ওপেনিং জুটিতেই বদলে যাওয়া অস্ট্রেলিয়া

ফিঞ্চ-ওয়ার্নারে চড়ে আরেকটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়া। ছবি : টুইটার
ফিঞ্চ-ওয়ার্নারে চড়ে আরেকটা বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখছে অস্ট্রেলিয়া। ছবি : টুইটার
>

প্রথম দল হিসেবে এই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিজেদের জায়গা পাকা করেছে অস্ট্রেলিয়া। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে দলটিকে নিয়ে খুব একটা উচ্চাশা ছিল না, বিশ্বকাপ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে তাদের ভোজবাজির মতো পালটে যাওয়ার পেছনে কারণ কী?

বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ৩০ মে থেকে। এর আগের এক বছরের কথা চিন্তা করুন। অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা কেমন ছিল?

ইংল্যান্ডে গিয়ে তারা হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। ফাইনাল জেতা হয়নি পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ত্রিদেশীয় সিরিজে। পরে সেই পাকিস্তানের কাছেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছেন ফিঞ্চরা। ভারতের সঙ্গে কোনোরকমে ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও সিরিজ হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ফিঞ্চ-স্টার্কদের পক্ষে আদৌ এই বিশ্বকাপ জেতা সম্ভব কি না, প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। বিশ্বকাপের ফেবারিটদের তালিকায় অধিকাংশ মানুষই অস্ট্রেলিয়াকে রাখতে চাননি। সে জায়গায় আধিপত্য ছিল ভারত, ইংল্যান্ডের।

কিন্তু বিশ্বকাপ ২০১৯ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে সেই অস্ট্রেলিয়াই দেখিয়ে দিয়েছে, ফর্ম যতই খারাপ হোক না কেন, বিশ্বকাপ আসলেই তারা কোন এক জাদুমন্ত্রে যেন জেগে ওঠে। বিশ্বকাপের আগে অ্যারন ফিঞ্চ ছিলেন ফর্মহীন, সেই ফিঞ্চই বিশ্বকাপ বদলে যাওয়া ক্রিকেটার। আসরের অন্যতম সেরা অধিনায়ক তিনি। ফিঞ্চকে দেখেই যেন গোটা দল গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে। ৭ ম্যাচে ৬ জয় নিয়ে সবার আগে সেমিতে উঠে গেছে তারা। বাকি তিনটি স্থানের জন্য লড়ছে ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের মতো দলগুলো।

কিন্তু পুনরুজ্জীবিত অস্ট্রেলিয়ার পেছনে সবচেয়ে ভূমিকা কার? বোলিংয়ে মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স ও জেসন বেহরেনডর্ফরা দুর্দান্ত খেললেও ব্যাটসম্যানদের ভূমিকাই আজ অস্ট্রেলিয়াকে এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ও ডেভিড ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি। ফিঞ্চের ব্যাপারে তো বলাই হলো, তর্কযোগ্যভাবে জীবনের সেরা ফর্মে আছেন ডানহাতি এই তারকা ব্যাটসম্যান। সঙ্গে পেয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। বল টেম্পারিং কাণ্ডে এক বছর নিষিদ্ধ থাকার পর যে ওয়ার্নার আবারও অস্ট্রেলিয়ার মানুষদের চোখে নায়ক হওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এক ম্যাচে ফিঞ্চ সেঞ্চুরি করছেন, তো পরের ম্যাচেই পালটা সেঞ্চুরি করে জবাব দিচ্ছেন ওয়ার্নার। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের তালিকায় প্রথম দুই স্থানে আছেন এই দুই তারকা। ওয়ার্নারের রান ৫০০, ফিঞ্চের ৪৯৬!

এই দুই ওপেনারের ব্যাটে চড়ে অস্ট্রেলিয়া প্রায় প্রতি ম্যাচেই শক্ত ভিত্তি পাচ্ছে। অন্যান্য দেশের ওপেনারদের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার ওপেনাররা যোজন যোজন এগিয়ে। পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই বোঝা যায় ব্যাপারটা। সাত ম্যাচ খেলে ফিঞ্চ-ওয়ার্নারের ওপেনিং জুটি অস্ট্রেলিয়াকে দিয়েছে ৬৪২ রান, প্রতি ম্যাচে গড়ে ১০৭ রান করে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভারত আছে অনেক পেছনে। প্রথমে শিখর ধাওয়ান ও পরে লোকেশ রাহুলকে নিয়ে রোহিত শর্মা পাঁচ ম্যাচে তুলতে পেরেছেন ২৮৩ রান। এর পরেই আছে হাশিম আমলা, কুইন্টন ডি ককের দক্ষিণ আফ্রিকা। সাত ম্যাচে তাদের ওপেনিং জুটির সংগ্রহ ২৮১ রান। দিমুথ করুনারত্নে ও কুশল পেরেরা মিলে শ্রীলঙ্কাকে ছয় ম্যাচে এনে দিয়েছেন ২২৪ রান।

তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছয়ে। সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে নিয়ে তামিম সাত ম্যাচে তুলেছেন ২১২ রান। বাংলাদেশের চেয়ে এক রান বেশি তুলেছেন আফগানিস্তানের হজরতউল্লাহ জাজাই, নূর আলী জাদরান ও মোহাম্মদ শাহজাদ। বাংলাদেশের চেয়ে এক রান কম তুলেছেন ছয় ম্যাচ খেলা ফখর জামান ও ইমাম-উল-হক। তালিকার সবচেয়ে নিচের দুটি স্থান দখল করেছে নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছয় ম্যাচে ১৮৪ রান তুলেছেন কিউই তারকা মার্টিন গাপটিল ও কলিন মানরো। ওদিকে এভিন লুইস আর শাই হোপকে নিয়ে ক্রিস গেইলের সংগ্রহ ৫৬ রান।

টুর্নামেন্টে ভালো করার জন্য যে একটা শক্ত ভিত্তির বিকল্প নেই, অস্ট্রেলিয়ার ওপেনারদের দেখে অন্তত এখন পর্যন্ত সেটাই মনে হচ্ছে!