'আউটগুলো আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না'

বিশ্বকাপে বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন তামিম? ছবি: রয়টার্স
বিশ্বকাপে বেশি চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন তামিম? ছবি: রয়টার্স
তাঁর কাছে বড় মঞ্চ মানেই বড় স্বপ্ন। এই বিশ্বকাপেও তামিম ইকবাল এসেছিলেন বড় কিছু করার ক্ষুধা নিয়ে। সে ক্ষুধা কতটা মিটল? বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শেষে নিজেকেই প্রশ্ন করেছেন তিনি। কিন্তু উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন কি? দলের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৩৫ রান করেছেন, গড় ২৯.৩৭। কিন্তু তিনি তামিম ইকবাল বলেই এ পারফরম্যান্স যথেষ্ট নয়। পরশু রাতে টিম হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিশ্বকাপে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা বলছিলেন তামিম। নিজের ব্যর্থতা স্বীকারই করে নিয়েছেন তিনি...


নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে

তামিম ইকবাল: অবশ্যই ব্যর্থ হয়েছি। সরাসরি বলি বা যেভাবেই বলি, আমি ব্যর্থ হয়েছি। দলের বা নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা মেটাতে পারিনি। কিন্তু আমি খারাপ ব্যাটিং করিনি। ব্যাটিং মোটামুটি ভালোই করেছি। শেষ ম্যাচটিতেই কেবল এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছি। তার আগের চারটি স্কোর ৪৮,৬২, ৩৬,২২। যতক্ষণ উইকেটে ছিলাম, নিয়ন্ত্রণ হারাইনি কখনো। হ্যাঁ, দুঃখজনক হলো বড় স্কোর পাইনি। হুট করে আউট হয়ে গেছি। এমন এমন সব আউট হয়েছি, যেগুলো বেশির ভাগ সময় আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। এটা মেনে নিতেই হবে। যত কথা বলি বা ব্যাখ্যা দেওয়ারই চেষ্টা করি না কেন, এটা আমাকে মানতেই হবে, যে আমি ব্যর্থ হয়েছি। এখন পথ খুঁজতে হবে কীভাবে এখান থেকে বের হতে পারি। আগেও সেটি করতে পেরেছি। আবার না পারার কারণ নেই।

শুধু দুর্ভাগ্য, নাকি অন্য কিছু?
তামিম: আমার নিজের মনেও প্রশ্ন জেগেছিল যে কোথাও ভুল করছি নাকি! তখন ব্যাটিং কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। নিল (ম্যাকেঞ্জি) বলেছেন, ‘সত্যিই যদি তোমার টেকনিক্যাল সমস্যা থাকত, তাহলে তোমাকে বলতে পারতাম, কাজ করতে পারতাম! কিন্তু সে রকম কিছু দেখছি না।’ আসলে কমবেশি যাঁরা ক্রিকেট বোঝেন, তাঁরা সবাই অন্তত এটা বুঝতে পারবেন, আমি যে আউটগুলো হয়েছি, সেগুলোতে টেকনিকের কোনো সমস্যা ছিল না। আমি ১২ বছর এই টেকনিক নিয়েই খেলছি। প্রচুর রান করেছি। ব্যাটের ভেতরের কানায় লেগে কেউ তিনবার আউট হয়ে গেলে তাতে টেকনিকের কোনো ব্যাপার থাকে না। তবে ব্যর্থ টুর্নামেন্টেও রানের গড় ৩০ থাকাটা খারাপ নয়।

একটু বেশিই চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন
তামিম: এটাই ছিল বড় কারণ। বিশেষ করে প্রথম তিন ম্যাচে আমি নিজের ওপর অনেক চাপ নিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু মনে হচ্ছিল, ২০১৫ বিশ্বকাপের সময় যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে, সেটি যেন ফিরে না আসে। কিন্তু বাস্তবে সেটিই হয়েছে।

