হার দিয়ে শেষ হলো বাংলাদেশের বিশ্বকাপ

বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রটা ছিল এমন। ছবি: রয়টার্স
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চিত্রটা ছিল এমন। ছবি: রয়টার্স
>২২১ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৩৫ বল হাতে রেখে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৩৫ রানে ৬ উইকেট পেয়ে বিশ্বকাপের সেরা বোলিং করেছেন শাহিন আফ্রিদি। ৬৪ রানের ইনিংসে রেকর্ড গড়েছেন সাকিব

এ দলটিই বিশ্বকাপের সেরা বাংলাদেশ দল। এ নিয়ে কারও দ্বিমত ছিল না। প্রথম পাঁচ বিশ্বকাপের চেয়ে অভিজ্ঞ দল, সম্ভাব্য সেরা ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আজ পাকিস্তানের সঙ্গে ৯৪ রানের হারে সে দাবিটা মিথ্যা বলেই মনে হচ্ছে। ১০ দলের বিশ্বকাপে সপ্তম হয়েই বিশ্বকাপ শেষ করছে বাংলাদেশ। আগামীকাল দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পেলেই অষ্টম হয়ে যাবে বাংলাদেশ।

তিন দিন আগেও সেমিফাইনালের আশা দেখছিল বাংলাদেশ। অনেক ‘যদি-কিন্তু’ ছিল, তবু স্বপ্ন তো ছিল। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে হেরে সে আশা জলাঞ্জলি দিয়েছে দল, আর আজ পাকিস্তানের কাছে নতজানু হয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় নিয়েছে। যে দলকে বাংলাদেশের ইতিহাসের সেরা দল বলে ভাবা হচ্ছিল, তারা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠতে পারেনি। ইংলিশ কন্ডিশনে কাজটা কঠিন ছিল, কিন্তু বিশ্বকাপে নিজেদের আগের সাফল্যকে তো টপকানো যেত। সেটাও হয়নি। ৯ ম্যাচ থেকে ৩ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সেই ২০০৭ বিশ্বকাপ থেকেই তো এমন কিছু করছে বাংলাদেশ!

এ ম্যাচ থেকে পাওয়ার কিছু ছিল না, শুধু মর্যাদা ছাড়া। সে ম্যাচে বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিং ছিল দৃষ্টিকটু। এমন অপ্রত্যাশিত সহযোগিতা পেয়ে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরাও ফায়দা তুলেছেন। ৩১৬ রানের বিশাল লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছেন। তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ পথ হারিয়েছে শুরুতেই।

দ্বিতীয় ওভারে জীবন পাওয়া সৌম্য ফিরে গেছেন ষষ্ঠ ওভারে। পুরো বিশ্বকাপে কোনো ফিফটি না পাওয়া সৌম্য আজও তাঁর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। তাঁর ওপেনিং সঙ্গীও দেরি করেননি। দুঃস্বপ্নের এক ক্রিকেট বিশ্বকাপ কাটানো তামিম ফিরেছেন ১১তম ওভারে। ২১ বলে ৮ রানের আরেকটি প্রশ্নবিদ্ধ ইনিংস খেলেছেন। বিশ্বকাপে ইনিংস গড়ার কাজটা তামিমের আর করে দেখানো হলো না এবার।

তিনে নেমে মুশফিকও খুব বেশিক্ষণ টেকেননি, ১৬ করেই দায়িত্ব শেষ বলে ধরে নিয়েছেন। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন সাকিব আল হাসান। আজও ফিফটি পেরিয়েছেন। এতেই শচীন টেন্ডুলকারের পর মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে এক বিশ্বকাপে সাতটি ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েছেন। শচীনের কীর্তি ছিল ১১ ম্যাচে, আর সাকিব সেটা করেছেন মাত্র ৮ ম্যাচে। এর মধ্যেই মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এক বিশ্বকাপে ৬০০ রান তুলেছেন সাকিব। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ পারফরম্যান্স না করলে এ বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি হয়তো শূন্যই থাকত!

মধ্যে লিটন দাস (৩২) এসে সাকিবকে কিছু সঙ্গ দিয়েছেন। দুজনের ৫৮ রানের জুটির সময়ই যা একটু ম্যাচে সমতা ছিল। কিন্তু ২৯তম ওভারে সেটাও থামল। সেটাই যে ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটি হবে, সেটা তখনো ভাবা যায়নি। ৬৪ রান করে সাকিব ফেরার পর বাংলাদেশের ইনিংসের গল্পটা খুব সাধারণ। ব্যাটসম্যানরা এসেছেন, সময় কাটানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন এবং একটু পরেই ফিরে গেছেন। মাহমুদউল্লাহর ২৯ কিংবা মোসাদ্দেকের ১৬ রান হারের ব্যবধান খুব একটা কমাতেও পারেনি। এর মধ্যেই সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপে ৫ উইকেট প্রাপ্তি হয়ে গেছে শাহিন আফ্রিদির। বিশ্বকাপে নিজের শেষ ইনিংসে কিছু ছক্কা মেরে আনন্দ দিয়েছেন মাশরাফি (১৫)। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে এত বিশাল ব্যবধানে হারের দুঃখ কি আর তাতে ঢাকে?