খেলার নীতি খেলোয়াড়ের রাজনীতি

বিদেশে আছি। কিন্তু পরিষ্কার টের পাচ্ছি, বাংলাদেশের আকাশে-বাতাসে, চায়ের দোকানে একধরনের অবসাদ ঝুলে আছে। এটাকে শোক বলা যাবে না। আশাভঙ্গজনিত একধরনের অবসাদ বলা যেতে পারে। কারোর কোনো কাজে মন নেই। অফিসে শরীরটা যাচ্ছে, মনটা বিছানায় রেখে। বাজারে সাহেব গেছেন, ম্যাডাম গেছেন, পকেট গেছে, ব্যাগও গেছে, শুধু মাথাটা যেন কোথায় ফেলে এসেছেন।

কারণটা আমরা সবাই জানি, বাংলাদেশের এই ক্রিকেট দলটা নিয়ে মানুষের অনেক আশা ছিল। মানুষ চেয়েছিল আমাদের ‘ফেমাস ফাইভ’ একটা কিছু অর্জন করুক। এই প্রত্যাশা যৌক্তিক। যদিও দলগত শক্তির বিবেচনায় বাংলাদেশ খুব খারাপ করেছে, এটা বলার কোনো উপায় নেই। তবে হ্যাঁ আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। আরও ভালো করার জন্যই আমরা গিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম ‘দলটা ভালো খেলে’ থেকে এক ধাপ ওপরে গিয়ে ‘দলটা ফল বের করে আনে’ ট্যাগ পেতে। সেটা করতে হলে বড় চার দলের একটা কি দুটোর বিপক্ষে জেতা লাগত। আমরা সেটা করতে পারিনি।

আজকে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্বকাপ ২০১৯ মিশন শেষ হোক, এই প্রত্যাশা রেখে শেষ করব অন্য একটা প্রসঙ্গ দিয়ে।

আমি মনে করি, জাতীয় দলে খেলা অবস্থায় কোনো খেলোয়াড়ের রাজনীতিতে অংশ নেওয়াকে পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করা উচিত। রাজনৈতিক দলগুলো এটা ভেবে দেখতে পারেন। মাশরাফিকে নিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগ থেকে যা কিছু হয়েছে এর প্রধান কারণ তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডাক্তারের বদলি, যেটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি।

>দলগত শক্তির বিবেচনায় বাংলাদেশ খুব খারাপ করেছে, এটা বলার কোনো উপায় নেই। তবে হ্যাঁ আমাদের আরও ভালো করার সুযোগ ছিল।

বাংলাদেশের মতো একটা চরমভাবাপন্ন রাজনৈতিক পরিবেশে একজন খেলোয়াড় যখন কোনো একটা নির্দিষ্ট দলের পক্ষে নামেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই পুরো দেশ আর তাঁকে ওউন করতে চায় না। বলতে পারেন, আরে কে কী বলল, তাতে কী আসে যায়? আসে যায়। দলের অধিনায়ক যদি টের পান দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠীর অনুমোদন তাঁর সঙ্গে নেই, একটা বড় জনগোষ্ঠী তাঁর পতন কামনা করছে, দোষ ধরার অপেক্ষায় আছে, তখন তাঁর পক্ষে স্বাভাবিক পারফরম্যান্স করা অসম্ভব। মাশরাফির একজন গুণমুগ্ধ হিসেবে তাঁকে খেয়াল করছি বহু বছর। মাঝে দল থেকে বাদ দেওয়ার পর তাঁর পক্ষে কলামও লিখেছি। তিনি আমার ভাইয়ের মতো। অধিনায়ক বা খেলোয়াড় হিসেবে তাঁকে এত চাপাক্রান্ত, রংহীন ও ম্রিয়মাণ কোনো দিন লাগেনি। এর পেছনে এই সমর্থনহীনতা অবশ্যই একটা বড় কারণ। অভিনয়শিল্পী, কবি বা ফিল্মমেকার দল করতে কোনো অসুবিধা নেই। কারণ পুরো দেশ তাঁদের পেছনে সমর্থনের ডালা নিয়ে দাঁড়ানোর দরকার নেই। কিন্তু খেলাধুলার ক্ষেত্রে এটা পুরোপুরি দরকার। আশা করি, এটা রাজনৈতিক দল ও খেলোয়াড়েরা ভেবে দেখবেন।