তাঁরা বিশ্বকাপের এমওএম

সাকিব আল হাসান, এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো
সাকিব আল হাসান, এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিনবার ম্যাচসেরা হয়েছেন। ছবি: প্রথম আলো

তিনে তিন! সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের তিন জয়ে তিনবারই হলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচ—ম্যাচের সেরা খেলোয়াড়। তাঁর খেলা আগের তিন বিশ্বকাপে একবারও ম্যাচসেরা হননি। ওই বিশ্বকাপগুলোয় যদি অন্তত দুবার ম্যাচসেরা হতেন, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরা হয়েছেন—এমন ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জায়গা করে নিতেন। সাকিবের সামনে সুযোগ আছে এই মহান কীর্তিমানদের ছোঁয়ার।

১. শচীন টেন্ডুলকার: (৯ বার)
তালিকার প্রথমে তাঁর নামটা আদতে তেমন বিস্ময় জাগায় না। সবচেয়ে বেশি রান, সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এই ভারতীয় ক্রিকেটার বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব ম্যাচ অ্যাওয়ার্ডেরও মালিক। ৪৫ ম্যাচের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন নয়বার। যার শুরুটা ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে। শুরুর মতো শেষটাও পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১১ সালের সেমিফাইনালে।

২. গ্লেন ম্যাকগ্রা: (৬ বার)
বিশ্বকাপ ইতিহাসের সফলতম বোলার আছেন টেন্ডুলকারের পরেই। ১৯৯৬ সালে নিজের প্রথম বিশ্বকাপে মাত্র ৬ উইকেট পাওয়া ম্যাকগ্রা নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন পরের বিশ্বকাপেই। প্রথমবার ম্যান অব দ্য ম্যাচও হয়েছিলেন সে বিশ্বকাপেই, উইন্ডিজের বিপক্ষে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে। পরের ২৭ ম্যাচে উইকেট তুলে নিয়েছিলেন আরও ৫৫টি, ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছিলেন আরও ৫ বার।

৩. ল্যান্স ক্লুজনার: (৫ বার)
১৯৯৯ বিশ্বকাপের চিত্রনাট্য যেন লেখা হয়েছিল তাঁর জন্যই। সে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা যে ছয় ম্যাচে জয়ী হয়েছিল, তার চারটিতেই ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। ব্যাটে-বলে দলকে প্রায় একা হাতে বয়ে চলা ক্লুজনারের কপালে টুর্নামেন্ট-সেরার স্বীকৃতিও জুটেছিল সেবার৷ পরের বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন আরও একবার, কেনিয়ার বিপক্ষে। সব মিলিয়ে ১৪ ম্যাচের বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে পাঁচবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জয়, বিশ্বকাপটা তো আসলে ক্লুজনারেরই।

৪. এবি ডি ভিলিয়ার্স: (৫ বার)
ইনিও দক্ষিণ আফ্রিকান, ম্যান অব দ্য ম্যাচের স্বীকৃতও পেয়েছিলেন পাঁচবার। তবে ল্যান্স ক্লুজনারের মতো কোনো নির্দিষ্ট আসরকে নিজের করে নিতে পারেননি। নিজের খেলা তিন বিশ্বকাপের প্রতিটিতেই অন্তত এক ম্যাচে হলেও ম্যাচসেরার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। ক্রিকেটের এই সুপারম্যান রান করেছিলেন সব দলের বিপক্ষেই, তবে উইন্ডিজকে সামনে পেলে যেন বিশেষভাবে জ্বলে উঠত তাঁর ব্যাট, পাঁচবারের তিনবারই যে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন উইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে।

৫. ভিভ রিচার্ডস: (৫ বার)
ওয়ানডে ক্রিকেটের প্রথম মেগাস্টার তিনি। অথচ এই মানুষটি কিনা প্রথম বিশ্বকাপ শেষ করেছিলেন ম্যাচ সেরার ট্রফি ছাড়াই! পঁচাত্তর পেরিয়ে সেই ট্রফি এসেছিল ১৯৭৯ বিশ্বকাপে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে হাল ধরে। তাঁর সেদিনের ১৩৮ তো পরে জায়গা করে নিয়েছে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ইনিংসগুলোর মধ্যে। প্রথমের মতো শেষবার ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দেওয়া ইনিংসটিও মহাকাব্যিক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৯৮৭ বিশ্বকাপের ১৮১ রান। এটি ছিল তখনকার ক্রিকেটের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। মাঝে ১৯৮৩ বিশ্বকাপে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন আরও তিন ম্যাচে, সর্বমোট পাঁচবার।

শচীন টেন্ডুলকার, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ নয়বার ম্যাচসেরা হয়েছেন। ফাইল ছবি
শচীন টেন্ডুলকার, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ নয়বার ম্যাচসেরা হয়েছেন। ফাইল ছবি

৬. গ্রাহাম গুচ: (৫ বার)
‘ইশ্‌, দক্ষিণ আফ্রিকায় সেই নিষিদ্ধ সফরে না গেলে!’ ক্যারিয়ার নিয়ে গ্রাহাম গুচের এই আক্ষেপ নিশ্চয়ই এখনো আছে। তিন বছরের সে নিষেধাজ্ঞায় মিস করেছিলেন ১৯৮৩ বিশ্বকাপ। নিষেধাজ্ঞায় পড়ার আগের বিশ্বকাপে দুবার, নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিরে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে তিনবার, বিশ্বকাপে ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার জিতেছিলেন পাঁচবার। নিষেধাজ্ঞা না জুটলে এ সংখ্যা আরও বাড়তেই পারত।

৭. মার্ক ওয়াহ: (৫ বার)
১৯৯৬ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিন ম্যাচে, কেনিয়া, ভারত আর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। দল জয়ী হয়েছিল প্রতি ম্যাচেই, মার্ক ওয়াহও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন সব ম্যাচেই। এর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবং পরে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচসেরার ট্রফি জিতে ট্রফির সংখ্যাটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন পাঁচে।

৮. সনাৎ জয়াসুরিয়া: (৫ বার)
ওয়ানডে ক্যারিয়ারে যিনি ম্যাচসেরা হয়েছিলেন ৪৬ বার, তাঁর জন্য বিশ্বকাপের ৩৮ ম্যাচে পাঁচবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জয় মাত্রই। এই পাঁচবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ ট্রফি জয়ের একটি এসেছিল ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৭ ছক্কায় সেঞ্চুরি করা ম্যাচের দিনে।