'গুলবদিন হয় গর্দভ, নয় ম্যাচ পাতিয়েছে'

পাকিস্তানের বিপক্ষে গুলবদিন নাইবের বাজে সিদ্ধান্তের জন্যই হেরেছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
পাকিস্তানের বিপক্ষে গুলবদিন নাইবের বাজে সিদ্ধান্তের জন্যই হেরেছে আফগানিস্তান। ছবি: এএফপি
>

পাকিস্তানের বিপক্ষে কাল জয়ের পথেই ছিল আফগানিস্তান। কিন্তু অধিনায়ক গুলবদিন নাইবের জঘন্য সিদ্ধান্তের জন্য শেষ পর্যন্ত হারতে হয় আফগানদের। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুণ্ডুপাত চলছে গুলবদিনের। সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের দাবি, গুলবদিন হয় ম্যাচটা পাতানোর সঙ্গে জড়িত নতুবা তাঁর মতো ‘গর্দভ’ অধিনায়ক আর হয় না

ম্যাচ তখনো শেষ হয়নি। দুই ওভারের মতো বাকি। এর মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন উঠল—গুলবদিন নাইব ঠিক কোন দলের হয়ে খেলছেন?

কাল পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচ না দেখে থাকলে সত্যিই বড় ফাঁকিতে পড়লেন। হাতে সময় থাকলে হাইলাইটসও দেখে নিতে পারেন। তবে হাইলাইটসে সব তো আর থাকে না। ম্যাচটা টিভিতে সরাসরি না দেখে থাকলে প্রশ্নটি বুঝতে একটু অসুবিধা হতে পারে। ভাবতে পারেন, আফগানিস্তান অধিনায়ক আর কোনো দলের হয়ে খেলবেন! আসলে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের এ প্রশ্ন তুলতে বাধ্য করেছেন নাইব নিজেই। প্রতিপক্ষ দলের গ্রাসে ওভাবে ম্যাচ তুলে দেওয়ার নজির যে খুব একটা দেখা যায় না।

আফগান স্পিনারদের জালে ফেঁসে ম্যাচ থেকে প্রায় ছিটকেই পড়েছিল পাকিস্তান। শেষ ৫ ওভারে দরকার ছিল ৪৬ রান। হাতে ৪ উইকেট। ম্যাচের এ অবস্থায় শিনওয়ারি, রশিদ ও মুজিবের মোট ৫ ওভারই বাকি ছিল। কিন্তু ক্রিকেটবিশ্বকে বিস্ময়ে ‘থ’ বানিয়ে ৪৬তম ওভারে বল নিজের হাতেই তুলে নেন আফগান অধিনায়ক গুলবদিন, যিনি নিজের আগের ৮ ওভারে ৪৭ রান দিয়েছেন। লাইন-লেংথের বালাই না করে ফুলটস আর বাজে স্লোয়ারের পসরা সাজিয়ে ওই ওভারে ১৮ রান দিয়েছেন গুলবদিন। এতে ম্যাচে ফেরার সুযোগটা পেয়ে যায় পাকিস্তান। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।

শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিল ৬ রান, তখনো লড়াইয়ের চেষ্টা করেননি গুলবদিন। শিনওয়ারি তখনো ২ ওভার বাকি। কিন্তু তাঁকে বল না দিয়ে শেষ ওভারেও নিজে বল করে ম্যাচটা ৪ বলের মধ্যে শেষ করেছেন গুলবদিন। আর শেষ ওভারের তৃতীয় বলে নষ্ট করেছেন রান আউটের সুযোগও। আর সে সুযোগ যেভাবে নষ্ট করেছেন, তাতে যে–কারও ভ্রুকুটি জাগতে পারে। শুধু কি তা–ই? দলে ভালো ওপেনার থাকতেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওপেন করে ১৫ রানে আউট হয়েছেন গুলবদিন—ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাটিং গড় ২২.১৫!

