানের বেশি হয়নি। মুজিবের স্কিড করা বলটা লাগে প্যাডে, সাকিব শুধু শুধু রিভিউ নষ্ট করতে চাননি। এলবিডব্লু হয়ে ফিরেছেন ৫১ রান করে। আফগান স্পিনারাদের দুর্দান্ত জবাব দেওয়ার লক্ষ্য নেমেছিলেন, সেটি না হওয়ায় ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে সাকিবকে যারপরনাই হতাশ দেখাল।

সাকিবের অপূর্ণতা পূরণে লক্ষ্যে এগোলেন মুশফিক। ট্রেন্ট ব্রিজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াকু সেঞ্চুরির পর হ্যাম্পশায়ার বোলেও অসাধারণ ‘মুশি’। পানি পানের বিরতিতে টিভিতে ক্যানবেরায় ২০১৫ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচটার হাইলাইটস দেখা গেল, যেটিতে মুশফিকের কাছ থেকে এসেছিল ৭১ রানের এক লড়াকু ইনিংস। আজ তাঁর ব্যাট থেকে এল ৮৩ রানের আরেকটা লড়াকু ইনিংস।

দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণ কোন কৌশলে খেললে সফল হওয়া যায়, মুশফিকের আজকের ইনিংসের ভিডিওটা ইউটিউবে দেখে নিতে পারে নবিশ ক্রিকেটাররা। বেশির ভাগ শট খেলেছেন সোজা ব্যাটে। ঝুঁকি নেননি লম্বা সময়। ২৫ ওভারের পর বাংলাদেশের একটা বাউন্ডারি পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৩ বল। সেই অপেক্ষাটা দূর করেছেন মুশফিকই। ৮৩ রানের ৬১ এসেছে দৌড়ে। কম বাউন্ডারি মেরেছেন মানে এই নয় যে তাঁর স্ট্রাইকরেট অনুজ্জ্বল। মুশফিকের ৯৫.৪০ স্ট্রাইক রেট বলে দিচ্ছে, কীভাবে রানিং বিটুইন দ্য উইকেটে তৎপর থাকতে হয়। প্রিয় সুইপ শট তূণ থেকে বের করেছেন অনেক পরে। একবার তো রশিদ খানের লেগ ব্রেকের বিপরীতে রিভার্স সুইপে দেখার মতো বাউন্ডারিও মারলেন।

শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক হোসেনের সঙ্গে মুশফিকের মাঝারি দুটি জুটি যদি আরেকটু বড় হতো, হয়তো বাংলাদেশের স্কোরটা আরও হৃষ্টপুষ্ট হতো। অবশ্য এই উইকেটে ভারতই যেখানে আফগান স্পিনারদের কাছে খাবি খেয়েছে, বাংলাদেশের স্কোরটা সেখানে মন্দ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই আকাশের মেঘলা ভাবটা কেটে গেছে। এই রোদেলা আবহাওয়ায় চ্যালেঞ্জ যত কঠিনই হোক, মুশফিকের লড়াকু ইনিংস নিশ্চয়ই বৃথা যেতে দেবেন না বাংলাদেশের বোলাররা।