বাংলাদেশ ৮ করলেই বাদ পাকিস্তান!

শেষ দিকে উদযাপন করার উপলক্ষ্য পেয়েছেন বটে, তবে পাকিস্তানের রান কমে আটকে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ছবি: শামসুল হক।
শেষ দিকে উদযাপন করার উপলক্ষ্য পেয়েছেন বটে, তবে পাকিস্তানের রান কমে আটকে রাখতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ছবি: শামসুল হক।
>নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩১৫ রান করেছে পাকিস্তান। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।

ম্যাচের আগে সরফরাজ আহমেদ আশার বাণী শুনিয়েছিলেন, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৫৫০ করবে তাঁর দল। তবে অধিনায়কের কথার মান রাখার ধারেকাছেও যেতে পারেননি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা। ৫০ ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩১৫ রানেই থামতে হয়েছে পাকিস্তানকে। সেমিফাইনালে যেতে হলে বাংলাদেশকে এখন অলআউট করতে হবে ৭ রানে! বাংলাদেশের রান ৮ হয়ে গেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বকাপ ২০১৯ শেষ হয়ে যাবে সরফরাজের দলের!

পাকিস্তানের এ সংগ্রহে সিংহভাগ অবদান দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ইমাম-উল-হক ও বাবর আজম। বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার দিকে ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন দুইবার জীবন পাওয়া বাবর। তবে তাঁকে চার রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দারুণ এক ইয়র্কারে এলবিডব্লু  করেছেন এ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান বাবরকে। তবে সেঞ্চুরি না পেলেও দারুণ একটি অর্জন হয়েছে বাবরের। জাভেদ মিয়াঁদাদকে পেছনে ফেলে পাকিস্তানের হয়ে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান এখন বাবরের। এর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে ৪৩৭ রান করেছিলেন মিয়াঁদাদ। বাবর থেমেছেন ৪৭৪ রানে।

তবে বাবর না পারলেও বিশ্বকাপে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি ঠিকই তুলে নিয়েছেন ইমাম। রেকর্ড হয়েছে ইমামেরও। বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সী পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন ইমামের। ওয়ানডেতে ৩৬ ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি হয়ে গেল ইমামের। এর চেয়ে কম ম্যাচে ৭ সেঞ্চুরি আছে কেবল একজনেরই, ইমামের সতীর্থ বাবর আজমের। শেষ দিকে ২৬ বলে ৪৩ করে পাকিস্তানকে ৩০০ পার করিয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম।

পাকিস্তানকে এ রান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের ‘অবদান’ ছিল ভীষণ দৃষ্টিকটু। এক মেহেদী হাসান মিরাজ বাদে প্রত্যেক বোলারই ছিলেন ভীষণ খরুচে। বেশিরভাগেরই ইকোনমি সাড়ে ছয় এর বেশি, সাকিব আল হাসান পর্যন্ত ১০ ওভারে ৫৭ রান দিয়েছেন আজ। প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ৯ রান দেওয়া মিরাজ স্পেল শেষ করেছেন মাত্র ৩০ রান দিয়ে। মোহাম্মদ হাফিজের উইকেটটিও পেয়েছেন।

শুধু কী বোলাররা, ফিল্ডাররাও যেন আজ মাঠে থেকেও ছিলেন না। পুরো টুর্নামেন্টেই বাংলাদেশের ক্যাচিং-ফিল্ডিং বাজে হয়েছে, সেটির ধারাবাহিকতা যথারীতি বজায় ছিল আজও। এক বাবর আজমের ক্যাচই পরপর দুই ওভারে ফেলেছেন মোসাদ্দেক-মুশফিক। এর মধ্যে মোসাদ্দেকের ক্যাচটি মিস করা তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রীতিমত অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ৩৩তম ওভারে মিরাজ যা করলেন, সেটিকে তো ব্যাখ্যা করাও মুশকিল। ইমাম দাঁড়িয়ে ছিলেন ক্রিজেই, বল ধরে যেভাবে উদভ্রান্তের মতো মুশফিকের দিকে ছুঁড়লেন, সেটি ধরার কোনো উপায়ই ছিল না। অতিরিক্ত এরকম অনেক রান বাংলাদেশি ফিল্ডারদের হাত গলে বেরিয়েছে আজ। রান আটকানোর কোনো ইচ্ছাই যেন ছিল না আজ ফিল্ডারদের মধ্যে!

তবে বোলারদের এমন ছন্নছাড়া পারফরম্যান্সের মধ্যেও উজ্জ্বল এক রেকর্ড হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানের। হারিস সোহেলকে তুলে নিয়ে ৫৪ ম্যাচে ওয়ানডেতে ১০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন মোস্তাফিজ। এর চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১০০ উইকেট পাওয়ার কৃতিত্ব আছে কেবল তিনজনের। ৪৪ ম্যাচে ১০০ উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১০০ উইকেটের মালিক রশিদ খান।

হারিসকে ফেরানোর পর আরও তিনটি উইকেট পেয়েছেন মোস্তাফিজ। এতে গড়েছেন আরও কিছু কীর্তি। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছিলেন সাকিব। এবার দুই ম্যাচে ৫ উইকেট পাওয়ার রেকর্ড লেখা হলো মোস্তাফিজের নামে, তাও আবার টানা দুই ম্যাচে। এ নিয়ে এই বিশ্বকাপে ২০ উইকেট হয়ে গেলো মোস্তাফিজের। বিশ্বকাপের এক আসরে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি আবদুর রাজ্জাকের থেকে আগের ম্যাচেই কেড়ে নিয়েছিলেন, আজ সেটিকে নিয়ে গেলেন আরও উঁচুতে। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন শেষে, যদিও সেটি আর পাওয়া হয়নি। তবে ৫ উইকেট নিয়ে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নামটি ঠিকই তুলে ফেলেছেন। এর আগে বাংলাদেশিদের মধ্যে কেবল তামিম ইকবাল ও শাহাদাত হোসেনের নাম ছিল লর্ডসের বিখ্যাত অনার্স বোর্ডে। তবে তাদের দুজনের কীর্তিই ছিল টেস্টে।