'টেস্ট খেলে' ঠিকই করেছেন ধোনি

ধোনির ব্যাটে চড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬৮ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল ভারত। ছবি: রয়টার্স
ধোনির ব্যাটে চড়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৬৮ রানের সংগ্রহ পেয়েছিল ভারত। ছবি: রয়টার্স
>আফগানিস্তান ম্যাচের পর গতকালও মন্থর গতিতে এগোচ্ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। শেষ পর্যন্ত তাঁর ৬১ বলে ৫৬ রানের ইনিংসের ওপর ভর করেই ১২৫ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ভারত। যশপ্রীত বুমরা তাই বলছেন, যেভাবে খেলা দরকার ছিল, সেভাবেই খেলেছেন ধোনি।

সমালোচনা যেন মহেন্দ্র সিং ধোনির পিছু ছাড়ছেই না! আফগানিস্তানের বিপক্ষে মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমর্থকদের রোষানলে পড়তে হয়েছিল, সমালোচনা করেছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের মতো কিংবদন্তিও। এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ের ধরনের কারণেও সমর্থকদের কথা শুনতে হচ্ছে ধোনিকে। তবে সাবেক অধিনায়কের পাশেই দাঁড়িয়েছেন যশপ্রীত বুমরা। বলেছেন, যেভাবে উচিত ছিল, সেভাবেই ব্যাটিং করেছেন ধোনি।

টুর্নামেন্টজুড়েই ধোনির স্ট্রাইক রেট নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে বেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫২ বলে করেছিলেন মাত্র ২৮ রান। যখন রান বাড়ানোর উপযুক্ত সময় ছিল, তখনই রশিদ খানকে তেড়েফুঁড়ে মারতে এসে আউট হয়েছিলেন। গতকালের ম্যাচেও শুরুর দিকে ধীরেই এগোচ্ছিলেন ধোনি। ৪৫ ওভার শেষেও তাঁর রান ছিল ৪৫ বলে মাত্র ২৬। কিন্তু এবার আর আফগানিস্তান ম্যাচের ভুল করেননি ধোনি, ইনিংসের শেষ পর্যন্ত থেকে ভারতকে এনে দিয়েছেন ম্যাচ জেতার মতো সংগ্রহ। ইনিংস শেষে অপরাজিত ছিলেন ৬১ বলে ৫৬ রানে, ওশান টমাসের করা শেষ ওভারে দুই ছয় ও এক চারে তুলেছেন ১৬ রান।

শেষ পর্যন্ত ২৬৮ রানই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়েছে। ম্যাচ শেষে তাই ধোনির সমর্থনে মুখ খুলেছেন ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা বোলার বুমরা। ধোনির ইনিংসটিকে ‘সেরা মানের ইনিংস’ তকমা দিয়ে বিসিসিআই টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ধোনি ভাই যে ইনিংসটি খেলেছে, এ ধরনের ইনিংসগুলোকে সাধারণত সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। কখনো কখনো হয়তো মনে হতে পারে, সে ধীরে ব্যাটিং করছে। কিন্তু মাঝে মাঝে উইকেটে সময় কাটানোটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। শেষ ম্যাচেও এই কাজটিই করেছে সে।’

শুধু তাই নয়, তরুণ ক্রিকেটারেরা ধোনির এ ইনিংস থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা নিতে পারে, এমনটাও মনে করছেন বুমরা, ‘সে চাপ নিয়ে খেলতে পারে। খেলাটাকে একদম শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়। তাঁর ইনিংসটি একটি সেরা মানের ইনিংস ছিল। তাঁর ওই ইনিংসের কারণেই আমরা ২৬৮ পর্যন্ত যেতে পেরেছি। ওই পিচে এটা জেতার মতো রানই ছিল। সে জানত, পিঞ্চ হিটাররা তখনো ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায়, তাই সে সময় নিয়ে খেলছিল। তরুণ ক্রিকেটারেরা তাঁর ইনিংসটি থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে।’

বুমরার আগে অধিনায়ক কোহলিও ধোনির ইনিংসের প্রশংসা করেছেন। দলের সবার কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন ধোনি, এমনটাই বলছেন কোহলি, ‘সে (ধোনি) যখন উইকেটে থাকে, কখন কী করতে হবে সেটি সবচেয়ে ভালো সে-ই বোঝে। একদিন খারাপ গেলেই সবাই তাঁর বিপক্ষে কথা বলতে শুরু করে দেয়। কিন্তু দলের সবাই তাঁকে সমর্থন দিচ্ছে। তাঁর মতো কাউকে দলে পাওয়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, প্রয়োজনের সময় বোলারদের সঙ্গে নিয়েও অতিরিক্ত ১৫-২০ এনে দেয়। শেষ ওভারে ওই দুটি ছয় দলের সবাইকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।’

সমালোচনায় কান না দিয়ে নিজের খেলাটাই চালিয়ে যাবেন ধোনি, এমনটাই আশা করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচসেরা হওয়া কোহলি, ‘আমরা ২৫০ এর মতো রান আশা করছিলাম। ধোনি উইকেটে ছিল বলেই আমরা ২৭০ এর কাছাকাছি যেতে পেরেছি। তাঁর অভিজ্ঞতা ১০ বারের মধ্যে ৮ বারই ম্যাচের ফল আমাদের পক্ষে এনে দিয়েছে। ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে খেলা সব সময়ই তাঁর বড় শক্তি। সে খেলাটির একজন কিংবদন্তি। দলের হয়ে দারুণ ভূমিকা রাখছে সে, আশা করছি এটা অব্যাহত থাকবে।’

২৮ বছর পর ভারতকে দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জেতানো ধোনি ২০১৯ বিশ্বকাপে ৫ ইনিংসে ব্যাট হাতে নেমে রান করেছেন ১৪৬। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে ১৯২.৮৫ স্ট্রাইক রেটে ১৪ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও প্রায় ৯২ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন ৩৭ বছর বয়সী ধোনি।