রোহিত-কোহলিকে দাঁড়াতে দেওয়া চলবে না মাশরাফিদের

টপ অর্ডারে ভারতের ভরসা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি
টপ অর্ডারে ভারতের ভরসা রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। ছবি: এএফপি
>

বিশ্বকাপে আজ ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ভারতের ব্যাটিং অর্ডার বিশ্বের অন্যতম সেরা। তাদের টপ অর্ডারকে দ্রুত ফেরাতে পারলে ম্যাচে দাপট ছড়াতে পারে বাংলাদেশ

হতে পারে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপ তাদের, হতে পারে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যানটি তাদের দলে, কিন্তু এমন ব্যাটিং লাইনআপেও খুঁত থাকে। নিন্দুকেরা বলতে পারেন, সে আর বলতে! প্রথমে চোট পেলেন ওপেনার। বিকল্প হিসেবে উড়িয়ে আনা হলো মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। এরপর চোট পেলেন এক অলরাউন্ডার। এবার সেখানে বিকল্প কিনা ওপেনার! তাও এমন এক ওপেনার, যাঁর এখনো ওয়ানডে অভিষেকই ঘটেনি!

ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট কি তাহলে ভুল করল? জবাবটা তোলা রইল সময়ের হাতে। কিন্তু একটা প্রশ্ন কিছুতেই লুকিয়ে রাখা যায় না। চোট পাওয়া শিখর ধাওয়ানের বিকল্প হিসেবে ঋষভ পন্ত আর বিজয় শংকর চোটের জন্য ছিটকে পড়ায় তাঁর জায়গায় মৈনাক আগারওয়াল—কৌশলগত দিক থেকে এ সিদ্ধান্ত কতটুকু কার্যকর?

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিষেকে ৩২ রান করেন পন্ত। বড় রান তাড়া করতে নেমে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি। আর বিজয়ের বিকল্প মৈনাক এখনো ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায়। তার মানে, বিশ্বকাপ ২০১৯ গ্রুপ পর্বের শেষ দিকে এসেই ব্যাটিং অর্ডার ওলট-পালট করতে হচ্ছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। বলা বাহুল্য, এ জন্য চোট দায়ী। তাতে বাংলাদেশ দলের অখুশি হওয়ার কোনো কারণই নেই। ধাওয়ানের মতো পরীক্ষিত কারও বিপক্ষে বল করার চেয়ে পন্ত কিংবা মৈনাককে সামলানো বেশি সহজ হওয়ার কথা। আর দুনিয়ার সেরা দলেরও খুঁত থাকে। ভারতীয় দলও এর বাইরে নয়। তাদের ব্যাটিং অর্ডারেও কিন্তু ফোঁকর আছে। বাংলাদেশের বোলাররা নিশ্চয়ই তা দেখতে পাচ্ছেন?

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের মুখোমুখি হওয়া মানে দলটির টপ অর্ডারকে সামলানোর চ্যালেঞ্জটাই সবচেয়ে বেশি। শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। এর মধ্যে ধাওয়ান নেই। মাথাব্যথা শুধু রোহিত ও কোহলিকে নিয়ে। মাথাব্যথা বাকিদের নিয়েও থাকবে। তবে এটা মোটামুটি নিশ্চিত ভারতের টপ অর্ডারকে দ্রুত ফেরাতে পারলে দলটিকে চাপে ফেলা সম্ভব। অতীতে তো বটেই এ বিশ্বকাপেই তা দেখা গেছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাংলাদেশের বিপক্ষে রোহিতের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন ঋষভ পন্ত। ডানহাতি ও বাঁহাতি কম্বিনেশন থাকে সঙ্গে দুজনেই আক্রমণাত্মক। তাহলে মিডল অর্ডার অর্থাৎ চারে নেমে যেতে পারেন লোকেশ রাহুল। বিশ্বকাপের পেসারদের তুলনায় স্পিনারদের ভালো সামলেছেন এ ব্যাটসম্যান। এ কারণে তাঁকে মিডল অর্ডারে খেলানোর কথা ভাবছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট।

একটা বিষয় ভুলে গেলে চলবে না, প্রায় ৪৮ ঘণ্টা আগে ভারত-ইংল্যান্ড যে উইকেটে খেলেছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ, সেই বাইশ গজেই গড়াবে। ১০০ ওভার ব্যাট করেছে দুই দল, রান উঠেছে সাড়ে ছয় শর কাছাকাছি। খুব কম সময়ের মধ্যে একই উইকেটে আরেকটি ম্যাচ গড়ানো মানে নতুন ম্যাচের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নয় এ উইকেট। বল একটু মন্থর হবে, থেমে থেমে আসবে, বাঁকও নেবে। যা খেলা মোটেই সহজ হবে না রাহুল থেকে ভারতের মিডল অর্ডারদের জন্য। আর ভারতের মিডল অর্ডারের ওপর কিন্তু দেশটির সাবেক ক্রিকেটাররা পর্যন্ত ভরসা রাখতে পারছেন না।

