সাকিবের আনন্দ, সাকিবের বেদনা

আজ টিম হোটেলে এক ভক্তকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন সাকিব । ছবি: প্রথম আলো
আজ টিম হোটেলে এক ভক্তকে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন সাকিব । ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ দল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রওনা দেবে হিথ্রো বিমানবন্দরে। রাত সাড়ে ১০টায় ধরতে হবে দেশে ফেরার বিমান। দুপুরে রয়্যাল ল্যাঙ্কাস্টার লন্ডন হোটেলে গিয়ে মনে হলো, এটা মাত্রই বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ হওয়া কোনো বাড়ি। অনুষ্ঠান শেষ—এবার অতিথিদের ঘরে ফেরার পালা।

লন্ডনে গত কটা দিন এ হোটেলই ছিল মাশরাফি-সাকিবদের ঠিকানা। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষ, ক্রিকেটারদের যাঁদের কিছু কাজ বাকি, দ্রুত সেরে নিচ্ছেন। যাঁরা থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁরা হোটেল ছেড়ে নতুন ঠিকানায় চলে যাচ্ছেন। আইসিসির স্বেচ্ছাসেবক কিংবা হোটেলকর্মীরা ব্যস্ত বাংলাদেশ দলের বাক্সপেটরা ট্রাকে তুলতে।

মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান, সৌম্য সরকার, মোসাদ্দেক হোসেন, সাইফউদ্দিন, আবু জায়েদ—দলের প্রায় সব ক্রিকেটারই আগে-পরে লবিতে এলেন। টুকটাক কাজ সারলেন। লম্বা সফর শেষে কারও কারও মুখে দেশে ফেরার স্বস্তি থাকলেও টুর্নামেন্ট যেভাবে শেষ হলো, সেটি নিয়ে সবাই বিষণ্ন।

কিছুটা হাসি খুঁজে পাওয়া গেল শুধু সাকিব আল হাসানের মুখে। বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ডে আসা বাবা-মাকে বিদায় জানিয়ে খানিক পরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার এলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। বললেন, ‘ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের কথা যদি বলেন, খুবই খুশি। যে ধরনের ইচ্ছা, মন-মানসিকতা নিয়ে এসেছিলাম, সেদিক দিয়ে আমি খুশি, তৃপ্ত।’

৮ ম্যাচে ৮৬.৫৭ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ৫ ফিফটিতে ৬০৬ রান করেছেন। ১১ উইকেট নিয়েছেন। অবিশ্বাস্য এ পারফরম্যান্সে খুশি হবেন না কোন ক্রিকেটার? সাকিবও হচ্ছেন। কিন্তু সেই খুশির দিগন্ত মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে, যখন ভাবছেন বাংলাদেশ টুর্নামেন্ট শেষ করেছে পয়েন্ট তালিকার নিচের দিকে। ‘আমি ভালো করলাম, কিন্তু দল সেমিফাইনাল খেলতে পারল না। আক্ষেপ হলো আমরা দল হিসেবে খেলতে চেয়েছিলাম, সেটা করতে পারলাম না। বাংলাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, ঠিকভাবে সেটা পূরণ করতে পারলাম না’—ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের বিপরীতে দলীয় ব্যর্থতা পোড়াচ্ছে সাকিবকে।

বাংলাদেশ যদি সেমিফাইনালে যেত, তাঁর রানটা নিশ্চিত আরও বাড়ত। হয়তো বাড়ত উইকেটসংখ্যা। ব্যক্তিগত পরিসংখ্যান হতো আরও উজ্জ্বল। করতে পারতেন আরও অনেক অনেক রেকর্ড। সাকিব অবশ্য জানিয়ে রাখলেন, রেকর্ডের জন্য খেলেন না, ‘এসব নিয়ে কখনো চিন্তা করিনি। যে সুযোগ এসেছে আমার কাছে সেটা যথেষ্ট ছিল। ওসব নিয়ে আমি খুব একটা চিন্তা করিনি। রেকর্ডের কথা ভেবে খেলার মানুষ আমি নই।’

বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন। সাকিব জানালেন সবচেয়ে কঠিন ছিল সাউদাম্পটনের স্পিন-সহায়ক উইকেটে আফগান স্পিনারদের বিপক্ষে খেলা। আর পছন্দের ইনিংস ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরিটা।

টুর্নামেন্ট শেষ। সাকিবের ভাবনায় আপাতত ক্রিকেট নয়। কটা দিন তিনি ইউরোপে পরিবার নিয়ে ঘুরবেন। এত বড় টুর্নামেন্ট গেল, যে টুর্নামেন্টে পুরো দলকে বলতে গেলে প্রায় একা কাঁধে টানলেন—সাকিবের আপাতত একটা ছুটি আসলেই প্রয়োজন।