ব্রাজিল গোলরক্ষকের হাতেই এবারের ব্যালন ডি'অর?

অ্যালিসন-বাধা কাটাতে পারেননি মেসিরা। ছবি : এএফপি
অ্যালিসন-বাধা কাটাতে পারেননি মেসিরা। ছবি : এএফপি
>

দুর্দান্ত মৌসুম কাটাচ্ছেন ব্রাজিলের গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার। লিভারপুলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ তো জিতেছেনই, ব্রাজিলের হয়ে কোপা আমেরিকাতেও স্বমহিমায় উজ্জ্বল তিনি। এবার ব্যালন ডি’অর কী তিনি পাবেন?

তাঁর বিপক্ষে শেষ গোল সেই মে মাসের ৪ তারিখে। এর পর প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেলেন। যৌথভাবে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেরা গোলদাতার পুরস্কার পেলেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলেন। ক্লাবের জার্সি নম্বর বদলে ১৩ থেকে ১ হলো। কোপা আমেরিকা খেলতে এলেন। কোপার ফাইনালে ওঠালেন ব্রাজিলকে। কোপা আমেরিকার সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও পেলেন। এত কিছুর মধ্যে একটা জিনিসের একটুও পরিবর্তন হয়নি। লিভারপুল বা আর্জেন্টিনার হয়ে গত দুই মাসে অ্যালিসনকে ভেদ করে একটা গোলও হয়নি!

যেকোনো টুর্নামেন্টে কীভাবে লিওনেল মেসির দলকে বিদায় করে দিতে হয়, তা বোধ হয় এই অ্যালিসনের চেয়ে ভালো কেউ জানেন না এখন! গত মৌসুমে অ্যালিসনের রোমার কাছেই হেরে সেমি থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে বিদায় নিয়েছিল বার্সেলোনা। অ্যালিসন-দেয়াল ভেদ করে গোল করতে পারেননি মেসিরা। এবারও একই কাহিনি। প্রথম লেগে জেতার পরেও দ্বিতীয় লেগে লিভারপুলের গোলপোস্টের সামনে চীনের প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে গেলেন শ্মশ্রুমণ্ডিত এই তারকা। একটাও গোল করতে পারল না বার্সা। ফলাফল, মেসিদের বিদায়।

সর্বশেষ, কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে সেই অ্যালিসনই বাধা হয়ে গেলেন মেসিদের সামনে। দুর্দান্তভাবে রুখে দিলেন একের পর এক শট। অ্যালিসনের অসাধারণ পারফরম্যান্সের সঙ্গে জেসুস-ফিরমিনোর গোল, আর্জেন্টিনাকে হারানোর জন্য ব্রাজিলের রেসিপিটা একদম সোজাসাপ্টা ছিল। কমিক বইতে বলা হয়ে থাকে, সুপারম্যানকে আটকানোর মতো ক্ষমতা একমাত্র ক্রিপ্টোনাইট নামের এক ধরনের অতিপ্রাকৃত পদার্থের কাছে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মেসি নামের সুপারম্যানকে থামানোর ক্রিপ্টোনাইট এই অ্যালিসনই! কিংবা এটাও বলা যেতে পারে, ব্রাজিলের নিজস্ব সুপারম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছেন অ্যালিসন।

কোয়ার্টারেও এই অ্যালিসনের কাঁধে চড়ে প্যারাগুয়েকে হারিয়েছিল ব্রাজিল। যে প্যারাগুয়ের কাছে এর আগে দুই কোপায় পেনাল্টি শুটআউটে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু সে দুইবার তো ব্রাজিলের গোলবারের নিচে অ্যালিসন ছিলেন না! প্যারাগুয়ের প্রথম পেনাল্টিটাই আটকে দেন এই তারকা। ব্রাজিলকে সেমিতে তোলার পেছনে যে সেভটার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আজও নিজের ভূমিকায় অনন্য ছিলেন এই তারকা। অন্যান্য ম্যাচে যে ফ্রি-কিকে মেসি অনায়াসে গোল করতে পারতেন, সে ফ্রি-কিকটা কি সহজেই না আটকে দিলেন অ্যালিসন! আগুয়েরো, লওতারো এদের শটও আটকেছেন সমান তালে। বর্তমান বিশ্বের সেরা গোলরক্ষক তো তাঁকে এমনি এমনিই বলা হয় না!

মে মাসের ৪ তারিখের পর থেকে অ্যালিসন খেলেছেন নয় ম্যাচ। তাঁর সামনে এসে একে একে খেলে গেছে বার্সেলোনা, উলভারহ্যাম্পটন, টটেনহাম, হন্ডুরাস, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা, পেরু, প্যারাগুয়ে ও আর্জেন্টিনা। এই নয় ম্যাচে একটা গোলও হজম করেননি তিনি, মিনিটের হিসেবে ৮৪৬ মিনিট। এবারের কোপা আমেরিকায় ৫ ম্যাচ খেলে ৫টাতেই গোলশূন্য থেকেছেন। ১৬ টি শটের মুখোমুখি হয়ে প্রত্যেকটা সেভ করেছেন। কোপার ফাইনাল এখনো খেলাই হয়নি, এর মধ্যেই পাঁচ ক্লিন শিটে নিশ্চিত করেছেন কোপার সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও তিনিই পাচ্ছেন। অ্যালিসনের ধারেকাছেও কেউ নেই যে!

যে খেলোয়াড় এমন দুর্দান্ত মৌসুম পার করছেন, তাঁকে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হবে, এটাই স্বাভাবিক। কয়েক মাস আগেও যে মেসির খেলা দেখে মনে করা হচ্ছিল এবার ব্যালন ডি'অর পুনরুদ্ধার করবেন তিনি, পর পর বেশ কিছু টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়ে মেসির সে আশা ধীরে ধীরে বিবর্ণ হয়ে উঠেছে। অ্যালিসনের লিভারপুলের কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমি থেকে বিদায় তো নিয়েছেনই, কোপা ডেল রে এর ফাইনালেও হেরেছেন ভ্যালেন্সিয়ার কাছে। বার্সেলোনার ট্রেবল জয়ের আশা ভেঙে গেছে এই দুই হারে। এবার আর্জেন্টিনার হয়েও বিদায় নিলেন মেসি। ওদিকে অ্যালিসন যদি ব্রাজিলের হয়ে কোপা জিতে যান, চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপাও অর্জন করা হয়ে যাবে তাঁর। ওদিকে জুভেন্টাসের হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়েছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও। লিগ, কাপ জেতার পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন উয়েফা ন্যাশনস লিগ। মেসি-রোনালদোকে টপকে ব্যালন ডি অর জেতা কঠিন হবে অ্যালিসনের, পাঁড় ব্রাজিল সমর্থকেরাও মানছেন সেটা। তবে অসম্ভব নয়। আর সেটা হলে ৫৬ বছর পর প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবেন অ্যালিসন।

লেভ ইয়াশিনের পর সে কৃতিত্ব গড়তে পারবেন তো এই ব্রাজিল তারকা? প্রশ্নের উত্তরটা সময়ের কাছেই তোলা থাক!