২০১৫ সালের শিক্ষা
তামিম: কেবল আমিই জানি, ২০১৫ সালে আমাকে কিসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। আমি তা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। জানি এবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক কিছুই হচ্ছে। তবে সেসবের তেমন কোনো প্রভাব এবার আমার ওপর পড়েনি। ভালোই সামলেছি। কিন্তু আমি শুধু একটি ব্যাপার নিয়েই ভয় পাচ্ছিলাম, পরিবার। পরিবারকে যেন হেনস্তা না হতে হয়।

কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন খারাপ সময়
তামিম: খুব কঠিন কাজ। গত বিশ্বকাপের পর পাকিস্তান সিরিজটি আমার অসাধারণ কেটেছিল। এবার সামনে শ্রীলঙ্কা সিরিজ আছে। আমার চেষ্টা থাকবে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। আমাকে আমার মতোই চেষ্টা করতে হবে। এবারও আমি নিজের খেলা বদলে ফেললে সেটি হতো সবচেয়ে বাজে সিদ্ধান্ত। কারণ এভাবে খেলেই আমি গত চার বছরে সাফল্য পেয়েছি। আমার কাছে এটা আর দশটা সফরের মতোই একটা সফর, যেখানে হয়তো আমি ভালো করতে পারিনি। দুর্ভাগ্যজনক হলো, এটি বিশ্বকাপ। আমি নিজেও মন থেকে এই বিশ্বকাপে ভালো করতে চেয়েছিলাম। এ জন্যই বেশি কষ্ট হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া অনেক কঠিন। তবু হজম তো করতেই হবে। জানি না, বাড়ি ফেরার পর কী হবে। তবে নিজেকে আমি চিনি বলেই জানি, আমি পালিয়ে যাব না। এমনও হতে পারে অনুশীলন করার জন্য দেশের বাইরে চলে গেলাম, বা হতে পারে দেশেই করলাম। আমি আমার পরিবারকে অনেক দিন দেখি না। দেশে গিয়ে ওদের সঙ্গে একটু সময় কাটিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এটা নিশ্চিত, এখান থেকে আমি বেরিয়ে আসব।

রোহিত শর্মার ক্যাচ মিস
তামিম: পাকিস্তানের সঙ্গে ম্যাচেও যদি আমি আবার ক্যাচ মিস করতাম, তার পরদিনই আরেকটা খেলা থাকত, ওই বোলার আমাকেই ফিল্ডিংয়ে চাইত ওই পজিশনে। সেই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। মোস্তাফিজের বলে রোহিতের ক্যাচ ছেড়েছি। পরে মোস্তাফিজ আমাকে বলেছে, ‘ভাই, আপনি আমার বোলিংয়ে এত দারুণ সব ক্যাচ নিয়েছেন, আপনি মিস করলে আমার কষ্ট লাগে না।’ এরপর চাইলে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমি নিরাপদ ফিল্ডিং পজিশন বেছে নিতে পারতাম। কারও কিছু বলার ছিল না। কিন্তু আমি মনে করেছি, আমি যদি ওই পজিশন থেকে সরে যাই, তাহলে আর কখনো ওই পজিশনে দাঁড়াতে পারব না। মনে ভয় ঢুকে যাবে। পাকিস্তানের বিপক্ষেও আমি একই পজিশনে ছিলাম।

সাকিবের বিশ্বকাপ
তামিম: সাকিবকে আমি গত ১৩-১৪ বছর বা তার বেশি সময় ধরে দেখছি। এবার দলের প্রতি ওর যতটা নিবেদন দেখা গেছে, এটা নতুন কিছু। এমন নয় যে নিবেদন দেখালে বা পরিশ্রম করলেই পারফরম্যান্স হবে। তবে ওর মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি। আমি তাই সব সময় চেয়েছি, ও যেন বিশ্বকাপে ভালো করে। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ওর যা পারফরম্যান্স, যা অর্জন, এককথায় তা ‘ফেনোমেনাল।’ কোনো কিছুর সঙ্গেই এই পারফরম্যান্সের তুলনা চলে না। এ রকম পারফরম্যান্সের পর তার দলের সেমিতে খেলার কথা। এটিই হতাশার যে আমরা সেটা পারিনি। আমার খারাপ লাগছে, আমিও অবদান রাখতে পারলে হয়তো সেমিফাইনাল সম্ভব হতো। দলের জন্য, সাকিবের জন্য।