বাজে আম্পায়ারিং চলছেই, এবার ৭ বলে ওভার!

দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ক্রিস মরিসের করা ওভারে ভুল করেছেন মাঠের দুই আম্পায়ার। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার ক্রিস মরিসের করা ওভারে ভুল করেছেন মাঠের দুই আম্পায়ার। ছবি: এএফপি
>বিশ্বকাপে এবার দুর্বল আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। পরশু পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ৭ বলে ওভার দিয়েছেন মাঠের দুই আম্পায়ার

ক্রিকেট বিশ্বকাপে এবার বাজে আম্পায়ারিং নিন্দা কুড়োচ্ছে টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই। অস্ট্রেলিয়া-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে আম্পায়ারের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল ‘নো বল’। কাল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচেও বিতর্ক হয়েছে আম্পায়ারদের ‘সফট সিগন্যাল’ নিয়ে। আর পরশু লর্ডসে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে তো ওভার হয়েছে ৭ বলে!

পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে মাঠের দুই আম্পায়ার ছিলেন শ্রীলঙ্কার কুমার ধর্মসেনা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের জোয়েল উইলসন। পাকিস্তানের ইনিংসে ১৪তম ওভারে ৭টি বৈধ ডেলিভারিতে ওভার দেওয়ার এ ঘটনা ঘটে। তখন মাঠের দুই আম্পায়ারই বলের হিসেব রাখতে ভুল করেন। ভাগ্য ভালো, ওই ওভারের সপ্তম বলে কোনো রান হয়নি কিংবা উইকেট পড়েনি। তা না হলে বিতর্ক আরও বাড়ত।

মাঠের আম্পায়ার ওভারের বলসংখ্যা গুনতে ভুল করলে আসলে কিছুই করার নেই। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন ইংলিশ ক্রিকেটের খ্যাতনামা স্কোরার জেমস এমারসন, ‘রোববার (পরশু) আমি লর্ডসে ছিলাম না। তবে ঘটনাটা শুনেছি। ১৭.৫ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, আম্পায়ারেরা গুনতে ভুল করলে যেভাবে ওভার হবে সেটাই থেকে যাবে। অতিরিক্ত বলে রান কিংবা উইকেট পড়লে সেটি আসলে খেলার ভাগ্য।’

এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে ‘বাজে আম্পায়ারিং’কে দায়ী করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার কার্লোস ব্রাফেট। সে ম্যাচে ভুলটা করেছিলেন মাঠের আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে পঞ্চম ওভারে ক্রিস গেইলের বিপক্ষে তিন-তিনবার আঙুল তুলেছিলেন গ্যাফানি। গেইল দুবার বেঁচেছেন রিভিউ নিয়ে। তৃতীয়বার ভর করল দুর্ভাগ্য। রিভিউ নিলেও ‘আম্পায়ারস কল’ নামের বিষয়টি তাঁকে বাঁচতে দেয়নি।

কিন্তু ভুলটা ধরা পড়ে একটু পরই। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল গেইল যে বলে আউট হয়েছেন,তা করার আগে মিচেল স্টার্ক করেছেন বিশাল এক নো বল। ক্রিজের অনেক বাইরে পা ফেললেও গ্যাফানির চোখ এড়িয়ে গেছে তা। যার মাশুল দিতে হয় গেইল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। ফ্রি-হিট পাওয়ার কথা যেখানে, সেখানে গেইলকে ফিরতে হয় ড্রেসিং রুমে।

পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে বিতর্কের খোরাক জুগিয়েছে সফট সিগন্যাল। ক্রিস মরিসের বল সজোরে পুল করেছিলেন হারিস সোহেল। ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচটা তালুবন্দী করেই ট্রেডমার্ক দৌড় শুরু করেছিলেন ইমরান তাহির। তাহির একপ্রকার নিশ্চিতই ছিলেন, ক্যাচটা যথার্থভাবে ধরেছেন। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানোর আগে মাঠের আম্পায়ার সফট সিগন্যাল দিলেন নট আউট। বারবার রিপ্লে দেখেও নিশ্চিত হতে পারেননি থার্ড আম্পায়ার। ফলে মাঠের আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেই নট আউট দেওয়া হয় হারিসকে।

কাল বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচেও দেখা গেছে একই দৃশ্য। আফগান অফ স্পিনারদের সামলাতে বাঁহাতি সৌম্য সরকারের বদলে ওপেনিংয়ে পাঠানো হয়েছিল ডানহাতি লিটন দাসকে। সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা প্রমাণ করে ভালো শুরুও করেছিলেন লিটন। দুই চারে পৌঁছে গিয়েছিলেন ১৬ রানে। কিন্তু পঞ্চম ওভারে মুজিব উর রেহমানের বলে ঘটল বিপত্তি। বলটা হালকা ড্রাইভ করেছিলেন, শর্ট কভারে হাশমতউল্লাহ শহীদী সেটি ধরেই আউটের আবেদন করেন। লিটন নিশ্চিত ছিলেন না আউট হয়েছে কি না, দুই আম্পায়ারও পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য তাই থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানো হলো, কিন্তু তার আগে সফট সিগন্যাল দেওয়া হলো আউট। বারবার রিপ্লে দেখেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না থার্ড আম্পায়ার আলিম দার। শেষ পর্যন্ত মাঠের আম্পায়ারদের সফট সিগন্যালের ওপর ভিত্তি করে লিটনকে আউটই দিয়ে দিলেন আম্পায়ার।

কিন্তু সিদ্ধান্তটি নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে যথেষ্ট। বারবার রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, শহীদী তালুবন্দী করার সময় বলটা কিছু সময়ের জন্য মাটি ছুঁয়েছিল। থার্ড আম্পায়ার বারবার জুম করে দেখেও নিশ্চিত হতে পারছিলেন না কিছুতেই। এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত সাধারণত ব্যাটসম্যানদের পক্ষেই আসে। কিন্তু লিটনের ক্ষেত্রে হলো উল্টোটা। এবং সেটির পেছনে দায়ী মাঠের আম্পায়ারদের সফট সিগন্যাল।