হও নির্ভয়, হও দুর্জয়

রফিকুন নবী
রফিকুন নবী

দীর্ঘ বিরতি পেয়েছে বাংলাদেশ দল। ২৪ জুন আফগানদের সঙ্গে খেলার পর পয়লা জুলাই পর্যন্ত অবসর দিনযাপনের পালা চলছে। ২ জুলাই কঠিন প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়ানোর আগে এই দীর্ঘ বিরতি কি ভালো হলো, নাকি খেলার যে টেম্পোটা ছিল, তা বিঘ্নিত হলো, তা নিয়ে সাধারণ দর্শকদের মধ্যে বেশ তর্কবিতর্ক, চিন্তা–দুশ্চিন্তার ব্যাপার চলছে।

পরিচিত ক্রিকেটপাগল এক বন্ধু বললেন, ‘এই রেস্টটাতে প্লেয়ারগো খুব ভালা হইছে! সেই যে আয়ারল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা দিয়া শুরু, পোলাপানগুলা রেস্টই তেমন পায় নাই। অহন ভারতের লগে খেলায় বেশ ঝরঝরা থাকতে পারব।’

আলাপচারিতায় বসা অন্য বন্ধু তাঁর উল্টো মতামতে গেলেন। ‘আরে, টেম্পোটাই তো থমকাইয়া গেছে। এই কয় দিনে যদি প্লেয়ারগো আইলসামিতে পাইয়া বসে তো খেলার দিন চাঙ্গা হইতে, আড়মোড়া ভাইঙ্গা চালু হইতে খবর আছে। পারব কি না কে জানে!’

আমি শুনছিলাম। শেষে তাঁদের কথায় যোগ দিলাম। বললাম, ‘মনে হয় দুজনেই ঠিক। তবে যতই অবসরে থাকুক, খেলোয়াড়দের মাথায় আগামী খেলাগুলোর চিন্তা কাজ করছেই। যতই এদিক–সেদিক ঘুরে বেড়ানোর আনন্দ উপভোগ করুক না কেন, টেনশনটা কিন্তু ঠিকই কাজ করছে। আমার তো মনে হয়, এই রেস্টটায় কে কেমন খেলবে, ভারতের দলটিরই–বা আমাদের দলটিকে নিয়ে কী ভাবাভাবি চলতে পারে, এসব টেনশন, ভাবনা মাথায় আছেই।’

দ্বিতীয় বন্ধুটি আমাকে খণ্ডন করে বললেন, ‘আরে দূর! আমরা যত টেনশন করি, দুশ্চিন্তা করি, অরা তত করে না রে ভাই। নিজেগো অবস্থা নিজেরা ভালোই বোঝে। দলের গেমপ্ল্যান রেডি থাকে। প্লেয়ারগোও নিজস্ব ভাবনা থাকে গেম–টু–গেম। দল–টু–দল, প্লেয়ার–টু–প্লেয়ার স্টাডি করা থাকে। রেস্টে থাকুক বা না–ই থাকুক নিজেদের কী করন লাগব, তা সবতেরই মনে থাকে।’

প্রথম বন্ধুটি যোগ করলেন, ‘ঠিকই কইছ। তয় অরা অবস্থা বুইঝা মাঠে কে কী করব, তা–ই নিয়া ভাবে যেমুন, তেমনি খেলার অপেক্ষায় থাকা দ্যাশের দর্শক মানে মানুষগো খুশি করতে পারব কি না, সমালোচনা, গাইল–মন্দ খাইতে হইব কি না, সেই টেনশন তো থাকেই।’

বললাম, ‘আসলেও তা–ই! টেনশনটা খেলার দিন আরও জমাট হবে। বাংলাদেশের কাছে ভারত সহজে হারতে চাইবে না। আর তা ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে খেলার ব্যাপারে তাদের খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। বাংলাদেশ যে নিজেদের দিনে ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে, তা তাদের জানা।’

বন্ধুটি প্রায় উত্তেজিত হলেন, ‘সেইটা তো কথা! অরা সাবধান হইয়া খেলব।’

বললাম, ‘অতি সাবধানী খেলা খেলতে যাওয়া মানেই তাদেরও টেনশন। আর তা করলেই সাকিব, মোস্তাফিজ, মাশরাফিদের কাছে ধরা খাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।’

‘তা তো বুঝলাম। কিন্তু ভাই রে, অগো বোলিংয়ের বুমরা তো ভোমরার মতন বিপজ্জনক। লগে আছে শামি। অন্যগুলারে তো বাদই দিলাম। আবার ব্যাটে কোহলি, ধোনি, রাহুল, আর আছে রোহিত শর্মা। রোহিত জইমা গেলে তার রান লওয়ারে “রহিত” করাই কঠিন।’

সব শুনে দুজনকেই বললাম, ‘খারাপ দিন সবারই আসে। ওদের আসতে কতক্ষণ! আমরা চাই, তা–ই যেন হয়।’

দ্বিতীয় বন্ধুর শেষ উক্তি, ‘একটা কথা কই, বিশ্বকাপে ঘুইরা–ফিইরা একই দলের কাপ জিতনে কোনো মজা নাই। চাই নতুন কেউ আসুক। আর তাতে আমরা না কেন!’