'টিম ব্রাজিল'-এ চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল

>

কোপা আমেরিকায় পেরুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি
কোপা আমেরিকায় পেরুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। ছবি: এএফপি

দুর্দান্ত টিম গেমে ১২ বছর পর কোপা আমেরিকা শিরোপা পুনরুদ্ধার করেছে ব্রাজিল। ফাইনালে পেরুকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে স্বাগতিকেরা।


বিশ্ব ফুটবলে যে দাপট দেখিয়ে এসেছে ব্রাজিল, তার অধিকাংশই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে। পেলে থেকে রোমারিও, রোনালদো, রোনালদিনহো থেকে নেইমার। এভাবে উত্তরাধিকারী সূত্রে বিশ্বকাপ থেকে কোপা, কোপা থেকে অলিম্পিক—কারও না কারও ব্যক্তিগত ঝলকেই ব্রাজিলের শোকেসে উঠেছে শিরোপা। কোপায় ১২ বছরের শিরোপা–খরা কাটাতে এবারও ঘরের মাঠে ভরসার নাম ছিল নেইমার, যিনি কিনা প্রায় তিন বছর আগে এই মারাকানাতেই পরম আরাধ্য অলিম্পিকের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন ব্রাজিলকে। এবারও তিনি ছিলেন কোপার স্বপ্নসারথি। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই চোটের কারণে ব্রাজিলিয়ান পোস্টারবয়ের বিদায়। নেইমারের না থাকাটাই শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের জন্য শাপে বর হলো কি না!

এই যে এভারটনের গোলে আজ গোলের খাতা খুলেছে ব্রাজিল, অথচ এই এভারটনকেই কোপা আমেরিকার ফাইনালের আগে কতজন চিনতেন! অন্যদের কথা বাদ দিন, ব্রাজিলের পাঁড় সমর্থকের কাছেই এভারটনের নামটা ছিল অজানা। কে জানে, নেইমার থাকলে তো তাঁর মাঠে নামার সুযোগ নাও হতে পারত! সুযোগ পেলেন, দেখলেন ও জয় করলেন। ফাইনালের আগেও যিনি ছিলেন উদীয়মান তরুণ, নিশ্চয় আজকের পর তিনি হয়ে উঠলেন ব্রাজিলের আগামী প্রজন্মের অন্যতম আশার আলো।

ফাইনালে ব্রাজিলের সব বিভাগই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ছবি: এএফপি
ফাইনালে ব্রাজিলের সব বিভাগই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ছবি: এএফপি

১৬ মিনিটে এভারটনের গোলে ব্রাজিলের এগিয়ে যাওয়া। স্পষ্ট করে বললে টিম গেমের ফসল। দানি আলভেস থেকে জেসুস। জেসুস থেকে এভারটন। আলভেসের এরিয়াল পাস বুকে নামিয়ে নিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে পায়ের সোলের কাজে বোকা বানিয়ে ডান প্রান্ত থেকে ঠিকানা লেখা ক্রস করেন জেসুস। থার্ডম্যানের মতো দৌড়ে এসে দূরের পোস্ট থেকে এভারটনের ভলি। জেসুসের ব্যক্তিগত ঝলককে গোল করে পূর্ণতা দিয়েছেন এভারটন।

৪৪ মিনিটে পাউলো গেরোর পেনাল্টি থেকে করা গোলে ১-১। মারাকানায় নিস্তব্ধতা। এক মিনিট বাদেই সেখানেই আবার দলীয় রসায়নে সৃষ্টি সুখের উল্লাস। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডরা প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের পা থেকে বল কেড়ে নেওয়ার নজির দেখা যায় খুবই কম। কিন্তু এই দলটি আলাদা বলেই হয়তো ফিরমিনো পেছন থেকে দৌড়ে স্লাইড ট্যাকল করে বল কেড়ে নিয়ে দিলেন আর্থারকে। নিজেদের আক্রমণভাগের শুরু থেকে শুরু করলেন সোলো মুভ। বক্সে ঢোকার আগে প্রতিপক্ষ ঘিরে ধরলে মিডল করিডর বরাবর ফাঁকা জায়গা তৈরি করে নেন জেসুস। ছোট একটা পাস ও বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেখেশুনে জালে জড়িয়ে দেওয়া। সেই ট্রেডমার্ক ব্রাজিল মুভে গোল।
গ্রুপ পর্বে পেরুকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া। তাই আজ প্রথমার্ধে ২-১ গোলে এগিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ধরেই নিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে দেখা যেতে পারে গোলের ফোয়ারা। কিন্তু শিরোপার লড়াইয়ের চাপ বলে কথা। ৭০ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠই ছাড়তে হলো ম্যাচের অন্যতম নায়ক জেসুসকে। বাকিটা সময় পাড়ি দিতে হবে এক খেলোয়াড় কম নিয়ে। ২০ মিনিট তো আর কম নয়।
ফাইনালের মঞ্চে একজন কম নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মানেই বীরত্বের পরীক্ষা দেওয়া। অথচ ঠেকিয়ে রেখে শেষ দিকে পাল্টা গোলও করল পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। স্পট কিক থেকে পেরুর কফিনে শেষ পেরেকটা মেরেছেন বদলি রিকার্লিসন। ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা আজ কতটা লড়াইয়ে স্পৃহা নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তা বেশি ফুটে উঠেছে লাল কার্ডের খড়গে জেসুসকে হারানোর পর।

ফাইনালে ব্রাজিলের সব বিভাগই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ছবি: এএফপি
ফাইনালে ব্রাজিলের সব বিভাগই দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছে। ছবি: এএফপি

৪-২-৩-১ ফরমেশনে সব সময় মাঝমাঠের ডাবল পিভট খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়। জেসুস বাইরে চলে যাওয়ার পর ফরমেশনটা দাঁড়াল ৪-২-৩। দুই ডাবল পিভট হোল্ডিং মিডফিল্ডার ক্যাসিমিরো ও আর্থার দেখালেন তাঁদের দুর্দান্ত ওয়ার্ক লোড। আর তাঁদের পেছনে সুপার ব্যাক ফোর আলভেস-মার্কিনহোস-সিলভা-সান্দো। সলিড জমাট এক রক্ষণভাগ।

‘আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাতে পারে, কিন্তু শিরোপা জেতাবে রক্ষণভাগ’—কথাটি তো আর এমনি এমনি বলেননি ফুটবল-দুনিয়ার অন্যতম সেরা কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন। টুর্নামেন্টের মোট ৬ ম্যাচে মাত্র এক গোল হজম করেছে ব্রাজিল। তাও আজ পেনাল্টি থেকে। যে দলের রক্ষণভাগ এত কৃপণ আর যারা ব্যক্তিগত পুজোর জায়গা ছেড়ে দলীয় জয়গান গাইতে শুরু করেছে, এই কোপার শিরোপাটা তাদের হাতেই তো শোভা পায়!