জেসুসকে জ্বালিয়েছে আর্জেন্টিনা, পুড়ল পেরু

পেরু সমতায় ফেরার পর জেসুসের গোলে ফের এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠও ছাড়তে হয় তাঁকে। ছবি: এএফপি
পেরু সমতায় ফেরার পর জেসুসের গোলে ফের এগিয়ে যায় ব্রাজিল। ম্যাচে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠও ছাড়তে হয় তাঁকে। ছবি: এএফপি

রোনালদোর ভবিষ্যদ্বাণী তাহলে ফলতে শুরু করল! সেটি অবশ্যই লাল কার্ডের অংশটুকু বাদ রেখে।

ভুল হচ্ছে। ক্রিস্টিয়ানো নন, এই রোনালদো ব্রাজিলের। ভার্সেটাইল ফরোয়ার্ডের সব গুণ দেখেছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুসের মধ্যে। ‘ফেনোমেনন’ নিদান দিয়েছিলেন, এই ছেলে একদিন ব্রাজিল আক্রমণ ভাগের নেতৃত্ব দেবে। রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে রোনালদোর নিজেরও সম্ভবত নিজের কথা বিশ্বাস হয়নি। জেসুস যে কথা রাখতে পারেননি।

অথচ সেন্টার ফরোয়ার্ড থেকে চোস্ত স্ট্রাইকার, ফলস নাইন, উইঙ্গার এমনকি অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের ভূমিকায়ও জেসুস সহজাত। ব্রাজিলের জার্সিতে অভিষেকের পর এই তিন বছরে তা বোঝা গেছে খুব কমই। জেসুস নিজে অন্তত প্রতিভার সুবিচার করতে পেরেছেন সামান্যই।

শেষ পর্যন্ত তাঁর ঘুম ভাঙাল আর্জেন্টিনা। আর তাতে আসল সর্বনাশটুকু হলো পেরুর। কিন্তু বেরসিক রেফারি যেন তা মানতেই চাইলেন না! কোপা আমেরিকার ফাইনাল ম্যাচে ৭০ মিনিটে জামব্রানোর সঙ্গে বল দখল করতে গিয়ে জেসুসের কনুইয়ের আঘাতটুকু তাঁর কাছে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখাতে যথেষ্ট মনে হয়েছে। যদিও ম্যাচের ধারাভাষ্যকার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দাবি, কাল রাতে লিওনেল মেসির মতোই হয়েছে। লঘু পাপে গুরু দণ্ড। 


তবু স্বস্তি পাবে ব্রাজিল। লাল কার্ডটুকু বাদ দিয়ে হলুদ জার্সিতে এই জেসুসকেই দেখতে চেয়েছে ব্রাজিল। আর কোপা আমেরিকার ফাইনালও ছিল মোক্ষম মঞ্চ। তা আলোকিত করতে ২২ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড সময় নিয়েছেন মাত্র ১৫ মিনিট। সেটিও ব্রাজিলের প্রথম আক্রমণেই!


ডান প্রান্তে নিজেদের রক্ষণ থেকে ভাসানো পাস পেয়েছিলেন জেসুস। বাঁ থেকে পেরুর তিন ডিফেন্ডার ঘিরে ধরলেও কাজ হয়নি। চোখ ধাঁধানো বডি ডজ আর বল কন্ট্রোল দেখিয়ে জেসুস যে ক্রসটা বাড়ালেন এভারটনকে সেটি যেন চামচে করে তুলে দেওয়া গোল! এভারটনের অবদান শুধু গোলের আনুষ্ঠানিকতায়। বাকিটা ‘অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার’ জেসুসের।

স্ট্রাইকার জেসুসকে দেখা গেল বিরতির কয়েক মুহূর্ত আগে। প্রথমার্ধে ব্রাজিলের শেষ আক্রমণে। দুর্দান্ত দক্ষতায় বলটা জেসুসকে বানিয়ে দিয়েছিলেন আর্থার। বক্সের মধ্যে থেকে ফিনিশিং জাদু দেখালেন জেসুস। পেরু গোলরক্ষক ঝাঁপিয়েও তাঁর প্লেসিং শট ঠেকাতে পারেননি। মারাকানার গ্যালারিতে তখন জেসুস-ঢেউ।

এই ঢেউ উঠেছে সেমিফাইনালের মঞ্চেই। আর্জেন্টিনার মতো চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষে। সতীর্থকে দিয়ে গোল করানোর সঙ্গে করেছেন নিজেও। আর ওই গোলটা দিয়েই বহুদিনের চাপমুক্ত হয়েছেন জেসুস। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ব্যাক টু ব্যাক ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা তারকার ওপর ভালো খেলার প্রত্যাশার চাপ ছিল, ভাবা যায়! আসলে ৬২১ দিন গোলখরায় থাকলে যে কেউ ভাবতে বাধ্য। সেমির আগে ব্রাজিলের হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এটি জেসুসের গোলখরার খতিয়ান।

ব্রাজিল–সমর্থকদের এখন এসব পরিসংখ্যান স্রেফ সংখ্যা। এক যুগ পর ব্রাজিলের বড় কোনো শিরোপাজয়ের কান্ডারি যে জেসুস। আর জিতলেন এমন এক মাঠে যেখান থেকে তাঁকে ঘিরে ব্রাজিলিয়ানদের আশা-ভরসার শুরু। এই মারাকানাতেই রিও অলিম্পিক ফুটবলে স্বর্ণ জিতেছিল ব্রাজিল, যেখানে আলো ছড়িয়েছিলেন জেসুস।

রোনালদোর মুখেও এখন নিশ্চয়ই খুশির আলো। তাঁর নিদান যে সত্যি হওয়ার পথে!