বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে বোলিং আর ফিল্ডিং

তামিম ইকবালের ক্যাচ হাতছাড়া করার ছবিটা বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের অনেকটাই। ফাইল ছবি
তামিম ইকবালের ক্যাচ হাতছাড়া করার ছবিটা বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের অনেকটাই। ফাইল ছবি

প্রত্যাশা পূরণ হলো কই! সেমিফাইনালে খেলে আসবে বাংলাদেশ, স্বপ্নটা তো এমনই ছিল। ভারতের কাছে হারের পর সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। সেমিফাইনাল না হলেও সমর্থকদের প্রত্যাশা ছিল অন্তত পয়েন্ট তালিকায় ৫ নম্বরে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করবেন মাশরাফিরা। কিন্তু সেটাও হলো না! লর্ডসে পরশু পাকিস্তানের কাছে ৯৪ রানে হেরে বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে বাংলাদেশের। গতকাল রাতে দক্ষিণ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়াকে হারানোয় দশ দলের মধ্যে বাংলাদেশ হলো অষ্টম!

এ তো গেল দলীয় পারফরম্যান্সের কথা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে নজর দিলে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ফারাকটা একটু বড়ই মনে হবে। তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকারের ওপেনিং জুটি জমেনি একটি ম্যাচেও, ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স নেই দুজনের একজনেরও। অথচ বিশ্বকাপের আগে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়ে বড় ভূমিকা ছিল এই ওপেনারদের। বিশ্বকাপে ওপেনারদের কাছ থেকে অন্তত একটা ম্যাচ জেতানো জুটি পেতে পারত বাংলাদেশ দল।

ইংলিশ কন্ডিশনে খেলা, নতুন বলে উইকেট নেওয়ার বিকল্প নেই। আর নতুন বলে বাংলাদেশের সেরা বোলার মাশরাফি বিন মুর্তজা পুরো আসরে ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। প্রথম ১০ ওভারে পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ তুলে নিতে পেরেছে মাত্র ৪ উইকেট! প্রতি ম্যাচেই সাকিব-মিরাজদের এসে রান থামানোর কাজটা করতে হয়েছে। বিপদ বাড়িয়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডিং। কেন উইলিয়ামসনের রানআউট হাতছাড়া থেকে শুরু করে ডেভিড ওয়ার্নার, রোহিত শর্মা ও বাবর আজমের ক্যাচ ফেলে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ। এক সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স বাদ দিলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তির তালিকাটা খুব বেশি নয়।

বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসানকে বেশি হতাশ করেছে বাংলাদেশের ফিল্ডিং। মাঝারি মানের দল হলেও অনুশীলনের মাধ্যমে ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করা সম্ভব। পুরো আসরে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে সেই ঝাঁজ খুঁজে পাননি তিনি। রকিবুলের কথায়, ‘ফিল্ডিং নিয়ে খুব হতাশ আমি। ক্যাচিং, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ভালো ছিল না। শেষ ম্যাচে বেশ কয়েকবার হাত গলে বল বাউন্ডারিতে গেছে। এগুলো আমাদের দলের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ছিল না। যেকোনো মধ্যম সারির দলের ব্যাটিং-বোলিংয়ে উন্নতি করতে যত সময় লাগে, ফিল্ডিংয়ে সেই তুলনায় দ্রুত ভালো করার সুযোগ থাকে।’

তবে সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স গর্ব করার মতো। রকিবুলের চোখে, এবারের বিশ্বকাপের সত্যিকারের নায়ক সাকিব। তাঁর কথায়, ‘সাকিব এই বিশ্বকাপে শুধু আমাদের সেরা খেলোয়াড়ই না, এই ক্রিকেট বিশ্বকাপের একজন নায়কের ভূমিকায় ছিল। এমন অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স সচরাচর দেখা যায় না। এটাই আমার কাছে একটা বিরাট প্রাপ্তি।’

বাংলাদেশ দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট, কিন্তু ফলাফলে নয়। কারণ অনেকটা পথ পেরিয়ে এসে এখন ফলাফলটাই মূল চাহিদা, শুধু ভালো খেলা নয়। তাঁর ভাষায়, ‘ভালো ক্রিকেট খেলেছি। তবে অবশ্যই সেরা চার দলের মধ্যে যেতে পারতাম। এখন অনেক ক্রিকেট খেলে ফেলেছি। এখন ভালো খেলার চেয়ে ফলাফলটাই চাইব। সেদিক থেকে অবশ্যই সন্তুষ্ট না।’

বিশ্বকাপজুড়ে প্রথম ১০ ওভারে উইকেট নেওয়ার মতো বোলারের অভাব হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বাংলাদেশ। নির্বাচক হিসেবে উইকেট নেওয়ার মতো বোলারের অভাবটাই চোখে লেগেছে বাশারের। তাঁর কথায়, ‘প্রথম ১০ ওভারে খুব বেশি উইকেট নিতে পারিনি। এখন যে ফরম্যাটে খেলা হয়, ৪০ ওভারের পাওয়ার প্লে, উইকেট নেওয়ার মতো বোলার খুব দরকার। প্রথম ১০ ওভারে উইকেট না নিলে ৩০০ রান আটকানো খুব মুশকিল।’

২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সদস্য শাহরিয়ার নাফীসের আফসোসটা একটু বেশি। বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্নটা ক্যাচ ফেলার মতো ভুলের জন্য হাতছাড়া হওয়ায় আক্ষেপ শাহরিয়ারের, ‘ব্যক্তিগত প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সেমিফাইনাল খেলার লক্ষ্য ছিল, খুবই বাস্তব লক্ষ্য। সেটা অর্জন করতে পারিনি। খুব অল্পের কারণে পারিনি। এমন না যে স্বপ্ন দেখেছি সেমিফাইনালের, কিন্তু স্বপ্নের সঙ্গে বাস্তবতার অনেক পার্থক্য ছিল। তাহলে হতাশ হতাম না। কিন্তু প্রতি ম্যাচে এত ভালো খেলে, এত প্রতিযোগিতা করে, ছোট ছোট ভুলের কারণে আমরা সেমিফাইনাল খেলতে পারিনি।’

তবে সাকিব ও মোস্তাফিজের পারফরম্যান্সে সান্ত্বনা খুঁজছেন শাহরিয়ার, ‘সাকিব টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক। মোস্তাফিজ এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ওদের পারফরম্যান্সে আমি গর্ববোধ করছি।’

সাবেক বাংলাদেশি ওপেনার নাফিস ইকবাল বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে না হলেও সেরা পাঁচ দলের মধ্যে দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁর মতে, সেরা চার না হলেও অন্তত পাঁচে থেকে যদি শেষ করা যেত, তবু ভালো বলা যেত। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় হতাশ নাফিস, ‘আমরা গত চার-পাঁচ বছরে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি। যে প্রত্যাশা গত কয়েক বছরে তৈরি হয়েছে, সেটা পূরণ হয়নি। সেমিফাইনাল খুবই কঠিন হতো। তারপরও আশা করেছিলাম, সেমিফাইনাল খেলতে পারব। সেটা না হলে আশা করেছিলাম অন্তত পাঁচে থেকে শেষ করবে দল। তখন সবাই বলত, আমরা পাঁচে ছিলাম, বৃষ্টি না হলে সেমিফাইনাল খেলতে পারতাম। এটা আমার প্রত্যাশা ছিল।’