গুলবদিনের মুন্ডুপাত করে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের টুইট। ছবি: সংগৃহীত
গুলবদিনের মুন্ডুপাত করে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের টুইট। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাই কাল ম্যাচের শেষ কয়েক ওভার থেকেই মুণ্ডুপাত চলছে গুলবদিনের। কেউ বলছেন, আফগান অধিনায়ক ম্যাচ পাতিয়েছেন, কেউ মনে করছেন গুলবদিনের মতো স্বার্থপর অধিনায়ক এই বিশ্ব-সংসারে দ্বিতীয়টি নেই। অনেকে আবার গুলবদিনকে মনে করছেন, তাঁর ঘিলুতে ক্রিকেটজ্ঞান বলে কিছু নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের বেশির ভাগই মনে করছেন, গুলবদিন যেকোনোভাবেই হোক ম্যাচ পাতিয়েছেন। কেউ কোনো অকাট্য প্রমাণ দাখিল করতে পারেননি। ম্যাচে তাঁর সিদ্ধান্তগুলো এবং রানআউটের সুযোগ নষ্ট করা নিয়ে এভাবে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

তবে সাবেক ক্রিকেটাররা সরাসরি কিছু না বলেও কিন্তু ঠারেঠোরে ঠিকই প্রশ্ন তুলেছেন। ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বিশ্লেষক আকাশ চোপড়া যেমন টুইট করেছেন, ‘আম্পায়ারিং ও নেতৃত্বের মান আজ প্রশ্নের মুখে...।’ আম্পায়ারিং নিয়ে প্রশ্ন হয়তো উঠত না যদি আফগানিস্তানের হাতে রিভিউ থাকত। আর এই রিভিউ না থাকার পেছনে অবদানও গুলবদিনের।

৫ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপছিল। ম্যাচসেরা ওয়াসিম তখনো মাত্র ১ রানে। এমন অবস্থায় রশিদের একটি বল প্যাডে লেগেছিল। আফগানদের জোরালো আবেদনেও নড়লেন না আম্পায়ার উইলসন। রিভিউ না থাকায় আফগানরাও সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেনি। পরে দেখা গেল, ওটা নিশ্চিত আউট ছিল। রিভিউ না থাকার কারণ, বাবর আজম উইকেটে থাকতে আফগান বোলার আর উইকেটরক্ষক তেমন একটা আগ্রহ না দেখালেও গোঁয়ার্তুমি করে রিভিউ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন গুলবদিন।

গুলবদিনের উদ্দেশে ভনের টুইট। ছবি: সংগৃহীত
গুলবদিনের উদ্দেশে ভনের টুইট। ছবি: সংগৃহীত

সে যা–ই হোক, গুলবাদিন ৪৬তম ওভারে বোলিংয়ে আসার পরই মাইকেল ভনের টুইট, ‘গুলবদিন...!!!!!! ....’ আফগান অধিনায়কের ওপর সাবেক এ ইংলিশ অধিনায়ক এতই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে তাৎক্ষণিকভাবে আরও একটি টুইট করেন, যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। এ ছাড়া ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যানও সমালোচনা করেছেন গুলবাদিনের, ‘৪৬তম ওভারের আগ পর্যন্ত ম্যাচ আফগানিস্তানের হাতেই ছিল। কিন্তু অধিনায়কের কৌশলগত ভুল আর ডিআরএস না থাকার মূল্য দিতে হয়েছে।’

কাইফ যে সিদ্ধান্তকে কৌশলগত ভুল বলছেন, সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে তা ভীষণ সন্দেহজনক। এক ক্রিকেটপ্রেমী তো টুইটারে সোজাসাপ্টাই লিখেছেন, ‘সম্ভাব্য ম্যাচ পাতানোর জন্য তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত। বোলিংয়ে যখন বাকিরা ভালো করছে, তখন তার বল করতে আসার এই একটাই ব্যাখ্যা হতে পারে। সে একটা!’ গুলবদিন ম্যাচ পাতিয়েছেন—এমন সন্দেহে টুইটের সংখ্যাই বেশি। তবে এর মধ্যেই একটি ক্রিকেটীয় প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ সম্পথ বান্দারুপল্লি, ‘অধিনায়ক না হলে গুলবদিন নাইব কি আফগানিস্তান একাদশে সুযোগ পেতেন?’

২০১৯ বিশ্বকাপ শুরুর আগে বিতর্কিতভাবে গুলবদিনের কাঁধে নেতৃত্বভার তুলে দিয়েছিল আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। এ নিয়ে তখন প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন আফগান ক্রিকেটাররা। আর কাল তাঁর জঘন্য সিদ্ধান্তের জন্য আফগানিস্তান ইতিহাস গড়ার পথে থেকেও পারেনি। মুণ্ডুপাত তো হবেই।