মোট কথা, টপ অর্ডার মানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের ওপরই বেশি ভরসা করে থাকে ভারতের ব্যাটিং অর্ডার। প্রথম দুই ম্যাচে যেমন ধাওয়ান ও রোহিত সেঞ্চুরি করলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের ম্যাচে ওপেনারদের কেউ রান পায়নি। রাহুলের ৬৭ ছাড়া মিডল অর্ডার দলকে সেভাবে টানতে পারেনি। ভারত বোলারদের ওপর ভরসা করে ম্যাচটা জিতলেও অলআউট হয়েছিল ২২৪ রানে। এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও একই দৃশ্য—ওপেনিং জুটি বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারেনি, কেউ রান পায়নি। কোহলি আর ধোনির ফিফটিতে আড়াই শ পার হয়েছে ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোহিত সেঞ্চুরি পেলেও মাঝে ব্যাটসম্যানের শ্লথ ব্যাটিং ছিল চোখে পড়ার মতো।

অর্থাৎ বাংলাদেশের বোলারদের পথের সবচেয়ে বড় কাঁটা হলেন রোহিত ও কোহলি। রোহিত তো তিন সেঞ্চুরি নিয়ে দুর্দান্ত ফর্মে। কোহলিও প্রায় সব ম্যাচেই বড় রানের আভাস দিচ্ছেন। এ দুজনকে প্রথম ১০ ওভারের মধ্যে ফেরাতে পারলে ভারতকে ভালোভাবেই চেপে ধরা সম্ভব। আগের ৬ ম্যাচে শুধু দুটিতেই বাংলাদেশ প্রথম ১০ ওভারে উইকেট নিতে পেরেছে। আজকেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটানোর বিকল্প নেই। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষ দশে ভারত থেকে আছেন শুধু রোহিত ও কোহলি। বাকিদের কেউ শীর্ষ ত্রিশের মধ্যেও নেই। অর্থাৎ রোহিত-কোহলিকে আগেভাগে বিদায় করতে পারলে ভারতের ব্যাটিং অর্ডারে ভীতির সঞ্চার করা সম্ভব।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো সাহায্য করতে উইকেট। বার্মিংহামে এজবাস্টনের উইকেট এমনিতেই কিছুটা ভঙ্গুর থাকবে। এমন উইকেটে স্লোয়ার-কাটার কাজে লাগানো সম্ভব, যা ভালোই আছে মোস্তাফিজুর রহমান ও মাশরাফির। বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ একটু বুদ্ধিদীপ্ত বল করতে পারলে ভুগতে পারেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের যেহেতু চার পেসার নিয়ে খেলার সম্ভাবনা আছে, তাই স্পিনার একজন কমবে। সে ক্ষেত্রে মাঝের ওভারে পেসারদের মুখোমুখি হতে হবে রাহুলকে—স্পিনারদের তুলনায় পেসারদের খেলতে একটু কষ্টই হওয়ার কথা এ ব্যাটসম্যানের।

টপ অর্ডার দ্রুত গুটিয়ে দিয়ে মিডল অর্ডারে চাপ বাড়াতে পারলে ফল না পাওয়ার কোনো কারণ নেই। ভারতের এ দলটার ব্যাটিং গভীরতা কিন্তু খুব বেশি নয়। লোয়ার অর্ডারে যাদব-চাহাল-শামিরা বল হাতে ভালো করলেও ব্যাট হাতে কিন্তু দলকে খুব একটা সাহায্য করতে পারছেন না। এতে ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপটা বাড়ছে। মহেন্দ্র সিং ধোনির এমন চাপ কাটানোর অবিশ্বাস্য সামর্থ্য আছে। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধোনি যেভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে একটা প্রশ্ন উঠবেই? ধোনি ইচ্ছে করে মন্থর ব্যাটিং না করলে উইকেটে নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা ছিল?

ম্যাচ শেষে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের তরফ থেকে বলা হয়েছে, উইকেট মন্থর হওয়ায় ধোনি স্বভাবসুলভ ব্যাট করতে পারেননি। কথাটা সত্যি হয়ে থাকলে বাংলাদেশের বোলারদের খুশিই হওয়ার কথা। ওই একই উইকেটে খেলানোয় আজকের ম্যাচেও বলের গতি মন্থর হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে ধোনির তো সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হওয়ার কথা!

তবে এসব কৌশলগত পরিকল্পনা সফল হতে পারে যদি টপ অর্ডারকে দ্রুত ফেরানো যায়। মানে প্রথম তিন বড়জোর চার ব্যাটসম্যান। আর এঁদের মধ্যে রোহিত-কোহলি থাকলে তো কথাই নেই!